পর্ব-১
বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন সময় এবং ¯্রােত কারো জন্য থেমে থাকে না। কথাটা হয়ত সত্য! তবে জীবন যদি থেমে যায় তখন সময় কিংবা স্রোত সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
প্রায় এক বছর হতে চলল ব্রয়লার মুরগির বাজারের কোন উন্নতি নেই। কখনও ৮০ টাকা, কখনও ৮৫ টাকা, কখনও বা ৯৫ টাকা ! এই হচ্ছে পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির সর্বোচ্চ দর। গ্রাম থেকে শহরে খামারিদের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। কবে দাম বাড়বে সেই প্রত্যাশায় দিন, মাস এমনকি বছরও পার হয়ে গেল কিন্তু ব্রয়লার মুরগির বাজার দরে কোনো উন্নতি নেই।
মার্কেট ডাটা বলছে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দর ছিল ১৩০ টাকা, ২০১৫ সালের চতুর্থ সপ্তাহে ছিল ১৩৮ টাকা এবং ২০১৬ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল ১৪৮ টাকা! তাহলে এমন কী হলো যে বাজার দরের এ দৈনদশা থেকে মুক্তি মিলছে না?
এটা কী পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারিদের কারসাজি? নাকি মধ্যসত্ত¡ভোগী দাদন ব্যবসায়ীদের? নাকি চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় এ পরিণতি? এটা কী কোনো চক্রান্ত? নাকি এটা আমাদের সকলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবহেলার পুঞ্জিভ‚ত ব্যর্থতার মহাশ্মশান !
একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদনকারি ব্রিডার থেকে শুরু করে তৃণমূল খামারি পর্যন্ত কেউ কি এর দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন? যদি দায় এড়ানোর সুযোগ না-ই থাকে তবে সময় ক্ষেপন না করে কী আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ শুরু করা উচিত নয়?
আমি পোল্ট্রি’র লোক নই। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় আমার পড়াশুনা । কিন্তু একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে- পোল্ট্রি আমার জীবন ও জীবিকার সাথে মিশে গেছে। ২০০৭-০৮ সাল থেকে পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আমার সংশ্লিষ্ঠতা। আমি জানি এদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও ভাগ্য পরিবর্তনের সাথে জড়িয়ে আছে পোল্ট্রি। তাই বাজার খারাপ বলে কিংবা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ব্রয়লার ছেড়ে সোনালীর চাষ শুরু করা কিংবা এ পেশাকে অবজ্ঞায় ছুড়ে ফেলে অন্য পেশায় মুনাফা খুঁজতে শুরু করার মধ্যে কৌশলী বা চালাক মানুষ হিসেবে বাহ্বা কুড়ানোর ভেতর দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ হয়তো সম্ভব কিন্তু তাতে কী আত্মগ্লানি ঘুচবে?
মনে করার কোন কারণ নেই যে- এ আত্মগ্লানি শুধু খেটে-খাওয়া সাধারন খামারিদের বরং যাঁরা বড় বড় কোম্পানীর মালিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক কিংবা সরকারি আমলা-কর্মকর্তা কিংবা নীতিনির্ধারক- সকলেই আজ সমান দোষে দুষ্ট।
তাই প্রত্যেকের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে- আসুন আমরা চেষ্টা করি। নীরব হয়ে বসে না থেকে কথা বলা শুরু করি। সবাই হাতে হাত রেখে কাজ শুরু করি। কেউই আজ সুখে নেই। এই কষ্টের শিক্ষাই হয়ত আগামীদিনের সফলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পরবর্তী লেখাতে আমি আমার নিজের চিন্তা প্রসূত কিছু ব্যাখা বিশ্লেষণ নিয়ে হাজির হবো। তবে আশা করবো আগামী লেখা প্রকাশের আগেই আপনারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রচেষ্টা শুরু করবেন।
তবে একটি কথা এখনই বলে রাখা প্রয়োজন যে- একটি স্বার্থান্বেষী মহল করোনা ভাইরাসের সাথে পোল্ট্রি’র মিথ্যে সম্প্রিক্ততায় এ শিল্পের সাথে জড়িত লাখো-কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করার চেষ্টা করছে। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে বিপর্যয় নেমেছে। আমাদের দেশের মানুষের মাথাতেও সেই একই তত্ত¡ ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে; অপপ্রচারের বিপরীতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে না পারলে; মানুষের ভুল ধারনা ভেঙ্গে দিতে না পারলে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে আমাদের।
মো. সাজ্জাদ হোসেন, যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১মার্চ২০