আপনিও করতে পারেন উন্নত প্রথায় হাইব্রীড পেঁপের চাষ

855

%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a1-%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%81%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b7

পেঁপে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফসল। বাংলাদেশে পেঁপে খুবই জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ। পেঁপের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে- প্রথমত এটা স্বল্প মেয়াদী, দ্বিতীয়ত ইহা কেবল ফলই নয় সব্জী হিসেবেও এর ব্যপক ব্যবহার রয়েছে, তৃতীয়ত পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ঔষধী গুণ সম্পন্ন। এদেশে বর্তমানে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৪৮ হাজার টন। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে।

পেঁপের জাত:
বিভিন্ন ধরনের পেঁপের জাত আছে। তার মধ্যে তাইওয়ান থেকে ২টি হাইব্রীড জাত ও চায়না থেকে ১টি জাত আমাদের দেশে আনা হয়েছে যা অধিক ফলনশীল।

১। রেড লেভী: এই জাতের ফলগুলি বেশ বড়। ফলের রং লাল-সবুজ। এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি। মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। গাছের উচ্চতা যখন ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হয় তখন ফল ধরা শুরু করে। প্রতিটি গাছ ৪০ টির অধিক ফল ধারন করে। এই জাতের পেঁপে গাছ রিং স্পট ভাইরাস রোগে সহ্য ক্ষমতা আছে।

২। নোন ইউ নং-১: এই হাইব্রীড জাতিটিও অধিক উৎপাদনশীল এবং এটাও রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন। এ জাতীয় গাছে তাড়াতাড়ি ফল ধারন করে। ফল বেশ বড়, প্রতিটি ওজন ১.৬ কেজি, মাংস হলুদ বর্ণের, আকারে লম্বা এবং মিষ্টি সুস্বাদু।

৩। মধুবিন্দু: গোলাকার ফল আকারে বড়। কান্ডে ও বৃন্তে কোন দাগ নেই। তাড়াতাড়ি ফলে এবং ফলনও খুব বেশী। অত্যন্ত মিষ্টি ও ভাল গন্ধ আছে। ফলগুলোর খোসা মোটা হওয়াতে পরিবহনে বিশেষ উপযুক্ত।

চাষ পদ্ধতি:

বীজের হার– হেক্টর প্রতি ৭০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০ টি। সে হিসেবে ৩০০০-৩২০০ চারা দিয়ে ১ হেঃ জমিতে পেঁপের চারা লাগানো যায়।

চারা তৈরী– বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ২ ঘন্টা ঠান্ডা জায়গায় রেখে, ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরী করতে হবে।  পলিথিনে ব্যাগে চারা তৈরী করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫×৬ সেঃমিঃ আকারের ব্যাগে সমপরিমার বেলে দোয়াশ মাটি ও পচা  গোবরের মিশ্রন ভর্তি করে, ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১টি এবং পুরাতন বীগ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। একটি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।

চারা রোপণ– ১.৫ থেকে২ মাস বয়সের চারা রোপন করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০×৬০×৬০ সেঃ মিঃ আকারের গর্ত করে রোপণের ১৫ দিন পূর্বে গর্তরে মাটিতে সার মেশাতে হবে। পানি নিস্কাশ্নের জন্য ২ সারির মাঝখানে ৫০ সেঃ মিঃ নালা রাখতে হবে।

সারের পরিমাণ– প্রতি পেঁপে গাছে নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।

রোপণের সময়– চারা লাগানোর প নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এসপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। শেষ ফল সংগ্রহের ১ মাস পূর্বেও সার প্রয়োগ করতে হবে।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা– বাগান সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি কোদাল দিয়ে হালকা করে আলাগা করে দিতে হবে। গাছে অতিরিক্ত ফল ধরলে কিছু ফল পেরে নিয়ে হালকা করে দিলে, বাকি ফলগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায়। গাছের মুকুল বা ফুল আসার সময় ১৫-২০ দিন অন্তর ৩ বার সুরগ্রো স্প্রে করলে বেশ সুফল পাওয়া যায়।

ফল সংরহ:
পেঁপে গাছে সাধারণত ৫-৬ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্যে। পুষ্ট হওয়ার সময়  কোন কোন জাতের ফলে হলুদ রং ধারন করবে। তবে সব জাতের ফল থেকে পানির মত তরল আঠা বের হবে। ফল অপুষ্ট থাকলে দুধের মত ঘন আঠা বের হবে।

ফলন: উপরোক্ত হাইব্রীড পেঁপের জাত থেকে গাছ প্রতি ৪০-১০০টি ফল পাওয়া যায়।
সূত্র: সিদ্দিকীস সীডস্