আলুর আবাদে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ

113

বীজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ বছর আলু চাষের দ্বিগুণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে বগুড়ার কৃষকদের। এতে আগামীতে আলুর দাম বৃদ্ধির যেমন আভাস মিলছে তেমনি লোকসানের আশঙ্কা করছেন জেলার প্রান্তিক কৃষকরা।

আলুচাষে জড়িত কৃষকরা জানান, গত বছর সরকারি দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি এস্টরিক্স জাতের আলুর বীজের দাম প্রতি কেজি ৩৩ টাকা হিসাবে এক বস্তা ১৩শ টাকা করে। এবার সেই আলুর বীজের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৪শ টাকায়। প্রতি কেজির মূল্য পড়ছে প্রায় ৫৮ টাকা।

বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির বাজার মূল্য আরও বেশি। কৃষকদের তথ্য মতে, কোম্পানি থেকে প্রতি কেজি আলুর বীজ ক্রয় করতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা দরে।

কৃষকদের দাবি, জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় গত বছর থেকেই সেচ ও সারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে বীজের বর্তমান দামসহ হাল, সার, সেচ, শ্রমিক খরচ মিলে এবার আলুর আবাদ করতে গেলে প্রতি বিঘায় অন্তত ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। যেখানে গত বছর এই খরচের পরিমাণ ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।

কাহালু উপজেলার ডহর গ্রামের আলু চাষি তাইজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনিও একই কথা বলেন। তারা কয়েক ভাই মিলে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেন। তাইজুল এখনও আলুর আবাদ শুরু করেননি। কারণ জমিতে ধান রয়েছে। তবে বীজের জন্য প্রতি কেজি ৫৮ টাকা দরে অগ্রিম টাকা দিয়ে এসেছেন।

তাইজুল ইসলাম বলেন, আলুর মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা আছে। বিএডিসির বীজ ৪০ থেকে শুরু হয়ে ৬৮ টাকা পর্যন্ত। আর কোম্পানিগুলো এই দাম আরও বেশি। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে এবার আলুর আবাদ করতে প্রতি বিঘায় দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। অথচ আমরা আলু বিক্রি করে সেই মূল্য পাই না।

এই কৃষক বলেন, গত বছর প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছি ১০ টাকা কেজি দরে। আমাদের কাছে থেকে আলু বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বাজারে দাম বৃদ্ধি হতে দেখলাম। এবার যে খরচে আবাদ করছি, তাতে লাভ তোলা কষ্টকর হবে। তারপরেও আলুর যদি কোনো ক্ষতি না হয় সেক্ষেত্রে প্রতি মণ অন্তত ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হলে লোকসান ঠেকাতে পারব।

বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম কয়েকদিন আগে দুই বিঘা আলু লাগিয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। অথচ গত বছর দুই বিঘা আলু চাষের খরচ ছিল ৩০ হাজার টাকা।

সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বছর এক বস্তা এস্টরিক্স আলুর দাম পড়ছে ২৪শ থেকে ২৫শ টাকা। গত বছর এক বস্তা পাকড়ি বীজ আলুর দাম ছিল ২ হাজার টাকা। এবার সেই দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ থেকে ৪ হাজার টাকা।

শিবগঞ্জ উপজেলার অর্জুনপুর গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন বললেন, বীজের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব কিছুরই খরচ বাড়ছে। গত বছর এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ২০০ টাকা। এ বছর লাগছে ৩০০ টাকা। আবার সেচের খরচও ২০০ টাকা থেকে বেড়েছে ৩০০ টাকায়। এবার আলুর আবাদ করার রিক্স (ঝুঁকি) বেশি।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিএডিসির বীজ ও সারের এক ডিলার আব্বাস উদ্দিন বলেন, সরকার কোম্পানির বীজের বিভিন্ন গ্রেডের আলু বীজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।

শিবগঞ্জের বাদল ট্রের্ডাসের মালিক অনু মোহন্ত জানান, সারের দাম এবার বাড়েনি। যা বাড়ার আগেই বেড়েছে। প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারের বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা। ডিএপি ৯৮০ টাকা, টিএসপি ১ হাজার ৫৬০ টাকা, এমওপি ১ হাজার ১৮০ টাকা ও দস্তা ১২০ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বগুড়া কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (বীজ বিপনন) সাদিয়া পারভিন বলেন, আলুর বীজের গ্রেড করা থাকে। গত বছর এস্টরিক্স জাতের আলু মান অনুযায়ী ২৯ থেকে ৩৩ টাকা ছিল। উত্তরবঙ্গে এবার এ গ্রেডের দাম নির্ধারণ করা হয় ৫২ টাকা। মান ঘোষিত এ গ্রেডের দাম ৪৯ দশমিক ৫০ টাকা। আর বি গ্রেডের দাম ধরা হয়েছে ৫১ টাকা। মান ঘোষিত বি গ্রেড ৪৬ টাকা। এ ছাড়া এই বছর প্রথমবার বিএডিসি দেশীয় জাত রুমানা, পাকড়ী আলুর বীজ বিক্রি করছে।

সাদিয়া পারভিন বলেন, উৎপাদনসহ বিভিন্ন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে দাম নির্ধারণের জন্য বিএডিসির মিটি থাকে তারা হিমাগার মালিকসহ সারাদেশে বাজার যাচাই করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বগুড়ায় এবার প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কৃষকরা আলু লাগিয়েছেন অন্তত ১৫শ হেক্টর জমিতে।