চাষের অনুকুল আবহাওয়া ও চাষ উপযোগি মাটি থাকা সত্ত্বেও এদেশে খুব অল্পপরিমানই মাসকালাই চাষকরা হয়। পুষ্টিকর ও মানুষের প্রিয়, পশুর সবুজ খাদ্য, সবুজ সার তৈরী এবং শিল্পের কাচাঁমালসহ বিবিধ উদ্দেশ্যে এই ডাল ও গাছ ব্যবহৃত হয় বলেই দেশের সর্বত্রই অল্প হলেও চাষ করা হয়। তবে শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী, উরফা, গনপদ্দী, টালকী, গৌড়দ্বার ও নকলা ইউনিয়নের যে দিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই কম-বেশি মাসকালাই গাছের সবুজের সমারোহ চোখে পরে। এবছর সবচেয়ে বেশি মাসকালাই চাষ করা হয়েছে চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী, উরফা ইউনিয়নে।
শষ্য ভান্ডার খ্যাত শেরপুরের নকলায় এবছর মাসকালাইয়ের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি পল্লীখ্যাত এ এলাকার মাসডাল নিজ জেলা-উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে, পার্শ্ববর্তী কয়েক জেলায় সরবরাহ করা হয়। এবার মাসকালাইয়ের বাম্পার ফলন নবযুগের সূচনা হবে বলে ধারণা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা অতিরিক্তি কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রোকসানা নাসরীন জানান, এবছর নকলা উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই চাষ করা হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৩০০ হেক্টর জমি; কিন্তু ১৫০ হেক্টর জমিতে মাসকালাই আবাদ বেড়ে অর্জন হয়েছে ৪৫০ হেক্টর। অসময়ে বৃষ্টি না হলে এবছর মাসকালাইয়ের আবাদ আরো অন্তত এক থেকে দেড়শ’ হেক্টর বাড়তো বলে তিনি মনে করছেন। মাসকালাই ক্ষেতের বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকে বলছেন, এবারের ফলন ও উৎপাদন অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বাড়বে।
কৃষকরা জানান, প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত ধানের তুলনায় মাসকালাইয়ের মূল্য ২ থেকে ৩ গুন বেশি পাওয়া যায়। বানেশ্বরদী এলাকার বারি মাসকালাই-৩ প্রদর্শনী চাষী মো. শামছুজ্জামান জুয়েল, বাছুর আলগার চাষী সাজু সাঈদ সিদ্দিকী, মুক্তার হোসেন, মোকলেছুর রহমান, ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিনসহ অনেকে জানান, এ মাসকালাই চাষে যে খরচ হয়, তার তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুন বেশি লাভ পাওয়া যায়। তারা বলেন, কৃষি বিভাগের নিয়মিত পরামর্শে ক্ষেতের যতœ নিচ্ছেন। তাদের মাসকালাইয়ের ফলন ও সফলতা দেখে আগামী থেকে ডাল জাতীয় শস্য চাষীর সংখ্যা এবং উৎপাদন দিগুণ হবে বলে আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, বাংলাদেশে চাষকৃত ডাল ফসলের মধ্যে মাসকালাইয়ের স্থান চতুর্থ। দেশে মোট উৎপাদিত ডালের মধ্যে শতকরা ৯ ভাগ থেকে ১১ ভাগ আসে এ মাসকালাই থেকে। দেশে বিভিন্ন জাতের মাসকালাই চাষ হলেও নকলায় উফসী জাত বারি মাসকালাই-১, বারি মাসকালাই-২, বারি মাসকালাই-৩, বিনা মাসকালাই-১, বিনা মাসকালাই-২; স্থানীয় জাত এবং রাজশাহী ও সাধুহাটি জাতের মাসকালাই বেশি চাষ করা হয়। তবে এবছর উচ্চ ফলনশীল বারি মাসকালাই-৩ এর আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ১.২ মেট্রিকটন থেকে ১.৫ মেট্রিকটন করে মাসকালাই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।