বর্তমান আম চাষে অনেকেই ঝুঁকছেন। আম চাষ ও আমের চাহিদা দেশে ভালো থাকায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ শুরু করছেন। আম চাষিরা আম চাষ করতে গিয়ে নানান রকম সমস্যায় পতিত হন যার মধ্যে আমের মুকুল ও আমের গুটি ঝরে যাওয়াটা অন্যতম। কিন্তু এই আমের গুটি অনেক কারণেই ঝরে যেতে পারে । আসুন সেসব নিয়ে আলোচনা করি।
পোকার আক্রমণ:
পোকার আক্রমণ আমের গুটি ঝরে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ । কেননা আমের বাগানে একবার পোকার আক্রমণ দেখা দিলে তা অতি দ্রুত সব গাছকেই আক্রান্ত করে ফেলে। পোকা আমের গুটির রস খেয়ে ফেলে ফলে আমের গুটি শুকিয়ে যায়।
পোকার আক্রমণ থেকে যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়ঃ
আমের গুটি মটরদানার মতো হতেই কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একসাথে পানিতে মিশিয়ে গুটিতে স্প্রে করতে হবে। আমের গুটির উপর নির্ভর করে আমের উৎপাদন কেমন হবে তাই পোকা দমনের জন্য কীটনাশকের মধ্যে সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্রুপের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে এবং ছত্রাকনাশকের মধ্যে মেনকোজেব ৮০ ডচ গ্রুপের যেকোনো একটি প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে একসাথে মিশিয়ে গুটিতে স্প্রে করতে হবে।
প্রাকৃতিক কারণে গুটি ঝরে যেতে পারে:
জাতভেদে প্রতিটি আমের মুকুলে গড়ে প্রায় ১০০০-৬০০০ টি স্ত্রী ও পুরুষ ফুল থাকে। মুকুলে ফুলের সংখ্যা অত্যাধিক হলেও কিন্তু বেশিরভাগই ঝরে যায় যারমধ্যে প্রায় ৩০ এর অধিক গুটি অবশিষ্ট থাকে। কেননা বাকি গুটি গুলো প্রাকৃতিক কারণে ঝরে যায়।
গুটি ঝরা রোধে করণীয়:
অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগতমান ও ফলন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলে সে বছর আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার দশ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সব ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
মাটিতে রসের অভাব হলে:
মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়। মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় তাড়াতাড়ি নির্মোচন স্তর গঠিত হয়। ফলে আমের গুটি ঝরে যায়।
প্রতিকার:
মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। যেমন- আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে হালকা সূর্যের আলোতে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।
পরিচর্যা :
আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১০এপ্রিল২০