ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার কমানো ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধের দাবি ক্যাবের

410

45

বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে পেপারলেস ও ঝুঁকিবিহীন আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য কেনাকাটা, সেবা সার্ভিসের বিল পরিশোধ ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সহজ করার জন্য ক্রেডিট কার্ড প্রবর্তন একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। কিন্তু দেশে ক্রেডিট কার্ডের জন্য পৃথক নীতিমালা ছিল না।

ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা প্রণয়নকালে গ্রাহকের স্বার্থ চিন্তা না করে ব্যাংকগুলির স্বার্থ চিন্তা করে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার সাধারণ ঋণের চেয়ে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ও নীতিমালা আগামী ১ জানুয়ারি ২০১৮ এর আগে কার্যকর না করার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটির নেতারা।

তারা ব্যাংকগুলির স্বার্থ রক্ষা করে প্রণীত নীতিমালা বাতিল করে সাধারণ ঋণের মতোই সুদের হার নির্ধারণ, গ্রাহক হয়রানি বন্ধ ও ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করে দ্রুত নীতিমালা বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন।

ক্যাব নেতারা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেন, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুসারে দেশের ভোক্তাদের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকার বা যেকোনো কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী স্বার্থ সংক্রান্ত হলে যেরকম এফবিসিসিআই বা চেম্বারের মতামত নিয়ে থাকেন, সেভাবে ভোক্তা সংক্রান্ত বিষয় হলে ক্যাব এর মতামত নেয়ার বিধান থাকা সত্বেও সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সে বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে তাদের মতো করে ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতাদের সাথে নিয়ে সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা ভোক্তা সংসরক্ষণ আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন।

বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক হলেও ব্যাংকগুলি এ সমস্ত গ্রাহকদের কোন বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান না করে এ খাতে নামে-বেনামে বিভিন্ন হিডেন চার্জ যুক্ত করে সাধারণ ঋণের দ্বিগুণ সুদ আদায় করছে। ভোক্তাদের হয়রানি বিষয়ে প্রতিনিয়ত অভিযোগ জমা করলেও সেগুলি আমলে না নিয়ে জনগণের পকেট কাটছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও তারা সাধারণ জনগণ ও ভোক্তাদের স্বার্থ না দেখে গুটিকয়েক ব্যবসায়ীদের স্বার্থে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন করার কারণে দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হরিলুট হয়েছে। আর এ হরিলুটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ও কম নয়।

বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, ব্যাংকগুলি দাবি করে আসলেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের বিষয়টি তারা যেভাবে প্রচার করছে, তা শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়। কারণ কোন ব্যাংক গ্রাহকের স্থায়ী আমানতের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের আর্থিক ক্রয়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে বিনা জামানতে ঋণ পাবার সুযোগ নেই। ব্যাংকগুলির কার্যক্রম যথযাথ নজরদারি ও পরীবিক্ষণে দুর্বলতা ও অনিয়মের কারণে ব্যাংক ও আার্থিক খাতে বারবার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে মাঠ পর্যায়ে যেভাবে নজরদারি বাড়ানো দরকার, একইসাথে ভোক্তাদের অভিযোগগুলি অধিক গুরুত্ব সহকারে নিস্পত্তি হওয়া দরকার এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে নীতি প্রণয়নে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আসবে এবং সুশাসন নিশ্চিত হবে।

বিবৃতিতে নেতারা আরো বলেন, ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার নিয়ে বর্তমান নীতিকে কাবুলিওয়ালা মডেল বলতে হবে। কারণ গ্রাহক সে ছোট হোক আর বড় যা-ই হোক সকলের জন্য একই নীতি হওয়া বাঞ্চনীয়। আর ছোট গ্রাহক হবার কারণে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ আদায়ের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। সেকারণে সাধারণ ঋণের মতোই এই ঋণের সুদ হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল, কিন্তু ব্যাংকগুলি তা না করে ক্রেডিট কার্ডের অধিকাংশ গ্রাহক মধ্যবিত্ত, সীমিত আয় ও চাকরীজীবিদের ওপর অন্যায়ভাকে সুদের বোঝা চাপাচ্ছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটা আর্থিক খাতে সুশাসনের পরিপন্থি।

ব্যাংকগুলি প্রস্তুতি নিতে পারেনি বলে যে দাবি তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে করেছেন এটা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এখন সুদের হার বাড়াতে বলে তাহলে তারা দিনে দিনে বাড়িয়ে দিবে। তাই তাদের এ অখাট্য যুক্তিতে সায় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকে উচিত হয়নি বলে মতপ্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন-ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সহ-সভাপতি হাজী ইকবাল আলী আকবর ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক এএম তৌহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান প্রমুখ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম