আগাম শিমের ভালো ফলন, দামও ভালো

798

শিম-চাষ

চুয়াডাঙ্গা থেকে সেলিম: এ বছর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় চুয়াডাঙ্গায় শিমের আগাম আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। আবাদে সময় কম লাগার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়দি এই সবজির ফলনও মিলেছে ভালো। এর সঙ্গে ন্যায্য দাম পাওয়ায় চাষিরা সন্তুষ্ট। তাই চুয়াডাঙ্গার চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শিমের আগাম আবাদ।

শীত না এলেও তাই জেলার বেশকিছু গ্রাম এখন সেজেছে সবুজের আবরণে। বিকেল হলেই এখানকার কৃষক পরিবারগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিম গাছের পরিচর্যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদরের শিমচাষি আবু হানিফ জানান, তিনি কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করছেন। এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে আগাম শিম চাষ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে কয়েক মণ শিম বিক্রিও করেছেন। আশা করছেন, বিঘাপ্রতি কমপক্ষে এক লাখ টাকার শিম বিক্রি হবে। বাজার ভালো থাকলে এ বছর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

একই গ্রামের শিমচাষী মনু মিয়া, এনাফ বিশ্বাস, বোরহান, আমিরুল, মালেক মেম্বর, ফারুক, চান্দু, কাশেম, মালেক বিশ্বাস, মনির হোসেন, শুকুর আলীসহ বেশকিছু চাষি শিম চাষ করে বদলে নিয়েছেন নিজেদের ভাগ্য। তারা জানান, শিম চাষ করতে হাতে-কলমে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি। নিজ উদ্যোগে শিখে নিয়ে এ চাষ করছেন তারা। তাদের দেখাদেখি অন্য চাষিরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন শিম চাষে। তাদের অনেকেই করছেন আগাম জাতের শিমের আবাদ।

কৃষকরা জানালেন, বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ মিলিয়ে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল ও ফল ধরার সময় পোকা দমন ও পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ স্প্রে করতে হয়। ৫০ থেকে ৫৫ দিনে গাছে শিম ধরতে শুরু করে। তবে শিম চাষের বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় উৎপাদন ব্যয় আগের বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তারা।

চুয়াডাঙ্গার গ্রামগুলোতে উৎপাদিত শিম বিক্রি করতে অন্য এলাকায় যেতে হয় না বলেও জানালেন কৃষকরা। তারা বলেন, রাজধানী শহর ঢাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে তাদের কাছ থেকে শিম কিনে নিয়ে যান। অনেকেই আবার শিম তার জমি থেকে তুলে পাশের বাজারেও বিক্রি করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর জানান, এলাকার জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপোযোগী। এ জেলার চাষিরা শিমসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে থাকেন। এ বছর শিমের বাজার বেশ ভালো। প্রথম দিকে কেজি প্রতি বাজার দর ১০০ থেকে ১১০ টাকা হলেও বর্তমানে শিম ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কেবল শিম নয়, সবজি চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের বেশ সুনাম রয়েছে। বরবটি, বেগুন, ধনিয়া পাতা, ফুল কপি, কাকরোলসহ বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদের দেখা মিলবে এই জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় মোট জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৭ হাজার হেক্টর। এ জেলায় ফসল হিসেবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ভুট্টার। আবাদের এর পরেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। আবহাওয়া তুলনামূলক অনুকূল এবং জমি উঁচু ও সমতল হওয়ায় এই জেলা সবজি চাষের জন্য উপযোগী। আর প্রতিবছরই কোনো না কোনো ধরনের সবজির আগাম চাষ করে থাকেন এ জেলার চাষিরা। এর মধ্যে শিমের আগাম আবাদে আগ্রহ বাড়ছে জেলার চাষিদের।

কৃষকরা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে এলাকার চাষিদের উন্নত কৃষি প্রযুক্তির আওতায় আনতে পারলে শিমসহ সবজি চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভালো ভূমিকা রাখবে। যদিও জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। সূত্র: এসবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন