বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা গরু কোরবানি দেয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।বিশেষ পদ্ধতিতে পালন করা এসব গরু মূলত শহুরে ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হলেও, সেগুলো নিয়ে আসা হয় বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত বাজার থেকে।
পালনকারী ও বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে প্রচলিত ধরণের গরুর চেয়ে এ ধরণের গরুর দাম একটু বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ায়, তারাও প্রতি বছর গরু পালনের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। ঢাকার কাছে সাভারের বইলাপুরের বনগাঁও গ্রামে আনোয়ারুল আমিন মাসুমের গরুর খামারে এই মূহুর্তে মোট ৩৪টি গরু আছে।
উঁচু প্রাচীর তোলা ফার্মে ঢুকতেই গোবরের গন্ধ নাকে লাগে। টিনশেড গোয়াল ঘরে সারি বেধে দাড়িয়ে থাকা গরুগুলোর বিশেষত্ব হলো তাদের অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে, ঈদে কোরবানি দেবার জন্য। কিন্তু অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা মানে কি?
মিঃ আমিন ব্যাখ্যা করছেন এভাবে, “এ পদ্ধতিতে কোন ধরণের মেডিসিন ব্যবহার না করে, স্টেরয়েড জাতীয় খাবার না খাইয়ে যে গরুটা পালছেন, এটাই অর্গানিক গরু। খড়, ঘাস, ভুষি, তারপর ভুট্টার সাইলেজ খাইয়ে পালন করি আমরা গরুগুলোকে।”
মিঃ আমিন বলছেন, দুই বছর আগে তিনি প্রথম কোরবানির সময়ে অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা গরু বিক্রি শুরু করেন। এবং এসব গরুর চাহিদাও বাড়ছে।
একই কথা বলছেন, বেঙ্গল মীটের বিপণন বিভাগের প্রধান মেহেদী সাজ্জাদ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে।
“মানুষের মধ্যে একটা সাধারণ সচেতনতা আছে তারা কৃত্রিম পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা গরু কিনতে চায় না। এখন অনেক ব্যবসায়ী মেডিসিন দিয়ে মোটাতাজা করে, সেটা চায় না মানুষ। বরং এখন অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা গরুর চাহিদা বাড়ছে। কত শতাংশ সেটা বলা মুশকিল, কিন্তু আমরা দেখছি প্রতি বছর এটি বেড়েই চলেছে।”
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ঠিক কতগুলো খামারে অর্গানিক পদ্ধতিতে গরু পালন করা হচ্ছে তার সঠিক হিসেব নেই, কারণ বেশির ভাগ খামার কেবল ঈদের সময়ের জন্য এ ধরণের গরু পালন করে থাকে। তবে, বেঙ্গল এবং কাজী গ্রুপের মত বড় খামারগুলোতে বছরজুড়ে মাংস বিক্রির জন্যও এ পদ্ধতিতে গরু পালন করা হয়।
সাধারণত অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা গরুর দাম, কোরবানির হাটে ওঠা একই ওজনের অন্য গরুর চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হয়। খামারিরা বলছেন, তার কারণ স্টেরয়েড বা গরু মোটা তাজাকরণের জন্য অস্বাভাবিক কিছু ব্যবহার না করে, বিশেষ খাবার ও রুটিন মেনে গরু পালনের জন্যই এর দাম বেশি হয়।
তবে, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক লামিয়া আসাদ বলছেন, অর্গানিক গরুর দাম সাধারণ ক্রেতাদের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব।
“প্রথমত আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে, কারণ বাজারে গরু কিনতে এসে আমরাই তো মোটা বেশি ওজন এমন গরু কিনতে চাই। কিন্তু দেশী গরুর ওজন তো ওভাবে হুট করে বাড়ে না, ফলে দেখা যায় সেটার চাহিদা কমই থাকে।”
“আবার অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা গরুকে যেসব জিনিস খাওয়ানো হয়, সেসবও তো আমাদের দেশেই তৈরি হয়, ফলে সেসবের জন্য দাম না বাড়িয়ে দামটা আরেকটু কম রাখা যায়। একই সঙ্গে সরকারকেও এ খাতে ভর্তুকি দিয়ে খামারিদের উৎসাহিত করতে হবে।”
বাংলাদেশের পশুপালন মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে গরু পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু একই সঙ্গে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তারা চেষ্টা করছে, যাতে ঈদের সময় মানুষ বুঝেশুনে পশু কেনে। তাতে অর্গানিক গরুর খামারিরাও হয়তো আরো উৎসাহিত হবেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫ এপ্রিল ২০২১