ইউটিউব দেখে পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে সাফল্য

164

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাড়ির পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় এক চাষি। উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুর রহমান বস্তার মধ্যে আদা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আসাদুর রহমানের এমন চাষ দেখে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে।

আদা একটি উদ্ভিদ মূল, যা মানুষের মসলা এবং ভেজষ ওষুধ হিসেবে ব্যবহƒত হয়। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। বর্তমানে আদা চাষ বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আদা রোপণের মাত্র তিন মাসের মাথায় গাছগুলোয় আদা হতে শুরু করেছে।

আদা চাষি আসাদুর রহমান জানান, প্রথমে তিনি ইউটিউব দেখে আদা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরপর ময়মনসিংহ এক কৃষকের পরামর্শ নিয়ে শুরু করেন চাষ। প্রথমে ছাই, জৈব সার ও বালু মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করেন। পরীক্ষামূলক এক কাঠা জমিতে ২০০টি বস্তায় মাটি ভরাট করে টবের মতো করেন তিনি। এরপর প্রতিটি বস্তায় ৩-৪টি করে আদার চারা রোপণ করেন। রোপণের মাত্র এক মাসের মাথায় গাছ বড় হতে শুরু করে। এরপর তিন মাসের মধ্যে গাছগুলোর গোড়ায় আদা ধরতে শুরু করেছে। এভাবে আদা চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, পতিত জমিতে খুবই সীমিত খরচ আর অল্প শ্রমে চাষ করা সম্ভব।

একেকটি বস্তায় প্রায় দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যাবে। আদা চাষি আসাদুর বলেন, সীমিত খরচ, কম জায়গা আর অল্প পরিশ্রমে এটি একটি লাভজনক চাষ। আদা গাছে পানির চাহিদা অনেক কম। আবার সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। মাঝে মধ্যে পাতা মরা রোগ প্রতিরোধে কিছু ওষুধ স্প্রে করতে হয়। এর বাইরে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এভাবে আদা চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে চাষ করেছি। এ বছর যদি লাভ ভালো হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আদা চাষ করব। একটি বস্তায় চারা রোপণ করতে মোট খরচ হবে প্রায় ৩০ টাকা। কিন্তু একেকটি বস্তায় আদা পাওয়া যাবে প্রায় দুই থেকে আড়াই কেজি। বর্তমানে দুই কেজি আদার বাজার মূল্য ২০০ টাকা। আসাদুর এ পদ্ধতিতে আদা চাষ দেখে এলাকার অনেক মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে আদা চাষ দেখতে আসেন অনেকে।

স্থানীয় জালাল জানান, এভাবে আদা চাষ এর আগে দেখিনি। এটি দেখার পর আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে এই এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক এভাবে আদা চাষ শুরু করেছেন। বস্তায় আদা চাষ খুবই সহজ। অল্প খরচে বেশি লাভজনক একটি ফসল।

কুমারখালী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, আদা একটি অর্থকরী ফসল। এ পদ্ধতিতে আদা চাষে জমির চেয়ে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয় কম। বস্তায় আদা চাষে কীটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব। পাশাপাশি কেউ চাইলে বাসার ছাদে, ব্যালকনি এবং বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত স্থানেও চাষ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে যদি কেউ আদা চাষ নাও করতে চায়, স্বল্প পরিসরে এ চাষের মাধ্যমে নিজেদের আদার চাহিদা মেটানো সম্ভব। কেউ যদি এভাবে আদা চাষ করতে চায়, তাহলে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।