উট পাখির খামার ব্যবস্থাপনা

2083

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মুরগি , হাঁস , কোয়েল , কবুতর ইতোঃমধ্যেই সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পোল্ট্রি শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে । কিন্তু উট পাখির খামার তুলনামূলকভাবে পোল্ট্রি শিল্পে সম্পূর্ণরূপে একটি নতুন ধারণা যা এগ্রিবিজনেস সেক্টরকে আরো
এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে; যদি উট পাখিকে অন্যান্য লাভজনক পাখির ন্যায় পালনে উট পাখি সম্পর্কে যথাযথ প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা যায় ।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই এ নতুন ঝুকিপূর্ণ ব্যবসা শুরু হয়েছে । তবে বাংলাদেশও এক্ষেত্রে একবারে পিছিয়ে নেই। নরসিংদী ,দিনাজপুর রাজশাহী সহ বাংলাদেশের আরো দু-একটি জেলায় সৌখিনতা বশতঃ ছোট পরিসরে উট পাখির খামার গড়ে উঠেছে । উট পাখির পালক বেশ চড়া মূল্যে বিক্রি হয় ; যা দিয়ে অনেকেই মূলত গৃহের সাজসজ্জ্বার ক্ষেত্রে কাজ করেন। উঠ পাখির চামড়া খুবই মূল্যবান ও এর মাংস
আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা অনেক বেশি মাংস খেতে বেশ সু-স্বাদু ।

উট পাখির বৈজ্ঞানিক নাম “ Struthio Camelis” । উট পাখি সকল প্রজাতির পাখির মধ্যে সবচেয়ে বড় পাখি। একমাত্র উট পাখিই সবচেয়ে বড় আকারের পাখি ডিম পাড়ে। একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ উট পাখির দৈহিক ওজন ৬৩ থেকে ১৩০ কিলোগ্রাম ( ১৪০ – ২৯০ পাউন্ড) এবং একটি স্ত্রী পূর্ণ বয়স্ক উট পাখির দৈহিক ওজন প্রায় ১৫৫ কিলোগ্রাম ( ৩৪০ পাউন্ড ) । বয়স্ক পুরুষ উটের পালক কালো রঙ্গের, প্রাইমারী ও কডাল পালক সাদা রঙ্গের। স্ত্রী ও বাচ্চা উটের পালক হতে পারে ধূসর অথবা সাদা রঙ্গের। স্ত্রী – পুরুষ উভয় উট পাখির গলা প্রায় পালকবিহীন।

উট পাখি তার লম্বা পা ও গলাসহ মাথা প্রায় ১.৮ – ২.৫ মিটার মাটি থেকে উপরে রাখে । উট পাখির ডিম জাম্বু আকৃতির। উট পাখির বড় বড় চোখ তাদের শত্রুর গতিবিধির উপর নজরদারি রাখতে সহায়তা করে । উট পাখির পা বেশ শক্তিশালী ও পা অন্যান্য পাখির ন্যায় পালক বিহীন। প্রায় অধিকাংশ পাখির পায়ে চারটি আঙ্গুল থাকলেও উট পাখির পায়ে মাত্র দু’টি আঙ্গুল রয়েছে । যখন উট পাখি তাদের ডানা মেলে রাখে তখন ডানা দ্বয়ের দূরত্ব প্রায় ২ মিটার । তারা তাদের ডানা মেলে ধরে ডানা দ্বারা বাচ্চাকে আগলিয়ে রাখে । উট পাখির ঠোঁট চ্যাপ্টা, চওড়া ও মাথা খানিকটা কার্ভ। উট পাখির অন্যান্য পাখির ন্যায় ক্রোপ, গিজার্ড,স্টোমাক ও
পিত্তথলি নেই ; পাকস্থলির বা স্টোমাকের পরিবর্তে শুধুমাত্র গ্ল্যান্ডুলার অংশ বিশেষ করে প্রোভেন্ট্রিকিউলাস রয়েছে। উট পাখির মল–মূত্র ত্যাগের পদ্ধতি একে অপর থেকে পৃথক।

উট পাখি সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর বয়সের মধ্যে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে । পরিপূর্ণ বয়সে একটি পুরুষ উট পাখির উচ্চতা প্রায় ১.৮ – ২.৮ মিটার এবং স্ত্রী উট পাখির উচ্চতা প্রায় ১.৭ – ২.০ মিটার হয়ে থাকে । প্রথম দু’বছরের জন্য , উট পাখির দৈহিক বাড়ন্তের হার প্রতি বছরে ২৮ সেন্টিমিটার ও দৈহিক ওজন প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম।

