মাছ চাষে বটম ক্লিন পদ্ধতির প্রয়োগ করবেন যেভাবে

353

অনেকেই মাছ চাষের সাথে যুক্ত কিংবা অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ শুরু করবেন বলে পরিকল্পনা করছেন। মাছ চাষ করতে গিয়ে বটমক্লিন পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই পদ্ধতি মাছ চাষের পুকুরে কিংবা মাছের খামারে ব্যবহার করা হয়। আসুন জেনে নেই এই বটমক্লিনের ভূমিকা সম্পর্কে-

বটমক্লিন কি: বটম অর্থ নিচ, ক্লিন অর্থ পরিষ্কার। শব্দটি যখন পুকুরে মাছ চাষের বেলায় ব্যবহারীত হবে তখন এর অর্থ দাঁড়াবে, পুকুরের তলার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা।

অতিরিক্ত খাবার প্রয়োগের ফলে অবশিষ্ট খাবার গুলো পঁচে ক্ষতিকর গ্যাস তৈরী করে এবং অতিঘনত্বে মাছ চাষ করার কারনে পুকুরের তলায় অতিরিক্ত যে মল-মূত্র জমা হয়, সেই পঁচা অতিরিক্ত খাবার ও মাছের মল-মূত্রকে মোটরের সাহায্যে পুকুরের তলা থেকে বের করে নেয়ার পদ্ধতির নামই হচ্ছে বটমক্লিন।

বটমক্লিন ব্যবহারে কি কি উপকার হয়: (১) এ্যামোনিয়া সহ যেকোন ক্ষতিকারক গ্যাস দূর হয় (২) পানি ও মাটির পরিবেশ ভাল থাকে (৩) নিয়মের চাইতে দেড় থেকে দুই গুন বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়।

বটমক্লিন কিভাবে কাজ করে: যে পুকুরে বটমক্লিন পদ্ধতি সেট করবেন সে পুকুুরটি বর্গাকার হলে ভাল। ২০ থেকে ৬০ শতক পর্যন্ত পুকুরে একটি মাট পাম্প সেট করলেই যথেষ্ট, আর পুকুুর যদি এর চেয়ে বড় হয় তাহলে দুইটি মাট পাম্প ব্যবহার করতে হবে।

প্রথমে সমস্ত পুকুুর শুকিয়ে নিতে হবে। এর পর পুকুরে এমন ভাবে মাটি কাঁটতে হবে যে, যেন পাড়ের চার পাশ্ব থেকে তলা পর্যন্ত ঢালু থাকে। পুকুরের তলা সমান করা যাবেনা। চারদিক থেকে একেবারে মাঝ বরাবর পর্যন্ত ঢালু করে তৈরী করতে হবে। তারপর পুকুরের মাঝখানে এক ফুট মত গর্ত করে ১০ ফুট গোলাকার জায়গাকে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে নিতে হবে।

পরিশেষে ছবিতে দেখানো মাট পাম্পটি গোলাকার বৃত্তের মাঝখানে সেট করবেন, পাম্পের আউটপুট পাইপটি পুকুরের বাহিরে এনে ফেলবেন। তারপর পানি প্রবেশ করিয়ে মাছ মজুদ করুন। যখন দেখবেন পানির পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে তখনি মাট পাম্পটি চালু করে দিবেন অথবা দৈনিক নিয়ম করে ১/২ ঘণ্টা চালাবেন।

সাথে সাথে আরেকটি পাম্পের সাহায্যে পুকুরে সমপরিমাণ নতুন পানি প্রবেশ করাতে হবে। আপনার পুকুরে এয়ারেটরের পাশাপাশি যদি বটমক্লিন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে স্বাভাবিক ঘনত্বের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুন বেশি মাছ চাষ করতে পারবেন।

সতর্কতা: কার্প জাতীয় মাছ বেশি ঘনত্বে চাষ করলে গ্রোথ ভাল হয়না, তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার না করাই ভাল। এটা মূলত শিং, মাগুর, পাবদা, গুলসা, কৈ চাষে ভাল রেজাল্ট দেই। যাদের পুকুরে কাঁদার পরিমান এক ফুটের বেশি তাঁরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তেমন সুবিধা করতে পারবেন না।

চাষী নতুন বা অনভিজ্ঞ হলে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন না থাকলে এই পদ্ধতি ব্যবহার না করাই ভাল। বি: দ্র: পুকুুর টি প্রতি বছর শুকিয়ে নিয়ে আবার নতুন করে মাটি কেঁটে তৈরী করে নিতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৬ জুন ২০২১