আগাছানাশকের কারণে ক্যান্সার হওয়ার দায়ে মার্কিন অ্যাগ্রোকেমিকেল কোম্পানি মনসান্টোকে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করেছেন আদালত। ওই কোম্পানির একটি আগাছানাশক রাসায়নিক ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মার্কিন এক নাগরিককে এই জরিমানার টাকা দেবে মনসান্টো।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্কুলে মালী ডিউয়েন জনসনের দায়ের করা মামলায় সান ফ্রান্সিসকোর একটি আদালত শুক্রবার (১০ আগস্ট) এই রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, মনসান্টোর আগাছানাশক রাসায়নিক ‘রাউন্ডআপ’ ও ‘রেঞ্জারপ্রো’তে রয়েছে গ্লাইফোসেট। এই দুই পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হলেও কোম্পানিটি এ বিষয়ে গ্রাহকদের সতর্কবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, সান ফ্রান্সিসকোর আদালতের এই রায়ের ফলে সম্প্রতি জার্মান বেয়ার এজি’র কিনে নেওয়া মনসান্টোর বিরুদ্ধে আরও মামলার পথ সুগম করে দেবে। কারণ জনসনের মতো আরও প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন নাগরিক মনসান্টোর রাউন্ডআপ ও রেঞ্জারপ্রো ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্লাইফোসেটের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে এই প্রথম কোনো আইনি লড়াই রায়ের মুখ দেখলো। যদিও মনসান্টো দাবি করছে, গ্লাইফোসেট কোনোভাবেই ক্যন্সারের কারণ নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবে বলেও জানিয়েছে। রায়ের পর আদালত চত্বরে মনসান্টোর ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট প্যাট্রিজ বলেন, বিচারকরা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার বেনিশিয়ার একটি স্কুলে মালী হিসেবে কাজ করেন ডিউয়েন জনসন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিয়মিতভাবে মনসান্টোর আগাছানাশক রেঞ্জারপ্রো ব্যবহার করে আসছেন। ২০১৪ সালে তার নন-হজকিন’ন লিম্ফোমা ধরা পড়ে।
বিচারকরা রায়ে বলেন, ডিউয়েন জনসনের জীবনঘাতী এই রোগে মনসান্টোর ওই রাসায়নিকের ‘উল্লেখযোগ্য’ ভূমিকা রয়েছে। প্রায় আট সপ্তাহের শুনানির পর রায়ে মনসান্টোকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আরও প্রায় ৪ কোটি ডলার দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
আদালতের রায়ে সন্তোষ জানিয়ে বাদী জনসনের আইনজীবী ব্রেন্ট উইনসার বলেন, মনসান্টোর ওই পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা সঠিক ছিলাম বলেই মামলায় মনসান্টোর বিরুদ্ধে জয় পাওয়া সহজ হয়েছে।
রায়ের পর এক বিবৃতিতে মনসান্টো জানিয়েছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত জনসন ও তার পরিবারের প্রতি তারা সমব্যাথী। তবে তাদের পণ্য গত ৪০ বছর ধরে নিরাপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এই পণ্যের পক্ষে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই রায়ের অর্থ এই নয়, গ্লাইফোসেট ক্যান্সারের কারণ নয়- এ সংক্রান্ত ৮০০ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যালোচনা বদলে যাবে। মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা এজেন্সি, মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো গ্লাইফোসেটকে ক্যান্সারের জন্য নিরাপদ বলে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটাও এই রায়ের ফলে বদলে যাবে না। বিবিসি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন