দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরার অনুমতি মিলেছে জেলেদের। এখন সমুদ্র থেকে প্রচুর মাছ নিয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা। অন্যান্য মাছের পাশাপাশি বাজারে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। ফলে ইলিশের দামও কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতারা বলছেন, ইলিশ মাছের দাম এখনও নাগালের বাইরে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছের বাজারে বেশ হইচই। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন। কেউ এক হাজার, কেউ এক হাজার ২০০, আবার কেউ এক হাজার ৪০০ টাকা বলছেন। কাছাকাছি না গেলে স্পষ্ট শোনাটাও যেন মুশকিল।
বাজারে পাইকারি ক্রেতার পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের আনাগোনাও আছে বেশ। কেউ দাঁড়িয়ে কারও করা দাম শুনছেন, আবার কেউ দাম করেই যাচ্ছেন। দামে মিলে গেলেই কিনছেন মাছ।
ইলিশ মাছের পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমুদ্রের মাছ এবং বরিশাল অঞ্চলের নদীর মাছ সমান হারে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। দিন যত বাড়বে, মাছের দাম তত কমতেই থাকবে। গতকাল যে মাছ এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটি আজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকায়। এভাবে সামনের দিনগুলোয় মাছের দাম আরও কমবে। তবে সমুদ্রের মাছের তুলনায় নদীর মাছের দাম একটু বেশিই রয়েছে। এখন বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালী থেকে মাছ আসছে।
মাছ বিক্রেতা মনোরঞ্জন পাল বলেন, এখন মাছের ব্যাপক আমদানি। ফলে বাজারে দাম কমেছে ইলিশের। আমদানি কমে গেলে দাম বেড়ে যাবে। দাম কমের কথা জেনে ক্রেতারা এরই মধ্যে বাজারে এসেছেন। দুই দিন আগের তুলনায় এখন বাজারে ইলিশের দাম কেজিতে ৩০০-৪০০ টাকা কমেছে। তবে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে তারা আরও কম দামে মাছ কিনতে চান।
আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দাম কমার কোনো শেষ নেই। যত দাম কমবে, ক্রেতারা আরও দাম কমাবে। ৫০০ টাকার মাছ ৪০০ টাকা হলেও তারা বলবে, দামটা আরও একটু কমান।
তিনি আরও বলেন, বাজারে এখন দুই ধরনের মাছই রয়েছে। সমুদ্র ও নদীর মাছের মধ্যে নদীর মাছের দাম এখনও কিছুটা বেশি। কিন্তু সমুদ্রের মাছের দাম কম। সমুদ্রে বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে এখন।
সকালবেলা কারওয়ান বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছেন শিক্ষক জহিরুল আলম। তিনি বলেন, সবাই দাম কম বললেও বাজার ঘুরে আমার কাছে দাম কম মনে হয়নি। এক কেজি সাইজের ইলিশ কেউ এক হাজার ৫০০ টাকার নিচে দিতে চাচ্ছে না। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ৪০০ টাকা আর ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ২০০ টাকা দাম চাচ্ছে। এবার আপনিই বলুন, দামটা কোথায় কম?
আরেক ক্রেতা আরিফুল ইসলাম জিসান বলেন, বাজারে দেখছি প্রচুর মাছ উঠেছে, কিন্তু বিক্রেতারা দাম কমাচ্ছে না। অল্প আয়ের মানুষের জন্য এই দামে মাছ কেনা প্রায় অসম্ভব। কারণ বেশিরভাগ দোকানদারই আগের দাম ধরে রেখেছে। তারা দাম না ছাড়লে ইলিশ মাছ না কিনেই হয়তো বাসায় ফিরতে হবে। কেউ এক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এলে তার আর মাছের বাজারে ঢোকার সাধ্য হবে না।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ৬৫০ টাকা, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ৮০০-১ হাজার টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা এবং এক কেজি বা এর অধিক ওজনের সাইজের মাছের কেজি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
কুয়াকাটার মাছ ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান মুন জানিয়েছেন, ইলিশ কেজিতে (৪-৫টি) ৬০০ টাকা; (৫০০-৬০০ গ্রাম) এক হাজার টাকা কেজি; (৭০০-৮৯০ গ্রাম) এক হাজার ২০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি থেকে এক কেজি ২৯০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
