কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ

627

দ্রুত জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির বিকল্প নেই। ভালো জাতের বাছুর পাওয়ার বাসনা থেকেই কৃষক/খামারীদের মাঝে কৃত্রিম প্রজনন এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে এটা সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে কৃত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে একই বকনা / গাভীকে বার বার প্রজনন করানোর মতো সমস্যাও হয়। দেখা গেছে, কৃত্রিম প্রজননের চেয়ে প্রাকৃতিক প্রজননের ক্ষেত্রে পুনরায় প্রজনন করার হার কম এবং গর্ভধারণের হারও বেশি। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কৃষক / খামারীগণ এক বা দু’বার কৃত্রিম প্রজননে ভালো ফল না পেয়ে প্রাকৃতিক প্রজনন করে সফল হচ্ছেন। ফলে আমাদের দেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননে অনেক সময় গর্ভধারণের হার কম হওয়ার কারণসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা করা হলো।

প্রধানত ৫ টি কারণে গাভী গর্ভধারণ করে না। সেগুলো হলঃ

১। বীজের গুণাবলী (Semen quality)ঃ বীজ ভালো না হলে যেমন ক্ষেতে ফসল ভালো হয় না তেমনি বীজ ভালো না হলে বাচ্চা উৎপাদনের হারও তেমন ভালো হয় না।
* মৃত শুক্রাণুযুক্ত বীজ ব্যবহার।
* দুর্বল শুক্রাণুযুক্ত বীজ ব্যবহার।
* স্ট্র বা বীজ ভায়ালের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা।
* বীজের পরিমাণ কম দেয়া।
* অনুর্বর ষাঁড়ের বীজ ব্যবহার।
* বীজ পরীক্ষা না করে ব্যবহার।
* জীবাণু দ্বারা শুক্রাণু সংক্রামিত হওয়া।
* বীজের গুণগতমান সঠিক না থাকা।

২। সিমেন স্ট্র/ ভায়াল
* ত্রুটিপূর্র্ণভাবে স্ট্র বা ভায়াল পরিবহন।
* ত্রুটিপূর্ণভাবে স্ট্র / ভায়াল সংরক্ষণ
* ক্রটিপূর্ণভাবে সিমেন ক্যান থেকে স্ট্র বের করা।
* সিমেন ক্যানে লিকুইড নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
* সিমেন ক্যানের ঢাকনির সাথে সংলগ্ন­ লাল সিলের ত্রুটি।
* হিমায়িত বীজ ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে গলানো (thawing)।
* তরল বীজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফ্রিজে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ না থাকা।

৩। প্রজননকারী
* প্রজননকারীর অনভিজ্ঞতা।
* ত্রুটিপূর্ণ ও অদক্ষভাবে প্রজনন করা।
* প্রজনন অঙ্গের ভেতর ভুল স্থানে শুক্রাণু স্থাপন।
* গাভীর ইস্ট্রাস বিষয়ে ভুল ধারণা।
* প্রজননের পর গাভীকে বিশ্রাম না দেয়া।

৪। গাভী
=> গাভী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
=> যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
=> জননাঙ্গে যে কোনো প্রকারের প্রদাহ থাকা।
=> অনিয়মিত ঋতুচক্র।
=> পুনঃপুনঃ গরম হওয়া ও গরম হওয়ার ভ্রান্ত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
=> হরমোন নিঃসরণের অভাব।
=> হরমোন নিঃসরণে ভারসাম্যহীনতা।
=> অপ্রকাশিত/নীরব ইস্ট্রাস (গরম হওয়া)।
=> অধিক বয়স।
=> পুষ্টির অভাব।

৫। প্রজননের সময়
=> বকনা / গাভী ডাকে আসার ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন না করা।
=> ত্রুটিপূর্ণ গরমের লক্ষণ চিহ্নিত করা।
=> প্রজনন ব্যবস্থাপনা পালন না করা।
=> সকালে গরম হলে সকালেই প্রজনন করানো।
=> বিকালে গরম হলে ওই দিন বিকালেই প্রজনন করানো।
=> প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময় না মানা।

বর্ণিত ৫টি কারণে বকনা বা গাভী গরম হওয়ার পর প্রজনন করালেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয়। এছাড়া আরো অনেক কারণ আছে যে কারণে কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসু হয় না। তবে বীজের গুণাবলী, সিমেন স্ট্র বা ভায়াল, প্রজননকারী ও গাভীর যেসব ত্রুটির কথা বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে সমাধান করা হলে গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

কারণ হলো-শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর যৌথ মিলনে জাইগোট তৈরি হয় যা হয়ে থাকে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ফেলোপিয়ন টিউবের ৪টি অংশের একটি নির্দিষ্ট অংশে। অর্থাৎ জাইগোট তৈরি হয় গাভীর এম্পুলা বা এম্পুলো ইস্তমাস জাংশনে। আর বকনা বা গাভীর ডিম্বাণুক্ষরণ হয় গরম হওয়ার ৮-১০ ঘন্টা পর এবং তা বেঁচে থাকে মাত্র ৮-১২ ঘন্টা।

অপরপক্ষে জরায়ুর পরিবেশ ভালো থাকলে শুক্রাণু ২৪-৪৮ ঘন্টা বেঁচে থাকে। আবার ফেলোপিয়ান টিউবের নির্দিষ্ট স্থানে ডিম্বাণুর ভেতর প্রবেশ করতে শুক্রাণুর ক্যাপাসিটাইজেশন প্রয়োজন। ডিম্বাণু ও শুক্রাণু যাতে সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারে এ জন্য সঠিক সময়ে প্রজনন করতে হয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৩ জুন ২০২১