নতুন সম্ভাবনায় ‘দেশি মাছ’ খলশের পোনা উৎপাদন!

691

বাঙালি মৎস্য–অন্তপ্রাণ। ঈশ্বর গুপ্তের ভাষায়, ‘ভাত-মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙ্গালি সকল/ধানে ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল।’ বাংলাদেশে এখনো বাঙালি আছে। তাদের মৎস্যগত প্রাণও আছে। সমস্যা হলো, গত দুই দশকে ‘ধানে ভরা ভূমি’ এবং ‘মাছ ভরা জল’—এ দুটি জিনিস যেভাবে রকেটের গতিতে কমেছে, ঠিক একই গতিতে ‘মৎস্য–অন্তপ্রাণ’ বাঙালির সংখ্যা বেড়েছে।

ফলাফল হিসেবে মাছের তীব্র আকাল দেখা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ততটা সংকটে আমাদের পড়তে হয়নি। এর কারণ হলো, দেশে মাছ নিয়ে গবেষণা বহুদূর এগিয়েছে। কৃত্রিম প্রজনন ও খামারে নানা ধরনের মাছের চাষ সেই আকাল থেকে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, মহাশোলসহ ১৮টি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ-কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এর সঙ্গে অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ খলশের যুক্ত হওয়ার খবর বেরিয়েছে। এটি ‘মেছো’ বাঙালির জন্য একটি বড় সুখবর।

নদী-খাল-বিলের মতো প্রাকৃতিক জলাশয়ে খলশে বড় হয়। পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে এই মাছ চাষ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন থেকে সেই অসম্ভব কাজটি সম্ভব হবে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো এই মাছ পুকুরে চাষের উপযোগী করতে পেরেছেন। তাঁরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এর পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। এখন এটি পুকুরে চাষ করায় কোনো বাধা থাকল না।

খলশে মিঠাপানির জলাশয়ে, বিশেষ করে পুকুর, নদী, ঝরনা, খাল, বিলে একসময় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ধান ও সবজি চাষে কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগ, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে এর বাসস্থান ধ্বংসপ্রায়। এর প্রজননও হুমকির মুখে। নতুন আবিষ্কারে এই প্রজাতি বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচল। চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতাও নিশ্চিত হলো।

খলশের মতো আরও অনেক ছোট মাছ আছে, যাদের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল দ্রুত বের করা দরকার। চ্যালা, তিতপুঁটি, ঘুতুম, চান্দা, চুঁচড়ো—এ রকম অনেক প্রজাতির মাছ আছে, যেগুলো একসময় সবার প্রিয় ছিল কিন্তু এখন আর চোখে পড়ে না। এগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। দ্রুত এসব মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল বের করা দরকার।

মাছ নিয়ে কয়েক দিন আগে আরেকটি ভালো খবর দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও। তারা বলেছে, প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। তার মানে বাংলাদেশের সামনে অপার সুযোগ রয়েছে। এখন দরকার সদিচ্ছা বাড়ানো।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৭ জুন ২০২১