[metaslider id=”13464″]
সমাজে প্রগতি ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে চালিত শক্তিগুলি সংগঠিত ও প্রশাসন, রাজনীতি, মিডিয়া ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই এখন প্রয়োজন সমাজ পরিবর্তনকামী মানুষগুলির বৃহত্তর ঐক্য। তাহলেই সমাজ থেকে খাদ্যে ভেজাল, ধূমপান মাদকমুক্ত এবং ক্নিন ও গ্রিন সিটি বির্নিমাণ সম্ভব হবে।
গত সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর নিউ মনসুরাবাদ প্রশিকা কার্যালয়ে ক্যাব ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কমিটির অরিয়েন্টেশনে বিভিন্ন বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
বক্তারা বলেন, রাস্তায় বের হলে ১০০ টাকা সিএনজি ভাড়া ১৫০ টাকা, বাসভাড়া ৫ টাকা কি.মি হলেও ৭ টাকা আদায়, ডাক্তার, ওষুধ, প্যাথলজিক্যাল টেস্ট সব জায়গায় ভেজালের ছড়াছড়ি, আসল-নকল পার্থক্য বের করা কঠিন, কসমেটিক আইটেম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ইট, পাথর, টাইলস থেকে শুরু করে সব কিছুতে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে পুরো দেশ ভরে আছে।
তারা বলেন, অন্ন, বস্ত্র, বাস্থান,শিক্ষা, চিকিৎসা যা নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে সংবিধানিক অধিকার, যাকে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন, সে সমস্ত অধিকারগুলি ভোগ করতে প্রতিনিয়তই হয়রানি, ভোগান্তি, প্রতারনা ও ঠকতে হচ্ছে। এর পেছনে মূল কারন ভোক্তা হিসাবে প্রতিটি জনগণ অসচেতন, অসংগঠিত ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার ও প্রতিবাদী নয়। সে কারণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনিয়ম, ভোগান্তি ও প্রতারণা পরবর্তীতে মহাদুর্ভোগে পরিণত হয়ে মহামারী আকারে ধারণ করছে।
অন্যদিকে সমাজের নানা জঞ্জাল ও অনিয়ম দূর করতে কিছু সমাজ পরিবর্তনকারী মানুষ প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করছে মন্তব্য করে তারা বলেন, তবে তারা বিচ্ছিন্ন এবং পরিবর্তনকামী মানুষগুলি এক এক সময় এক একটি ব্যানারে অসংগঠিত হয়ে কাজ করছে। ফলে সমাজে নৈরাজ্যসৃষ্টিকারী গুটিকয়েক দুষ্কৃতিকারী, মুনাফালোভী ও গ্রগতি বিরোধীরা সমাজকে অগ্রগতির দিকে না নিয়ে পেছনে ঠেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
বক্তাগন আরও বলেন, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবি সকলের সমিতি থাকায় তারা ঐক্যবদ্ধ, সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। কিন্তু তার বিপরীতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা সার্ভিসের মূল অংশীদার ভোক্তারা অসংগঠিত, অসচেতন ও দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থান। সে কারণে ব্যবসায়ীরা সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক কাঠামো ও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশকে লুটপাট ও নৈরোজ্যের তীর্থ ভূমিতে পরিনত করেছে। সে কারণে খাদ্য ভেজাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতি, কৃত্রিমসংকট, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ যাবতীয় অত্যাবশ্যকীয় সেবা সার্ভিসের হয়রানি ও ভোগান্তিতে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি জনজীবন দুর্বীসহ হয়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে ভেজাল ও মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শনের নির্দেশ দিলেও প্রশাসনের গুটিকয়েক লোকের দায়িত্বহীন আচরণ ও অবেহেলার কারণে তেমন কার্যকারিতা ও অগ্রগতি হচ্ছে না।
তারা জানান, সরকার আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশে ধুমপান নিমূর্লে উদ্যোগ নিয়েছে। ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু ধুমপান হলো মাদক সেবন শুরুর প্রথম রাস্তা। সে কারণে জনসমাগম স্থান বিশেষ করে হাসপাতাল, আদালত প্রাঙ্গন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাস-ট্রেন স্টেশনে ধুমপান ও বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও আইনের কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে বিড়ি-সিপারেট, পান জর্দার বিজ্ঞাপন বন্ধ হচ্ছে না। এমনকি জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিককে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রদান, রাষ্ট্রীয় অর্থায়েন নির্মিত ছায়া ছবিতে ধুমপানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। নতুন নতুন ধুমপায়ী সৃষ্টি করতে তামাক কোম্পানিগুলি নানা উপটৌকন ও প্রণোদনা দিচ্ছে। প্রাণঘাতি এ ধুমপান বন্ধ হলে চিকিৎসা খাতে রাষ্ট্রীয় অনেক অর্থ স্বাশ্রয় হতো।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের আয়োজনে অরিয়েন্টেশনে সভাপতিত্ব করেন ক্যাব ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী জহির উদ্দীন মো. বাবার।
প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন। ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রশিকার উপ-পরিচালক আনোয়ারুল ফারুক, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু ও সহ-সভাপতি হাজী আবু তাহের।
আলোচনায় অংশ নেন আলআমিন হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. মেসবাহউদ্দীন তুহীন, ক্যাব চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য সচিব শাহাদত হোসেন, চান্দগাঁও থানার সহ-সভাপতি সেলিম সাজ্জাদ, সংস্কৃতিকর্মী দিদারুল আলম প্রধান, উন্নয়ন কর্মী আবদুস সাত্তার, মো. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন