অল্প জায়গায় দেশি মুরগি পালন করবেন যেভাবে

535

আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ ফিড বা বাজারের রেডি ফিড খাইয়ে বড় করা দেশি মুরগি আর চেহারায় বা স্বাদে দেশি মুরগির মতো থাকে না। ফলে বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায় না।

প্রাকৃতিক উপায়ে বড় হওয়া দেশি মুরগি আর শুধু ফিডনির্ভর দেশি মুরগির স্বাদে আকাশ-পাতাল তফাত থাকে। দেখতেও দেশি মুরগির মতো চঞ্চল ও স্লিম লাগে না। শরীরও তেমন চকচকে হয় না।

এ ধরনের বিড়ম্বনা এড়াতে যতোটা সম্ভব দেশি মুরগি পালনে বাজারের ফিড নির্ভরতা কমাতে হবে। আবদ্ধ অবস্থায় পালন করলেও বেশ বড় জায়গা নিয়ে করা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয়, ফ্রি রেঞ্জে অর্থাৎ একটি ঘেরা মাঠে ছেড়ে দিয়ে পালন করা। এতে কিন্তু উৎপাদন খরচ কমে যায়, আবার দেশি মুরগির আদল, আচরণ ও স্বাদ বজায় থাকে। ফলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।

যদি যথেষ্ট জায়গা না থাকে তাহলে নিচের পদ্ধতিটি অনুসরণ করা যেতে পারে:

সাধারণত ফার্মে বাচ্চার এক মাস বয়স পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা আলোতে রেখে ব্রয়লার স্টার্টার খাওয়ানো হয়।

২য় মাস থেকে আলোতে রাখা হয় ১৪-১৬ ঘণ্টা আর খাবার দেওয়া হয় ধান, গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, প্রোটিন/ফিশমিল ও কাঁচা ঘাস।

 

সাধারণত ৬০ কেজি ভুট্টা ভাঙ্গার সাথে ২০ কেজি ধান, ২০ কেজি গম, ২ কেজি লবণ একত্রে মিক্স করা হয়। এই মিক্সার সিদ্ধ করে ঠান্ডা করার পর প্রতি ১ কেজি মিক্সারের সাথে ৮০-৯০ গ্রাম প্রোটিন/ফিসমিল মাখিয়ে নিতে হবে। নিচের টেবিল দেখুন:

খাদ্য উপাদান পরিমাণ
ভুট্টা ভাঙা (কেজি) ৬০
ধান (কেজি) ২০
গম (কেজি) ২০
লবণ (কেজি) ২

১ মাস বয়সের প্রতি পিস দেশি মুরগির বাচ্চার জন্য ১ম সপ্তাহে ৩০ গ্রাম করে এই মিক্সার দিত হবে। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫ গ্রাম করে খাবার বাড়াতে হবে। এই খাবারের সাথে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দিতে হবে। ৩১ দিন বয়স থেকে বিক্রি করার আগে পর্যন্ত এই মিক্সারই চলবে।

এভাবে একটা দেশি মুরগি ১ম মাসে মোট ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ব্রয়লার স্টার্টার, ২য় মাসে ওই মিক্সার ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম এবং ৩য় মাসে ১ কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৭০০ গ্রাম খাবার খায়।

এ খাবার খেয়ে একটা দেশি মুরগি ৮০ থেকে ৮৫ দিনে গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।

মনে রাখতে হবে, ৭০ দিন বয়সের পর থেকে দেশি মুরগির গ্রোথ খুব কম হয়। সুতরাং দেশি মুরগি ৮০০ থেক ৯০০ গ্রাম ওজন হওয়ার পর দ্রুত বিক্রি করে দেওয়া ভালো।

গুরুত্বপূর্ণ নোট: আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা দেশি মুরগির কৃমির সমস্যা বেশি হয়। তাই বাচ্চার বয়স ৪৫ দিন পার হওয়ার পর অবশ্যই কৃমির ডোজ দিতে হবে।

ঘরে খাদ্য তৈরির নিয়ম

গম বা ভুট্টাকে প্রথমে মিলিয়ে ভেঙে নিতে হবে। খৈলকেও (সরিষা বা সয়াবিন) ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে। খাদ্য উপকরণ মাপার পাল্লা ব্যবহার করতে হবে। খাদ্য তৈরির জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।

>প্রথমে গম বা ভুট্টা মেপে মেঝেতে ঢালতে হবে।

>তারপর চালের মিহিকুঁড়া ও গমের ভুসি, ভুসির ওপর শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তার উপর খৈল ও সয়াবিন মিল ঢালতে হবে।

> এভাবে সবগুলো উপকরণ ঢালার পর খাদ্যের স্তূপটিকে একটি পিরামিডের মতো দেখা যাবে।

>এবার ঝিনুকের গুঁড়া, হাড়ের গুঁড়া ও লবণ ওই পিরামিডের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে।

>এবার আধা কেজি খাদ্য আলাদা করে নিয়ে তার মধ্যে ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স উত্তমরূপে মেশাতে হবে।

>এরপর মিশ্রিত ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স পিরামিডের ওপর সমস্ত খাদ্য ছিটিয়ে দিতে হবে।

>সয়াবিন তেল দেওয়ার দরকার হলে তা পিরামিডের চারদিকে ঢেলে দিতে হবে।

>এবার খাদ্যে স্তূপটির ভেতরে বারবার হাত ঢুকিয়ে সবগুলো উপকরণ ভালো ভাবে উলট পালট করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রিত এ খাদ্য বাদামি রঙের দেখাবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৮ নভেম্বর, ২০২২