উট পাখির প্রাপ্যতা
পূর্ব থেকেই ব্যাপক হারে আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল, সাহারার দক্ষিণাঞ্চাল, পশ্চিম আফ্রিকা ,আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চালের বনভূমি ও এশিায়ার কিয়দাংশে উট পাখির আবাসস্থল গড়ে উঠেছে। পরবর্তিতে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে সম্পূর্ণরূপে মরু অঞ্চল অথবা আধা
মরু অঞ্চলে উট পাখির বসতি গড়ে উঠে।

উট পাখির আচরণ
পুরো শীতকাল ব্যাপী , তাদের জোড়ায় জোড়ায় বা একক ভাবে রাখার ব্যবস্থা করা দরকার । প্রজননকালীন সময়ে অথবা প্রজননকালীন সময়ের বাহিরে, তাদেরকে ৫টি থেকে ৫০ টি করে একত্রে দলবদ্ধভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। একটি স্ত্রী উট পাখি এক একটি গ্রুপের মধ্যে রাণীর মর্যাদা ভোগ করে । উট পাখি সাধারণত জেবরা বা হরিণের বাসায় একত্রে অবস্থান করতে পারে। সারাদিন ব্যাপী এবং কোন কোন সময় বিশেষ করে চাঁদের রাতে চারণভূমিতে অবস্থান করতে পারে। উট পাখির দৃষ্টি শক্তি ও শোনার সক্ষমতা অনেক বেশি । তারা তাদের তীক্ষ্ণ ও শক্তিশালী দৃষ্টিশক্তি ও শোনার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শত্রু পক্ষের অবস্থান অনুধাবন ও নিজেকে সিংহ কিংবা অন্যান্য বন্য প্রাণি রক্ষা করতে সক্ষম হয়। যখন উট পাখি বন্য ও হিংস্র শিকারী প্রাণি কর্তৃক আক্রমণের শিকার হয় তখন তারা সেখান থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য অতি দ্রুত গতিতে ঘন্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার বেগে নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় । দু’ পা যুক্ত প্রাণির মধ্যে অন্যান্য প্রাণি
থেকে উট পাখি সবচেয়ে বেশি দ্রুত গতিশীল প্রাণি। উট পাখি যখন দৌড়াতে শুরু করে তখন ,তারা তাদের ডানা দু’টোকে হাল ধরানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে তারা দৌড়ানোর সময়ে সহজে ও অতি দ্রুতার সাথে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। যখন তারা দৌড়ায় প্রতি ধাপে ১০–ফুট দূরত্ব পথ অতিক্রম করতে পারে। বন্য প্রাণির মধ্যে , এক মাত্র উট পাখিই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গতির দিক থেকে। যখন তার আক্রান্ত হয় , তখন তারা তাদের মাথা ও গলা মাটির দিকে নামিয়ে রাখে এবং তারা তাদের লম্বা ‍ও শক্তিশালী পা নিজেকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহার করে ।

ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে উট পাখির খামারে খাদ্য ব্যবস্থাপনা
উট পাখি সাধারণত চাড়া গাছ ,ঘাস,বিভিন্ন ধরণের ফুল ,গাছের পাতা ও শস্যদানা খেয়ে থাকে । তারা কোন কোন সময় পোকামাকড়ও খায় । বাণিজ্যিক উট খামারে পোল্ট্রি খাদ্য ব্যবহার করা যেতে পারে । ভালো মানসম্মত সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো – (প্রতি কিলোগ্রাম খাদ্যে)
২০-২৪% ক্রুড
প্রোটিন ,
১২-১৯% ক্রুড
ফাইবার ,
১.২-২.০% ক্যালসিয়াম
,
০.৬-১.১% ফসফরাস
,
১০,০০০-১৫,০০০
আই ইউ ভিটামিন –এ
১৫০০ – ২৫০০আই
ইউ ভিটামিন ডি

উট পাখির ব্রিডিং পিড়িয়ড চলাকালীন সময়ে,উট পাখির খাদ্য তালিকা একই রকমের হবে । কিন্তু খাদ্যে ২.৫% অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সরবরাহ দিতে হবে। এছাড়াও কচি সবুজ শাকসব্জি ও ঘাস সাথে পিলেট ফিড ও ফিড এডিটিভ হিসাবে আলাদাভাবে খাদ্যে কিছু ট্রেস মিনালেস মিশাতে
হবে।

উট পাখির মাংস
উট পাখির মাংসে অন্যান্য প্রাণির মাংস থেকে তুলনামূলকভাবে ফ্যাটের পরিমাণ যৎসামান্য । যার ফলে উট পাখির মাংস দ্রুত রান্না করা সম্ভব। এছাড়াও উট পাখির মাংসে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণও কম । নিম্নে উট পাখির মাংসের কতিপয় গ্রহণযোগ্য চিত্র তুলে ধরা
হলো–

উট পাখির মাংসে ৩% এর কম পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে ।
সাধারণত উট পাখির মাংস খাদ্য হিসাবে সংগ্রহ করতে হয় উট পাখির।
তাদের খাদ্য গ্রহণের দক্ষতা অন্যান্য প্রাণি থেকে অনেক ভালো ।
উট পাখির সাংসে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডও রয়েছে; মুরগির মাংসের মতোই।
উট পাখির খাদ্য যথাযথভাবে হজমের জন্য খাদ্যে ছোট ছোট লাইম স্টোনের টুকরো থাকা দরকার। অনেক সময় একটি পূর্ণ বয়স্ক উট পাখির প্রোভেন্ট্রিকিউলাসে (Stomach) প্রায় ১ কিলোগ্রাম পরিমাণ পাথরের টুকরো পাওয়া যেতে পারে । উট পাখি পানি ছাড়াও কয়েকদিন টিকে থাকতে পারে। তারা সবুজ ঘাস ও পাতা খেয়ে পানি সংগ্রহ করে । কিন্তু তারা যদি পানির সংস্পর্শ পায় সেক্ষেত্রে তারা পানি পান করে ও সেখানে গোসলও করে। উট পাখি অনবরত তাপমাত্রা পরিবর্তন জনিত ধকল সহ্য করতে সক্ষম। তারা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রারও বেশি তাপমাত্রা হেরফের হলে তাও সহ্য করতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ায় তারা তাদের পা বড় পাখা বা ডানা দ্বারা ঢেকে রাখে যাহা তাদের দেহকে গরম রাখতে সহায়তা করে ।

উট পাখির প্রজনন
সাধারণত উট পাখি তাদের বয়সের ২ – ৪ বছর বয়সে সেক্সুয়াল ম্যাচুরিটি অর্জন করে । স্ত্রী উট পাখি পুরুষ উট পাখির
৬ মাস আগে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। প্রজননকালীন সময় হলো মার্চ বা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস । প্রজনন পদ্ধতি আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য হেরফের হতে পারে। একটি পুরুষ উট পাখি ২ – ৭ টির বেশি স্ত্রী উট পাখির সাথে যৌন মিলনে সক্ষম । যৌন মিলনের সময় উট পাখি বিশেষ ধরণের শব্দ বা আওয়াজ করে। পুরুষ উট পাখি স্ত্রী উট পাখিকে আকর্ষীত করার জন্য বিশেষ ভঙ্গিমায় ডানা প্রসারিত করে । যদি পুরুষ উট পাখি নিজেকে হৃদয়গ্রাহীরূপে স্ত্রী উট পাখিকে আহবান জানায় তখন স্ত্রী উট পাখি সহ তারা শান্ত পরিবেশে গমন করে ও
অন্যদের সঙ্গ ত্যাগ করে । স্ত্রী উট পাখি গর্তের মধ্যে ডিম পাড়ে ;যে গর্তের গভীরতা প্রায় ৩০- ৬০ সেন্টিমিটার ও গর্তের চওড়া প্রায় ৩ মিটার। পুরুষ উট পাখিই স্ত্রী উট পাখির জন্য গর্ত তৈরি করে। ডিম লম্বায় গড়ে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার ,চওড়ায় প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার ও ওজন প্রায় ১.৪ কিলোগ্রাম। ডিমের খোঁসা বেশ শক্ত এবং মসৃন ও উজ্জ্বল ক্রিম রঙ্গের। ডিমের খোঁসায় ছোট ছোট কিছু দাগ থাকে । স্ত্রী – পুরুষ উভয় মিলেই ডিমে তা দেয় ও ফোটায়। পালাক্রমে তারা সারাদিন – রাত অদল-বদল করে প্রায় ৩৫–৪৫ দিন ধরে যত্ন সহকারে ডিম ফোটায় । পুরুষ উট পাখি বাচ্চার দেখভাল করে ও বাচ্চাকে খাওয়ানো শেখায় । বন্য উট পাখির বাচ্চা টিকে থকার হার খুবই কম । তাদের প্রধান শত্রু হলো সিংহ ,শেঁয়াল ,শকুন ইত্যাদি।

উট পাখির বাচ্চার জন্য বিশেষ যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে । বাচ্চাকে প্রায় ৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাসগৃহের অভ্যন্তরে রাখতে হবে। সদ্য জন্মকