আগাম কামরাঙ্গা চাষ করবেন যেভাবে

1037

বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই চোখে পড়ে পাখিদের অত্যন্ত প্রিয় কামরাঙ্গা ফলকে। এদেশের দেশি জাতের যেসব কামরাঙ্গা জন্মে তার কাঁচা ফল বেশ টক, পাকলে কিছুটা মিষ্টি হয়। ইদানিং বিদেশি এক প্রকার জাত এসেছে যা স্বাদে মিষ্টি। কামরাঙ্গার আদি বাসস্থান মালাক্কা। মাঝারি আকৃতির কামরাঙ্গার ডালপালা বেশ ঝোপালো হয় এবং শক্ত। ৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে থোকা থোকা হালকা গোলাপি রঙের ফুল হয়। জুন-সেপ্টেম্বর মাসে ফুল আসে এবং সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফল পাঁকে।

ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে। বীজের গাছে ৩-৪ বছরের মধ্যে ফুল আসে। পূর্ণবয়স্ক গাছে বছরে ৬০০-৮০০ টি ফল পাওয়া যায়। গরম ও আদ্র জলবায়ু কামরাঙ্গা চাষের উপযোগী।

বালিমাটি ছাড়া যে কোন মাটিতে কামরাঙ্গা চাষ করা যেতে পারে। কলম রোপপনের মাধ্যমেও কামরাঙ্গার বংশবিস্তার করা যায়। কামরাঙ্গা চাষের জন্য তেমন সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। বছরে একবার সার দেয়াটাই যথেষ্ট। কামরাঙ্গার জাত সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আমাদের দেশে টক, মিষ্টি এবং বারোমাসী এই তিন জাতের কামরাঙ্গা বেশি পরিচিত। কামরাঙ্গা ফল থেকে জ্যাম, জেলি, মোরব্বা, চাটনি ও আচার তৈরি করা হয়। কামরাঙ্গা একটি রপ্তানিযোগ্য ফল হওয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর চাষ হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

পুষ্টি ও ভেষজগুণ :
কামরাঙ্গায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে। ভক্ষণযোগ্য ১০০ গ্রাম পাকা কামরাঙ্গায় ৮৮.৬ ভাগ জলীয় অংশ, ০.৪ গ্রাম খনিজ লবণ, ০.৭ গ্রাম অাঁশ, ০.৭৫ গ্রাম আমিষ, ৯.৫ গ্রাম শর্করা, ১১.০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.২ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ৫০ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি রয়েছে। কামরাঙ্গার পাকা ফল বাতনাশক, বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ ও অর্শ্বরোগের জন্য উপকারী। পাতা ও ডগার গুঁড়া সেবনে জলবসন্ত ও বক্র কৃমি নিরাময় হয়।

রোপণ পদ্ধতি :
সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা আয়তকার এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে চারা রোপণ করা হয়।

রোপণ সময় :
চারা বা কলম রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য ভাদ্র মাস। তবে সেচ সুবিধা থাকলে আশ্বিন-কার্তিক মাস পর্যন্ত চারা বা কলম রোপণ করা যেতে পারে।

গর্তের আকার :
কামরাঙ্গার চারা রোপণের জন্য ১মি: ১মি: ১মি: আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে।

গর্তে সার প্রয়োগ :
চারা রোপণের জন্য প্রতি গর্তে ১৫ থেকে ২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং ১০০ গ্রাম জিপসাম গর্তের মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে এবং পানি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে।

চারা রোপণ :
গর্তের মধ্যখানে চারা বসিয়ে গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে। চারা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে একটি শক্ত কাঠিতে বেঁধে দিতে হবে। তারপর সেচ দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ ও পানি নিকাশ : চারা রোপণের পর এক মাস নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে এবং ফল ধরার পর প্রতি ১৫ দিন পর পর অন্তত ২ থেকে ৩ বার সেচ দিলে ফল ঝরার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মৌসুমে বাগানে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফল সংগ্রহ :
ফল পাকার পর গাছে বেশিদিন থাকে না; এক সপ্তাহের মধ্যেই ঝরে পড়ে। তাই সামান্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই হাত দিয়ে বা জাল লাগানো কোটার সাহায্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে।

ফলন :
উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টন কামরাঙ্গার ফলন পাওয়া সম্ভব।

সতর্কতা:
কামরাঙ্গাতে আছে এমন একটি উপাদান যা মানবদেহের মস্তিষ্কের জন্য বিষ। সাধারণ মানুষেরা কামরাঙ্গা খেলে, কিডনি তা শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু কিডনি রোগীর দুর্বল কিডনি শরীর থেকে এই বিষ বের করে দিতে সক্ষম নয়। এর ফলে তা রক্ত থেকে আস্তে আস্তে দেহের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং বিষক্রিয়াও ঘটাতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২১ এপ্রিল ২০২১