যে কারণে মুরগির বাচ্চার মৃত্যু হয়

342

মুরগির বাচ্চার মৃত্যুর কারণ

লাভজনক মুরগি (ব্রয়লার,লেয়ার,সোনালী) পালনেরপূর্ব শর্ত হলো এক দিন বয়সের আর্ন্তজাতিক মানের বাচ্চা। একদিন বয়সের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দৈহিক ওজন হবে ৪২ গ্রামের উপরে, লেয়ার মুরগির বাচ্চার দৈহিক ওজন হবে ৩৮ গ্রামের উপরে, সোনালী মুরগির বাচ্চার দৈহিক ওজন হবে ৩০ গ্রামের উপরে। একদিন বয়সের বাচ্চার পালক হবে শুকনা,বাচ্চার পা দেখতে হবে উজ্জ্বল,বাচ্চা হতে হবে সতেজ, বাচ্চা দেখতে হবে চটপটে স্বভাবের,বাচ্চার কন্ঠস্বর হবে ভালো, বাচ্চা নিজের ইচ্ছে মতো দৌড়াদৌড়ি করবে,বাচ্চা হতে হবে বিচক্ষণ।

এক কথায় বলতে যা বোঝায় তা’ হলো একদিন বয়সের বাচ্চাকে হতে হবে চণ্চল প্রকৃতির ও সজীব। বাচ্চা হ্যাচিং এর পরে যতো তাড়াতাড়ি ব্রুডারে ছেড়ে দেওয়া যায় ততোই উত্তম। হ্যাচিং এর ২৪ ঘন্টা অতিক্রম হলে তা’ বাসী বাচ্চা হিসেবে গণ্য করা হবে। তাই বাচ্চা সংগ্রহের পূর্বে সর্বদাই স্বনামধন্য হ্যাচারীর বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে এবং বাচ্চার কার্টুনের গায়ে কোম্পানী কর্তৃক বাচ্চা সরবরাহের তারিখ ,ফ্লোক নং, হ্যাচিং নং ইত্যাদি ভালো করে দেখে নিতে হবে।

এছাড়াও একদিন বয়সের বাচ্চাকে কোন ভ্যাকসিন কোম্পানী কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে কিনা, ব্রিডার ফ্লোকে ১৮-১৯ সপ্তাহ বয়সে গামবোরো রোগের কিল্ড ভ্যাকসিন করা হয়েছে কিনা ,কোম্পানী কর্তৃক গামবোরো রোগের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা প্রদান করা রয়েছে কিনা, কোম্পানী কর্তৃক একদিন বয়সের বাচ্চাক মারেক’স রোগের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা’ জেনে নিতে হবে এবং নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে ।

খামারে উপযুক্ত জীবাণুনাশক ব্যবহার না করা,
দুর্বল বায়ু প্রবাহ ব্যবস্থা,
বাচ্চা অপর্যাপ্ত বিশ্রাম,
বাচ্চা গাদাগাদি অবস্থায় থাকা,
সুষম খাদ্যের অভাব,
খাদ্যে মাইকোটক্সিনের উপস্থিতি ,
অল ইন অল আউট পদ্ধতিতে মুরগি পালন না করা।

প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা মৃত্যুর কারণ:

ত্রুটিপূর্ণ ইনকিউবেশন:

অতিরিক্ত তাপমাত্রা: ইনকিউবেটরে ইনকিউবেশনের সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বাচ্চা পানি শূণ্যতায় ভোগবে, বাচ্চার দৈহিক ওজন কম হবে ও গাউট রোগের সমস্যা দেখা দিবে।

স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা : ইনকিউবেটরে ইনকিউবেশনের সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি হবে না।

উচ্চ আর্দ্রতা: –ইনকিউবেটরে ইনকিউবেশনের সময় আর্দ্রতা বেশি হলে বাচ্চার পেট বড় (Pot bellied chicks) হবে, বাচ্চার নাভী কাঁচা থাকবে যা পরবর্তিতে অমফ্লাইটিস রোগে আক্রান্ত হবে।

নিম্ন আর্দ্রতা: বাচ্চা ডিহাইড্রেশনে ভোগবে এবং গাউট রোগে আক্রান্ত হবে।
ইনকিউবেটর ও হ্যাচারী যথাযথভাবে জীবাণুমুক্তকরণে শৈথিল্যতা :–উত্তমরূপে ইনকিউবেটর ও হ্যাচারী গুণগতমানের জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত না করলে অমফ্যালাইটিস ও ব্রুডার নিউমোনিয়ায় বাচ্চা আক্রান্ত হবে।

