টমেটো একটি অতি উপাদেয়, সুস্বাদু ও উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফলিক এসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে ১২ মাসই টমেটো চাষ হয়ে থাকে। টমেটোর মৌসুমে টমেটোর দাম খুব কম হলেও বছরের অন্যান্য সময় টমেটোর দাম থাকে আকাশচুম্বী। সামনে শীতকাল টমেটোর ভরা মৌসুম কিন্তু তখন টমেটোর দাম থাকবে অনেক কম। তবে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে এবং বাড়তি শ্রম দিয়ে আপনিও আশাতীত লাভবান হতে পারেন। যেটা আপনাকে করতে হবে তা হল এখনই টমেটো গাছ রোপন করতে হবে। তাহলে বাজারে পর্যাপ্ত টমেটো ওঠার আগেই আপনার টমেটো বাজারজাত করবেন ফলে উচ্চ মূল্য পাবেন এবং অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। এভাবে চাষে বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করা যায়।
জাত নির্বাচন:
আগাম টমেটো চাষের জন্য জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য যে জাতগুলো সবচেয়ে ভালো সেগুলো হল:
বিনা টমেটো ৩
বিনা টমেটো ৪
বারি টমেটো ৪
বারি টমেটো ৫
বারি টমেটো ৬ (চৈতী)
কনক
আগাম টমেটো চাষ:
আগাম টমেটো চাষ করার জন্য প্রধান প্রধান জাত হচ্ছে বিনাটমেটো ৩, বিনাটমেটো ৪, বারিটমেটো ৪, বারিটমেটো ৫ এবং বারিটমেটো ৬ (চৈতী)। পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাত চাষ করা হয়। একটি ছাউনি ২০ মিটার ´২.৩ মিটার আকৃতির হলে ভালো। ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া ২টি বীজতলায় লম্বালম্বিভাবে ১টি করে ছাউনির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছাউনির খুঁটির উভয় পাশের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার এবং মাঝখানের খুঁটির উচ্চতা ২১০ সেন্টিমিটার হতে হবে। জমি নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হয়। ২টি ছাউনির মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার চওড়া নিকাশ নালা রাখলে ভালো হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বীজতলা রাখতে হবে।
বীজতলা:
জমি থেকে বীজতলার উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার রাখা দরকার।
২টি বীজতলার মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ৪টি সারি রাখতে হবে।
চারা রোপণ:
২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারিতে রোপণ করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার রাখলে ভালো হবে।
আগাম ফসল:
গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জন্য টমাটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। হ্যান্ড স্প্রেয়ারের সাহায্যে ৫ চা চামচ (প্রতি লিটার পানিতে) টমাটোটোন শুধু ফুটন্ত ফুলে ৮ থেকে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হয়। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সারা বছর টমেটো চাষ করা সম্ভব। টমাটোটোন দ্বারা উৎপাদিত ফলে বীজ হয় না।
পোকা দমন:
শোষক পোকা এবং জাবপোকা গাছের রস শোষণ করে। শোষক পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন, সেভিন কিংবা নেক্সিয়ন এবং জাবপোকা দমনের জন্য এফিডান ডাস্টিং (৫%) কিংবা সেফস, নেক্সিয়ন ও ডাইব্রম ব্যবহার করতে হয়।
রোগ দমন:
টমেটোর ৩টি রোগ গুরুত্বপূর্ণ। ঢলে পড়া রোগ, টমেটো মোজাইক ভাইরাস এবং ফিউজেরিয়াম উইল্ট। ঢলে পড়া রোগে গাছে ফুল আসার আগেই ঢলে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করা, আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী ৪-৫ বছর টমেটো, আলু, মরিচ ও বেগুন চাষ না করা এবং প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা। মোজাইক রোগে পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছ ও ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়। সুস্থ গাছে কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা দ্বারা ভাইরাস বহনকারী পোকার আগমন প্রতিরোধ করতে হয়। ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগে গাছ ঢলে পড়ে। পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতা ভেতরের দিকে বেঁকে আসে। এ রোগ মাটির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়।
শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
রোপণের ২-৩ মাস পর থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। রঙিন নয় এরূপ টমেটো ১০ থেকে ১৫.৫০ সে. তাপে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। পাকা টমেটো ৫০০ সে. তাপে ১০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮ডিসেম্বর২০২০