গাভীর ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

722

গাভীর ওলান ফোলা হলো একধরণের মারাত্ত্বক ব্যাধি। যা গাভী এবং বাচ্চার জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা গাভীর ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে গরুর ওলান আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ রোগ একটি গাভীর যে কোনো সময় হতে পারে তবে বাছুর প্রসবের পরেই গাভী বেশি আক্রান্ত হয়।

গাভীর ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা শিরোনামের বিষয়টি আলোচনা করেছেন রাজশাহী দুগ্ধও গবাদি উন্নয়ন খামারের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমান।

রোগের কারণ
বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, মাইকোপ্লাজমা ও ভাইরাস এ রোগ সৃষ্টি করে থাকে। যদি সেডের মেঝে দীর্ঘ সময় সেঁতসেতে ও ভিজা থাকে, ওলানের বাঁট দূষিত মেঝের, সংষ্পর্শে আসার মাধ্যমে অথবা দুধ দোহনকারীর হাত, দুধ দোহনের যন্ত্রের মাধ্যমে জীবাণু সরাসরি ওলানে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। কারণ গাভী যখন শুইবে তখন তার ওলান দিয়ে জীবানু ঢুকবে। সেই থেকে ওলান ফুলে যেতে পারে। এজন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাখার কোনো বিকল্প নাই। ওলানে বা বাঁটে আঘাতজনিত ক্ষত, ক্ষুরারোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষত বা দীর্ঘ সময় ওলানে দুধ জমা থাকলেও এ রোগ হতে পারে। বাঁটের মধ্যে কোনো শলা বা কাঠি প্রবেশ করালেও গাভী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ
ওলান ফুলে শক্ত ও গরম হয়। লাল বর্ণ হয়ে যায়। কখনও পুজের মত বা রক্ত মিশ্রিত হয়। কখনও কখনও দুধের পরিবর্তে টাটকা রক্ত বের হয়। ওলানে ব্যথা হয়। দুধ কমে যায় এমনকি বন্ধও হয়ে যায়।

তীব্র রোগে ওলান হঠাৎ করে লাল, শক্ত ও ফুলে যাবে। হাত দ্বারা ষ্পর্শ করলে গরম অনুভূত হবে। ওলানে হাত বা কোনো কিছুর হালকা আঘাত লাগলে প্রচন্ড ব্যথা থাকে। ওলানের সামনে পানি জমে যায়। গায়ে জ্বর থাকে। পানির মত দুধ, পুঁজ বা রক্তযুক্ত দুধ বের হয়। ওলানে পচন ধরতে পারে। দুধ কালো কাপড়ে ছাঁকলে জমাট বাঁধা দুধ দেখা যায়। এমন কি বাছুরকেও দুধ দেয় না। দুধের রং লাল বর্ণ হয়ে যায়। দুধের মধ্যে ছানার মত কিছু জমে থাকতে পারে। গাভীর খাদ্য গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়। অনেক সময় আক্রান্ত ওলানে গ্যাংগ্রিন হয়ে খসে যায়। গাভীর মৃত্যুও হতে পারে।

চিকিৎসা
খুব দ্রুত রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। এ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। এতে জেন্টামাইসিন ও কিটোটিফেন জাতীয় ওষধ প্রয়োগ করতে হবে। এতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। ১২ ঘন্টার মধ্যে এর চিকিৎসা করতে হবে। এর বেশি দেরি হলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। তখন আর চিকিৎ করে ফেরত পাবে না। অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, হাতুরে ডাক্তারের চিকিৎসার মারত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ রোগটি জটিল প্রকৃতির বিধায় পশুচিকিৎসকের পরামর্শমত চিকিৎসা করানো উচিৎ।

প্রতিরোধ
চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের জন্য কাজ করতে হবে। একটি ডেইরী ফার্মে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বাঁটের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে। বাসস্থান উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। জীবাণুমুক্ত দুধ দোহন ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। ওলান ও বাঁটের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ যে কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুব দ্রুত এ রোগ সনাক্ত করতে হবে এবং দ্রুত উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। অসুস্থ গাভীকে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে। শুষ্ক ও গর্ভবতী গাভীকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সেবা দিতে হবে। গাভীর ক্ষেত্রে (বকনা বাদে) দুধ দোহনের শেষ দিনে বাঁট বন্ধ করে দিতে হবে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া গাভী, যে গুলিকে সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না সে গুলিকে ছাঁটাই করতে হবে। যারা গাভী দহন করবে তাদের হাত,শরীর , কাপড়সহ সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৩ আগস্ট ২০২১