আনারসে দেয়া হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল

381

আনারস
ময়মনসিংহ থেকে: আনারস গাছে ফুল আসার পর থেকেই শুরু হয় মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ। রাসায়নিক কেমিক্যালে বড় হতে থাকা আনারসে কয়েক দফায় রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগের পর তা বাজারে তোলা হয় ফরমালিন মিশিয়ে। আনারসে অতি মাত্রায় মেডিসিন প্রয়োগে মানুষ পেটের অসুখসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে আনারস কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যত্রতত্র ভাবে আনারসে মেডিসিন প্রয়োগের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানার পরও কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় মেডিসিন ছাড়া আনারস পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে আবাদ হওয়া আনারস চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসের দিকে আনারস প্রাকৃতিকভাবে পাকার কথা থাকলেও মে মাস থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। ইথোপেন ও কার্বাইডে পাকানো এসব আনারস বাজারে তোলার পর মানুষ একবার আনারস কিনে পরে আর আনারস কিনতে চান না। ফলে মৌসুমে দাম কমে আনারসের। এ কারণে আনারস চাষিরা মৌসুম শুরুর আগেই মহাজনদের কাছে আনারসের ক্ষেত বিক্রি করে দেন। মহাজনরা বেশি লাভের আশায় মৌসুম শুরুর আগে আনারস রাসায়নিক উপাদান দিয়ে পাকিয়ে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনারস চাষি জানান, রাসায়নিক উপাদান ছাড়া পাকা আনারস এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি বলেন, এক সময় আনারস বাগানে আনারস পাকার যে মৌ মৌ গন্ধ ছিল এখন তাও নেই। এক সময় শেয়ালে প্রচুর আনারস নষ্ট করতো এখন আনারস ক্ষেতে শেয়াল খুঁজে পাওয়া যায় না।

আনারস চাষি মজনু জানান, সকলেই আনারসে এখন মেডিসিন প্রয়োগ করে আনারস পাকান। আনারস ক্ষেতে কোন চাষিই যদি মেডিসিন প্রয়োগ না করতো তবে আমিও করতাম না।

বিশেষ করে ইথোপেন ও কার্বাইড দিয়ে আনারস পাকালে দেখতে সুন্দর টসটসে হয়। খেতে কখনো টক, কখনো পানসে পাকে ভেতরে আঁশ থাকে ধলা পাকানো। বেশি খেলে পেট খারাপ হয়। শরীর ঘামে মাথা ঘোরে বমিবমি ভাব হয়।

নজরুল নামে এক চাষি জানান, সঠিত মাত্রায় কেমিক্যাল প্রয়োগ দোষের নয়। কিন্তু ক্ষতিকর ক্যামিকেলে পাকিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করা বড় ধরনের প্রতারণা।

আনারস কিনতে আসা পাইকার শফিক জানান, ২০১১ সাল থেকে বেসরকারি উদ্যোগে বেনাপোল বন্দর হয়ে সীমিতভাবে ভারতে আনারস রপ্তানি হত। কিন্তু কেমিক্যাল আনারস পাকানোর বিষয়টি নজরে আসায় আনারস রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন আনারস কিনে ঢাকা, যশোর, রাজশাহী, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় পরিবহন করে থাকি। প্রতিদিন গড়ে এখান থেকে ৫/৬ ট্রাক আনারস কেনাবেচা হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ফুলবাড়ীয়া উপজেলার নাওগাঁও রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে ১২শ ৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়। উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ১২ হাজার ৫শ মে.টন। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

উপজেলা কৃষি অফিসার নারগিস আকতার আনারসে কেমিক্যাল প্রয়োগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আনারসে মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ হয়। আমরা কৃষক পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি মাত্রা ঠিক রাখার জন্য। অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে অভিযান পরিচালনা করা কঠিন কাজ। তারপরও আমাদের চেষ্টার কমতি নেই।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লীরা তরফদার জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন