চাকরি না পেয়ে শুরু করেন মাল্টা চাষ, বছরে আয় ১৫ লাখ

25

 

মনিরুজ্জামান রাজু বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে ডিপ্লোমা শেষ করে চাকরির চেষ্টা করেছেন বেশ কিছুদিন। চাকরি না পেয়ে শুরুর দিকে হতাশ হয়েছিলেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে সেই হতাশা কাটিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টায় শুরু করেন মাল্টা চাষ। কোনো মতে বাবার কাছ থেকে নেওয়া ৫ বিঘা জমি দিয়ে শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অর্গানিক মাল্টা বাগান করে বছর না ঘুরতেই পেয়েছেন সফলতা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতি বছর বাড়ছে তার আয় এবং চাষের জমির পরিমাণ।

প্রথম বছর ২ লাখ তার পরের বছর আরও কিছু বেশি আয় হয়। এভাবেই প্রতি বছর বাড়তে থাকে আয়। এবার তিনি আশা করছেন, আরও ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে তার বাগান থেকে। তার ইচ্ছা মাল্টার পাশাপাশি এই খামারে তিনি নতুন নতুন ফলের চারা উৎপাদন করবেন। পাশাপাশি মানুষকে বিষমুক্ত ফল খাওয়ানোই তার মূল উদ্দেশ্য। মাল্টা ছাড়াও রাজুর বাগানে রয়েছে উন্নত জাতের কমলা, আপেল, সৌদি খেজুর ও ভিয়েতনামি নারিকেলসহ দেশি-বিদেশি অনেক ফলের গাছ।

জানা যায়, নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের ঝারপাড়া গ্রামের মোহাব্বত আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান রাজু। ২০১৫ সালে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি লাভের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন রাজু। ২০১৮ সালে নিজ গ্রাম পঞ্চপুকুরে পৈতৃক পাঁচ বিঘা জমিতে অর্গানিক মাল্টা বাগান শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সুস্বাদু হওয়ায় রং আসার আগেই সরাসরি বাগান থেকে কাচা মাল্টা নিয়ে যান বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতারা। অনলাইনেও চলছে মাল্টা সরবরাহ। এতে কাঙ্ক্ষিত আয়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। মাল্টা বাগানের পরিধি আরও বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।

মনিরুজ্জামান রাজু বলেন, ২০১৪ সালে কৃষিতে ডিপ্লোমা শেষ করার পর অনেক বেসরকারি সংস্থা ও সরকারি চাকরির জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছি। চাকরির ট্রাই করে যখন হয়নি এরপর নিজে কিছু করার চিন্তা ভাবনা করলাম। সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মাথায় আসলো নিজে বাগান করে একজন উদ্যোক্তা হব। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে মাল্টার ২০০ চারা রোপণ করি। ২০১৯ সালে কিছু কিছু গাছে ফল আসে। ২০২০ সালে খুব ভালো ফল হয়। ফলগুলোর মিষ্টিও অনেক বেশি, বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। বাগানেই অনেকে আসে নেওয়ার জন্য। পরে চিন্তা করলাম বাগানের পরিধি বাড়াব পরবর্তীতে আরও ৪০০ চারা রোপণ করি।

তিনি আরও বলেন, বাইরে থেকে আমি একটা জাত সংগ্রহ করেছিলাম সেই জাতটার গাছেই খুব ভালো কালার হয়। পরে নীলফামারীর কৃষির উপ-পরিচালক স্যার আমার নিজের নামেই এটার নামকরণ করে দিল। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া এতদূর আশা সম্ভবত না। তবে শুরুতে প্রতিবেশীরা অনেকেই অনেক কথাই বলেছিল। আমি কারো কথায় কান দেয়নি। আলহামদুলিল্লাহ এখন সফলতা এসেছে। আমার বাগানে সবসময় দুইজন কর্মচারী থাকে। কাজ বেড়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ জনকে কাজে নেওয়া হয়। আমার ইচ্ছে শুধু নীলফামারী না সারাদেশেই আমার নামে যে মাল্টার জাতটা আছে এটা ছড়িয়ে দেওয়া। প্রথম বছরে ২ লাখ টাকার মতো মাল্টা বিক্রি করেছি। পরের বছর সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তার পরের বছর বিক্রি হয়েছিল ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা। গত বছর ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ বছরও আশা করছি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারব।

মাল্টা বাগানের শ্রমিক আকবর বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই বাগানে কাজ করছি। এখানে কাজ করে দিনকাল ভালোই যাচ্ছে। এখানে কাজ করে অনেক সুবিধা পাচ্ছি। আগাছা পরিষ্কার থেকে শুরু করে পানি দেওয়া সব কাজই আমরা করি।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। বাগানের আশপাশে প্রচুর জায়গা রয়েছে এই জায়গাগুলোতে মাটি ভরাট করে আরও এলাকা বৃদ্ধি করা যায়। এখানে একটা মাল্টা ইন্ডাস্ট্রিজ হিসাবে পরিণত করা যায় কীভাবে, সেটার পরামর্শ তাকে দিয়েছি। রাজুর সাফল্য কামনা করছি। তাকে বলেছিলাম যে এই মাল্টার বাগানের মধ্যে বিনোদন পার্কের মধ্যেও কিছু করা যায় কিনা। যাতে করে মানুষ অবসর সময় কাটাতে পারে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, আমরা যেখানে ডলার খরচ করে অনেক দামে বিভিন্ন রকম মেডিসিন দেওয়া ফল খাচ্ছি সেখানে আমি মনে করি এটা দৃষ্টান্ত হতে পারে। এই দৃষ্টান্তটাকে সবাই যদি অনুকরণ করতে পারে তাহলে সবার জন্য ভালো হবে। অন্যান্য কৃষক ভাইয়েরা যদি উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসেন তাহলে আমাদের বেকার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যেমন উনি কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে এসে চাকরির দিকে না ঝুঁকে নিজে উদ্যোগী হয়ে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষে যা সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।