২। দেরিতে বাচ্চা সরবরাহ করা: বাচ্চা দেরিতে সরবরাহ দিলে বাচ্চা ডিহাইড্রেশনে আক্রান্ত হবে ও বাচ্চা গাউট রোগে ভোগবে। তাই বাচ্চা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সরবরাহ দিতে হবে।

৩। বক্সের বেডিং যথাযথভাবে জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে: কিছু কিছু রোগ জীবাণু আছে যা ব্রিডার বা হ্যাচারী থেকে বাচ্চায় সংক্রামিত হয়। হ্যাচারী ব্যবস্থাপনা যথাযথ না হলে কতিপয় রোগ অতি সহজে বিস্তার লাভ করে। বিশেষ করে অমফ্যালাইটিস, এসপাজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া । এজাতীয় রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে চিক বক্স জহীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং ব্যবহৃত চিক বক্স পুড়ে ফেলতে হবে।

৪। পুলোরাম রোগ, এভিয়ান এনসেফালোমাইয়েলাইটিস: মুরগির পুলোরাম রোগ ও এভিয়ান এনসেফালোমাইয়েলাইটিস ডিমের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এজাতীয় রোগের বিস্তারকে ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন বলা হয়। অর্থাৎ ব্রিডার মুরগি থেকে ডিমের মাধ্যমে নতুন বাচ্চায় সংক্রামিত হয়।

দ্বিতীয় সপ্তাহে বাচ্চার মৃত্যুর কারণ: বাচ্চা জন্মের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্রুডার হাউসে খামারের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে বাচ্চা সালমোনিলোসিস,এভিয়ান এনসেফালোমাইয়েলাইটিস ও কলিব্যাসিলোসিস রোগে আক্রান্ত হয়।

এ সময়ে বাচ্চা মুরগির মধ্যে ভিটামিনের অভাব জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে বিশেষ করে ভিটামিন বি১ এর অভাবের কারণে অপিসথোটোনাস বা স্টার গ্রেজিং, আকাশের তারা গোনা রোগ ও ভিটামিন বি২ এর অভাবে কার্ল্ড টো প্যারালাইসিস ও ভিটামিন ই এর অভাবে এক্সুডেটিভ ডায়াথেসিস, এনসেফালোম্যালাসিয়া ও মাসকিউলার ডিস্ট্রোফি ইত্যাদি। অবশ্য এ ধরনের সমস্যা মুরগির যে কোন বয়সেও হতে পারে।

তৃতীয় থেকে ৫ম সপ্তাহে বাচ্চার মৃত্যুর কারণ: ৩য় থেকে ৫ম সপ্তাহ পর্য্ন্ত মুরগি সাধারণত নানা ধরণের রোগে অক্রান্ত হয়। ভাইরাস জনিত রোগের মধ্যে গামবোরো রোগ, রাণীক্ষেত রোগ,ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস অন্যতম। ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের মধ্যে সালমোনেলোসিস, কলিব্যাসিলোসিস, ক্লস্ট্রেডিয়াল ইনফেকশন, ইনফেকশাস কোরাইজা, মাইকোপ্লাজমোসিস অন্যতম। প্রোটোজোয়াল রোগের মধ্যে কক্সিডিওসিস অন্যতম। মাইকোটক্সিকোসিস রোগের মধ্যে বিশেষ করে আফলাটক্সিকোসিস অন্যতম।

৬ষ্ট থেকে ৮ম সপ্তাহ মৃত্যুর কারণ: এ সপ্তাহে মুরগি উপরে উল্লেখিত যে কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে মুরগি বেশি বয়স্ক হলে ফাউল কলেরা, ফাউল টাইফয়েড, ফাউল প্যারা টাইফয়েড, ফাউল পক্স সহ এভিয়ান ইণ্ফ্লুয়েন্জা অন্যতম।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিশেষ করে হিট স্ট্রোকের ঝুকি বেড়ে যায়।
ক্যানিবলিজম বা মুরগির ঠোকরাঠোকরী জনিত বদ অভ্যাস।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৩ জুলাই ২০২১