আমের দাম নেই, দিশেহারা নওগাঁর চাষিরা

323

আমচাসী

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ সংবাদদাতা : সাপাহারের আমিনুল ইসলাম। তিনি একজন আম বাগান মালিক। গত বছরে আমের মূল্য ভালো পাওয়ায় এ বছর আবার কয়েকটি আম বাগান লিজ নিয়ে আম চাষ করেছেন। তিনি চাকরি ছেড়ে আম বাগান করেছেন গত সাত বছর ধরে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও তার সাত বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে। তিনি বিভিন্ন দোকানে বাকিতে সার, কিটনাশক ও ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে আমের বাজারের যে অবস্থা লাভ তো দুরের কথা দোকানের বাকি ও ঋণ পরিশোধ হবে না। এ দুঃচিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

এ রকম শত শত কৃষকের একই অবস্থা। তিনি আরো বলেন, অনেক আমচাষিরা টাকা পরিশোধ করতে না পারার কারণে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কী হবে এসব আমচাষিদের। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন এই আম চাষিদের বেঁচে রাখার জন্য আমের মূল্য বৃদ্ধি করা ও আমগুলো বিদেশে রপ্তানির পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুব জরুরি।

আমের দ্বিতীয় রাজধানী নওগাঁর ঠা ঠা বরেন্দ্র অঞ্চল। এই অঞ্চলের পত্নীতলা, সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর মূলত এই কয়েকটি উপজেলায় রয়েছে দিগন্তজোড়া আমের বাগান। এই অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েকটি প্রজাতির আম এক সঙ্গে নামার কারণে গত বছরের তুলনায় এই বছর আমের মূল্যে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এবার আমের বাম্পার ফলন হলেও উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় দিশেহারা আমচাষিরা। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

আবার অনেকে বাগান কিনে ব্যাপক দরপতনের ফলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় ঋএণর টাকা পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন এলাকা ছেড়ে।

বাগান মালিকদের দাবি, গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম অর্ধেক। আর ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, একসাথে সব আম নামার কারণে বাজারে আমের দামে ধস নেমেছে।

সাপাহার উপজেলায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে আম বিক্রি করার জন্যচাষিদের দীর্ঘ লাইন আর লাইন। এটি সাপাহারের আমের বাজার। সকালে গাছ থেকে নামানো আম যানবাহনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপাহারে আমের হাটে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এ হাটে আমের সরবরাহ বাড়লেও মিলছে না ক্রেতা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাইকারি ব্যবসায়ী না আসায় আমের দাম কম পাচ্ছেন চাষিরা।

সাপাহার বাজারের আমের আড়তদার রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “গত বছর ল্যাংড়া বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২০০০-২২০০ টাকা আর এ বছর ৮০০-১২০০ টাকা, খিরসাপাত গত বছর বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২৪০০-২৫০০ টাকা আর এবার ১২০০-১৪০০শ টাকা এবং গুটি জাতের আম গত বছর বিক্রি হয়েছে ১০০০-১২০০শ টাকা আর এবার ৪০০-৫০০শ টাকা মণ। আমরাও চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে বিপাকে পড়ে যাচ্ছি। সামান্য লাভ দিয়েই আমগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে বাধ্য হচ্ছি।”

আমচাষী-নওগা

বাজারে আম বিক্রি করতে আসা আমচাষি মো. হামিদুল হক বলেন, “বর্তমান বাজার অনুযায়ী এক মণ আমের দাম দিয়ে একজন শ্রমিকের বেতনও দেয়া সম্ভব নয়। আবার অনেকেই ঋণ ও দোকানে সার, কিটনাশকের বাকিগুলো কীভাবে পরিশোধ করবেন এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই এই অঞ্চলের হাজার আমচাষিদের বাঁচাতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”

আরেক আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক আম ব্যবসায়ী ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তারা কীভাবে সেই টাকা পরিশোধ করবেন এ ভয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যাচ্ছেন। এবার জেলার সকল স্থানে একই সময়ে বেশ কয়েক জাতের আম নেমেছে, তাই আমের দরপতন বলে মনে করছেন আমের আড়তদাররা।”

এবার আমচাষি ও ব্যবসায়ী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, “রোজার সময় আমের দাম কম ছিল। এখন একটু আমের দাম বাড়লেও কৃষকরা আমের দাম সে অনুপাতে পাচ্ছেন না। এতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সামনের দিনে যদি পাইকার আসে ব্যাপকভাবে তাহলে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।”

তিনি আরো বলেন, “চলতি বছর নওগাঁ জেলায় ১৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে আর ফলনের আশা রয়েছে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন।”

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন