মাংসের পাশাপাশি জনপ্রিয় হচ্ছে টার্কির ডিমও

412

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টার্কির ডিম। ক্রেতা সাধারণের চাহিদা বিবেচনা করে বাজারে এখন পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে টার্কির ডিম। উৎপাদন ব্যয় কম এবং অল্প বিনিয়োগে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার কারণে ইতোমধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে টার্কি লালন পালন। গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বাড়িতেই টার্কির খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

প্রাণী বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী কয়েক বছরেই দেশে ঘটবে টার্কি বিপ্লব। এতে বেকারত্ব দূর এবং দারিদ্র্য বিমোচন হওয়ার পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় জোরালো অবস্থান করে নেবে সুস্বাদু টার্কির ডিম ও মাংস। টার্কিকে ঘিরে সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।

খামারিরা জানান, টার্কি মুরগি মাত্র ৬ মাসে ডিম দেওয়া শুরু করে। এক বছরেই একটি টার্কির ওজন হয় ১০-১২ কেজি। পুরুষ টার্কি ওজন ১৪ কেজি পর্যন্ত হয়। এ হিসাবে একটি ছাগল থেকে যে পরিমাণ মাংস পাওয়া যায় তার থেকেও একটি টার্কি থেকে বেশি মাংস পাওয়া যায় । টার্কি লালন-পালনে এক বছরেই পুঁজির দুই-তিন গুণ মুনাফা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

kalerkanthoদেশে আমিষের চাহিদা পূরণে অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে উঠছে টার্কির সুস্বাদু মাংস। গরু, সাধারণ মুরগি এবং খাসির তুলনায় টার্কির মাংসে প্রোটিন বেশি এবং কোলেস্টেরল মুক্ত। স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুস্বাদু হওয়ায় ধীরে ধীরে টার্কির মাংস আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কির মাংস বেশ জনপ্রিয় ও দামি খাদ্য। আমাদের দেশেও অভিজাত রেস্টুরেন্ট কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এখন টার্কির কদর বাড়ছে।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, রেড বারবন প্রজাতির এক জোড়া টার্কির দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা। দেশেও এই প্রজাতির টার্কি লালন-পালন শুরু হয়েছে বেশ কয়েকটি জেলায়।

একটি টার্কি তাদের জীবনকালে চার বছর পর্যন্ত ডিম দেয়। ৬ মাস থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে একটি টার্কি তিন মাস টানা ডিম দেয়। তিন মাস পর একদিন পর পর ডিম দেয় টার্কি। বছরে গড়ে ডিম পাওয়া যায় ২০০টি। চার বছরে দেয় ৮০০ ডিম। বর্তমানে টার্কির একটি ডিম ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি বাজারে। বাচ্চা উৎপাদনের উপযোগী ডিমও মিলবে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী। এমন প্রতিটি ডিমের দাম ৫০ টাকা। তবে এক্ষেত্রে অগ্রিম বুকিং দিতে হবে ক্রেতাকে।

এ প্রসঙ্গে কাজির দেউড়ি বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এতদিন দেশি মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, ফার্মের মুরগির ডিম এবং কোয়েলের ডিমের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকলেও নতুন করে টার্কির ডিমের প্রতি ঝুঁকছে ক্রেতারা। প্রতিদিন ১৫/২০ জন ক্রেতা টার্কির ডিম কেনার জন্য দোকানে আসছেন। এ ছাড়া অনেকে বাচ্চা উৎপাদনের উপযোগী ডিম অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আকারে ফার্মের মুরগির ডিমের চেয়েও বড় হয় টার্কির একেকটি ডিম। তবে ডিমের গায়ে ফোঁটা দাগ রয়েছে। যা অন্য যে কোনো ডিম থেকে আলাদা চেনা যায়।’

খামারিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, টার্কির জন্য কৃত্রিম খাবারের প্রয়োজন নেই। এ কারণে টার্কির খাবারের ব্যয়ও খুবই কম। সাধারণ প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস ও লতা-পাতা এবং শাক-সবজি টার্কির পছন্দের খাবার। এ ছাড়া দানাদার খাবার রাখতে হবে। রোজ একটি টার্কি দৈনিক খাবার খায় ১৫০ গ্রাম।

চট্টগ্রামের টার্কি খামার এগ্রোকমের ব্যবস্থাপক মো. জাহেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টার্কির ডিম ক্রেতা সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে কম দামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আমরা এখন হাইব্রিড টার্কিও উৎপাদন করছি। একেকটি টার্কির ওজন ২০ কেজির ওপরে। টার্কির ডিম ও মাংস মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

এগ্রোকমের মূল প্রতিষ্ঠান (মাদার কনসার্ন) বিল্ডকমের পরিচালক মো. আলি আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা খামার করছি। প্রথমে কোয়েল উৎপাদন ও বিপণন করেছি। এখন টার্কিকে জনপ্রিয় করার জন্য গ্রাহক পর্যায়ে ভর্তুকি মূল্যে ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ২টি এবং সিলেটে একটি খামার রয়েছে আমাদের। এসব খামারে পাঁচ শতাধিক টার্কি

লালন-পালন হচ্ছে। প্রতিদিন উৎপাদিত ডিম থেকে নতুন বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। এক মাস বয়সের বাচ্চাও বিক্রি করছি আমরা। শখের খামারিরা বাড়ির ছাদে টার্কি পালন করছেন।’

তিনি জানান, দেশিয় মুরগির মতো ঘরেও টার্কি

লালন-পালন করা যায়। যে কেউ এক জোড়া টার্কি কিনে লালন পালন করতে পারেন। দেশি মুরগির মাধ্যমেও টার্কির ডিম ফোটানো যায়। পোল্ট্রি মুরগির মতো কৃত্রিম খাবার প্রয়োজন হয় না টার্কি লালন-পালনে।

তাই টার্কি লালন-পালনে ব্যয় কম বিধায় মুনাফা বেশি। টার্কি পালনে আগ্রহীরা নগরের খুলশী ভারতীয় হাইকমিশনের পাশে বিল্ডকম শোরুমে যোগাযোগ করলে সরাসরি গ্রাহক পর্যায়ে টার্কির বাচ্চা ও ডিম সরবরাহ করা হবে।

টার্কির মাংস ও ডিমের গুণগত মান প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘এ দেশের জন্য টার্কি নতুন এবং সম্ভাবনাময় একটি খাত। বিশ্বব্যাপী বয়লার টার্কির মাংস অভিজাত খাদ্য হিসেবে পরিচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুরগির ডিমের চেয়েও বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে টার্কির ডিমে। টার্কির মাংস দ্রুত বর্ধনশীল। টার্কি ভেজিটারিয়ান হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম। টার্কি পালনের মাধ্যমে দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে

এটা সম্ভাবনাময় শিল্প হতে পারে।’

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৬ জুলাই ২০২১