আলোক ফাঁদে হবে নিরাপদ ধান চাষ

826

নারয়নগঞ্জের আলীরটেক ও বক্তাবলি ইউনিয়নে আমন ধানের ক্ষেতে আলোক ফাঁদের ব্যবহার বেড়েছে। ফসলের পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহারের আধিক্যে আমাদের বহুবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান এমন কথাই বলছে। আবার ভালোভাবে ফসল পেতে পোকামাকড় দমন করাও জরুরি। এ অবস্থায় আলোক ফাঁদ ধানের পোকা দমনের একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। কৃষকরা তাই এ আলোর ফাঁদ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মো: তাজুল ইসলাম জানান, ফাঁদ তৈরি করতে সন্ধ্যার পর ধান ক্ষেতের জমির আইল থেকে আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে স্থান নির্বাচন করতে হবে। আলোক ফাঁদ তৈরির জন্য লাগবে বৈদ্যুতিক তার, বাল্ব/ হারিকেন/ হ্যাজাক লাইট/ চার্জারলাইট, তিনটি বাঁশ/ লম্বা ডাল, প্লাস্টিকের গামলা, রশি, পানি এবং ডিটারজেন্ট পাউডার/ কেরোসিন। প্রথমে বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিভুজ আকারে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হয়। এরপর মাটি থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট উপরে একটি জলন্ত বাল্ব খুঁটির তিন মাথার সংযোগস্থলে রশি সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এর নিচে একটি বড় আকারের প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রেখে এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে পোকা এর বাহিরে না পড়ে। এভাবে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ফসলের মাঠে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।আলোক ফাঁদ অন্ধকার রাতে দেখতে দৃষ্টি নন্দনও বটে। এতে খরচ কম হয় এবং পরিবেশবান্ধব। তাই ধান ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও দমনে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি উপজেলার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আলোক ফাঁদেক্ষতিকর পোকার মধ্যে মাজরা পোকা, সবুজ পাতা ফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা ও বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা), সাদা পিঠ গাছ ফড়িং ও গান্ধি পোকার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়। উপকারী পোকার মধ্যে ড্যামসেল ফ্লাই, বোলতা, মাকড়সা, ক্যারাবিড বিটল, লেডি বার্ড বিটল ইত্যাদির উপস্থিতি রয়েছে।

নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কৃষি অফিসের উদ্যোগে ধানের ক্ষতিকর ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় রোপা আমন ধানের ক্ষেতে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কর্মসূচি নেয়া হয়। উপজেলার আলীরটেক ও বক্তাবলির বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যায় ধান ক্ষেতের পাশে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কার্যক্রম হয়েছে।

সদর উপজেলার ডিক্রিচর গ্রামের কৃষক মো: রহমান, মো: আফজাল ও শাইীন বলেন, ধান ক্ষেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারে পোকা দমন সহজ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে আমরা আগের চেয়ে কম খরচে ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পারছি। আবার উপকারী পোকা বাঁচাতেও পারছি। এতে করে আমাদের উৎপাদন খরচ কমছে। অপর দিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত খাবার উৎপাদিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে আলীরটেক ও বক্তাবলি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, আমরা ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের নিয়ে সন্ধ্যায় আলোক ফাঁদ স্থাপন করে থাকি। এ ফাঁদের মাধ্যমে ধানের জমিতে একদিকে যেমন পোকা- মাকড় দমন হচ্ছে অন্যদিকে জমিতে কি কি ক্ষতি কারক পোকা রয়েছে তা চিহ্নিত করনের মাধ্যমে তা দমন করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: তাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিকর পোকামাকড় বিশেষ করে বিপিএইচ (কারেন্ট পোকা)সহ অন্যান্য ক্ষতি কারক পোকা যাতে রোপা আমন ধানের ক্ষতি সাধন করতে না পারে এবং কৃষকরা সঠিক সময়ে যেন পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সেজন্যই আলোক ফাঁদ স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬অক্টোবর২০