আলু বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। সাধারণত ধান ও গমের পরই আলুর স্থান। বর্তমান চাষের জমির পরিমাণ ও ফলনের হিসেবে ধানের পরই আলুর স্থান। একেক সময়ে একেক জমিতে সর্বাধিক উৎপাদনের কারণে দিন দিন আলু চাষে জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে। তবে এখনও আলুকে আমাদের দেশে সবজি হিসেবে চিন্তা করা হয়। যদিও আলুর বহুবিধ ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। চিপস্, ক্রিপস, ফ্লেক্স, ফেন্সফ্রাই, স্টার্চ তৈরিতে আলু ব্যবহার হচ্ছে এবং দিন দিন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। রপ্তানির মাধ্যমে আলুর নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আলুর গুরুত্ব অনেক গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলু উৎপাদনের আধুনিক দিকগুলো আলোচনা করা হলো।
মাটি নির্বাচন: যে কোনো মাটিতে আলু চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য উত্তম। উঁচু থেকে মাঝারি উচুঁ জমি যেখানে সেচ ও নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে সে সকল জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিটি অবশ্যই রৌদ্র উজ্জ্বল হতে হবে। মাটিতে জো আসার পর আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে প্রস্তুত করতে হবে। আড়াআড়িভাবে কমপক্ষে ৪টি চাষ দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে বড় মাটির ঢেলা না থাকে এবং মাটি ঝুরঝুরে অবস্থায় আসে। কারণ বড় মাটির ঢেলা আলুর সঠিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং অনেক সময় অসম ও বিকৃত আকার তৈরি করে। জমি তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে জমিতে সুষম সেচ প্রয়োগ করা যায়। সে জন্য জমির উপরিভাগ সমতল করতে হবে।
জাত পরিচিতি: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত আলুর মোট ৮৩টি জাত অবমুক্ত করেছে যার মধ্যে খাবার আলু, প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী আলু, রপ্তানিযোগ্য আলু, আগাম আলু ও সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় এমন আলুর জাত আছে। খাবার আলুর জন্য ডায়মন্ট, কার্ডিনাল (ফলন: ২৫-৩৫টন/হেক্টর); আগাম জাত হিসেবে গ্রানোলা, বারি আলু-৭৪, ৭৫ (ফলন: ২০-৪০টন/হেক্টর); রপ্তানি উপযোগী গ্রানোলা, বারি আলু-৪৬ (ফলন: ২০-৩৫ টন/হেক্টর); প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী এসটেরিক্স, লেডি রোসেটা, কারেজ, মেরিডিয়ান (ফলন: ২০-৩৫ টন/হেক্টর); মড়ক রোগ প্রতিরোধী বারি আলু-৪৬, ৫৩, ৭৭, এ্যালোটি, ক্যারোলাস (ফলন: ৩০-৪০ টন/হেক্টর); দীর্ঘ সময় দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায় আইলসা, প্রোভেন্টো, বারি আলু-৬২, ৭৬ (ফলন: ৩০-৪০টন/হেক্টর); তাপ সহিষ্ণু বা দেরিতে রোপণ উপযোগী বারি আলু-৭২ বা ৭৩ (ফলন: ২০-২৪টন/হেক্টর)।
বীজআলু শোধন: কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজআলু বের করার পর ৪৮ ঘণ্টা প্রি হিটিং কক্ষে রাখতে হবে। বীজআলু বাড়িতে আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বস্তা খুলে ছড়িয়ে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য স্বাভাবিকভাবে বাতাস চলাচল করে এমন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। কারণ বীজ কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করে বস্তা বন্ধ অবস্থায় রাখলে ঘেমে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোল্ড স্টোরেজে রাখার আগে বীজ শোধন না হয়ে থাকলে অঙ্কুর গজানোর আগে বীজআলু দাদ বা স্ক্যাব এবং ব্ল্যাক স্কার্ফ রোগ প্রতিরোধের জন্য ৩% বরিক এসিড দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। এ জন্য ১ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম হারে বরিক এসিড মিশিয়ে বীজআলু ১০-১৫ মিনিট চুবিয়ে পরে ছায়ায় শুকাতে হবে। পলিথিন সিটের উপর আলু ছড়িয়ে ¯েপ্র করেও কাজটি করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন আলুর সব অংশ ভিজে যায়। সাধারণত বিঘা প্রতি অর্থাৎ ৩৩ শতকে ২শ থেকে ২শ ১০ কেজি বীজআলু প্রয়োজন হয়।
রোপণ পদ্ধতি: অঙ্কুর গজানোর পর ১ম কুঁড়িটি ভেঙে দিতে হবে। কারণ ১ম কুঁড়ি ভেঙে দেয়ার পর অন্যান্য কুঁড়ি সমানভাবে বৃদ্ধির সুযোগ পায়। ৩০-৪০ গ্রাম ওজনের আস্ত আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম। কেটেও বীজ লাগানো যেতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিটি কাটা অংশে কমপক্ষে ২টি চোখ বা কুঁড়ি থাকে। বীজ লাগানোর ২-৩ দিন আগে আলু কেটে ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিলে কাটা অংশের ওপর একটা প্রলেপ পড়ে। ফলে মাটি বাহিত রোগ জীবাণু সহজে বীজে প্রবেশ করতে পারে না। অন্যভাবে ছাই মেখেও কাজটি করা যেতে পারে। এতে আলুর পচন অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। প্রতিটি আলু কাটার পর সাবান পানি দ্বারা ছুরি বা বটি পরিষ্কার করা উচিত যাতে রোগ জীবাণু এক বীজ থেকে অন্য বীজে না ছড়ায়। বীজআলু আড়াআড়িভাবে না কেটে লম্বালম্বিভাবে কাটতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ণ অর্থাৎ নভেম্বর মাস আলু রোপণের উপযুক্ত সময়।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/৯জানু২০২০