কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আমন ধানের ক্ষেতে মাজরা পোকার উপদ্রব বেড়েছে। পোকা দমনে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকেরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাঠে মাঠে আলোকফাঁদ পেতে পোকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ১৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশি জমি।
সম্প্রতি উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া, তারাপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব জমির আমন ধানের গাছে ব্যাপকভাবে মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে। মাজরা পোকার আক্রমণের কারণে অধিকাংশ ধানগাছের পাতা মরে হলুদ রং ধারণ করেছে। কোনো কোনো জমির ধানগাছ প্রায় পাতাশূন্য হয়ে মরে যাচ্ছে। মাজরা দমনে কৃষকেরা বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো ধরনের সুফল পাচ্ছেন না।
তারাপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, এবার মাঠে প্রচুর পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ওষুধে কাজ হচ্ছে না। সেজন্যই আলোর ফাঁদ পেতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের গ্রামের মাঠে আমন ধানের গাছে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাজরা পোকার আক্রমণ হয়েছে। পোকা দমন করা না গেলে ধানের ফলনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠের ধানক্ষেতে সরেজমিনে দেখা গেছে, রোপণ করা ধানগাছের চারায় শীষ বের হওয়া শুরু হয়েছে। আক্রমণ করেছে পোকা। মাজরাপোকায় শীষগুলো কেটে দিছে। ফলে চারার মাথায় লালচে ভাব দেখা দিয়েছে। কোথাও লাগানো চারা মরে গেছে। সেগুলো কৃষকরা ছিঁড়ে ফেলছেন। পোকার আক্রমণ রোধ করতে স্প্রে মেশিন দিয়ে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক। কেউ কেউ আবার নিড়ানির কাজ করছেন।
স্থানীয় কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি প্রায় ১৬ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। এ বছর চারা রোপণের পরপরই পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
ছাতিয়ান গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছেন। তার জমিতেও স্থানীয় সারের ডিলারদের পরামর্শে স্প্রে করছেন।
চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়ার কৃষক কাজী তুহিন জানান, এবার পোকার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষক। বারবার স্প্রে করেও পোকা কমছে না। বাজার ভেজাল ওষুধে সয়লাব।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে পোকার আক্রমণ বেশি। কৃষকদের অতিরিক্ত ও ভুল স্প্রে ছিটানোর কারণে পোকামাকড় আরও শক্তিশালী হচ্ছে। সেজন্য আলোকফাঁদ পেতে কোন কোন পোকা আছে, তা নির্ণয় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস করেন, আবহাওয়ার কারণে কিছুটা মাজরা পোকা দেখা দিচ্ছে। মাজরা পোকা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাজরা পোকা শনাক্তে মাঠগুলোয় আলোকফাঁদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।