আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে উৎপাদন কয়েকগুণ বেশি

591

চিংড়ি

খুলনা থেকে: খুলনা অঞ্চলে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি চাষে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে আধুনিক প্রযুক্তির আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ। ইতোমধ্যেই আধুনিক এ পদ্ধতির চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন অনেক চাষি।

সনাতন পদ্ধতিতে মাত্র ৩ থেকে ৪শ কেজি চিংড়ি উৎপাদিত হলেও আধুনিক এই পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। মৎস্য বিভাগের সহায়তায় এ পদ্ধতিতে বছর জুড়ে চাষাবাদের সুবিধার কারণে অধিক লাভের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের। তাই বিনা সুদে ব্যাংক ঋণ ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ সরকারের সাবির্ক সহযোগিতা পেলে আগামী ১০ বছরে চিংড়ি খাতে রফতানি আয় ছয়-সাতগুণ বৃদ্ধির প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

মৎস্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়, দেশের চিংড়ি রফতানির শতকরা আশি ভাগই সরবরাহ হয় খুলনাঞ্চলের চিংড়ি ঘের থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের চাষিরা সনাতন পদ্ধতির চাষে ধারাবাহিকভাবে ভাইরাসসহ নানা কারণে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। এতে অনেকে চিংড়ি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে বাগদা চিংড়ি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়।

গত ৫ বছরে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলায় দশ হাজার হেক্টর জমিতে ছয় শতাধিক আধুনিক প্রযুক্তির আধানিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি খামার গড়ে উঠেছে। আর বর্তমানে খুলনা জেলার ৫১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪৪ দশমিক ২৩ হেক্টর জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। আধানিবিড় পদ্ধতিতে ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধি, আধুনকি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি পানি শোধন করে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষিত পোনা ছাড়া এবং নিয়মিত সুষম খাবার প্রদান ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এতে প্রতি হেক্টর ঘেরে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ছয় থেকে সাত হাজার কেজি চিংড়ি। যা সনাতন চাষের তুলনায় ৮/১০ গুণ বেশী। এতে অধিক লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের এ প্রযুক্তিতে।

বটিয়াঘাটা উপজেলার মৎস্য চাষি খায়রুল ইসলাম সজিব বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে ২০১৬ সালে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু করি। এতে লাভবান হওয়ায় জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১০ বিঘায় উন্নীত করেছি । এ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে পানি রোলিং করে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করা হয়। ঘেরে এ্যারোসন মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে শুধু আমিই নয়, অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ অনেক সম্ভাবনাময় হলেও কারিগরি জ্ঞান ও পুঁজির অভাবে বেশীরভাগ চাষী এই পদ্ধতির চাষ শুরু করতে পারছেন না বলে তারা মন্তব্য করেন। খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা, স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় আধুনিক পদ্ধতির আওতায় আনা গেলে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বটিয়াঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল মামুন জানান, আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে চাষিরা লাভবান হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত চিংড়ি চাষির সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে উপজেলার ৬৫ হেক্টর জমিতে ১০৪ জন মৎস্য চাষি এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করছেন। যেখানে গত বছর ছিল মাত্র ৩৫ জন চাষী। তিনি বলেন, সনাতন পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে প্রায় ২০ গুণ বেশি উৎপাদন হয়। উদাহরণ স্বরুপ তিনি বলেন, যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ৪শ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়, সেখানে দুই সেশনে আধানিবিড় পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ জানান, আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে চাষিরা অধিক লাভবান হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বছরে দু’বার চিংড়ি চাষ করা যায়। বর্তমানে খুলনা জেলায় ৫১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪৪ দশমিক ২৩ হেক্টর জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। চিংড়ি ঘেরের আধুনিকায়নে কৃষকদের উৎসাহিত করতে ধারাবাহিক চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন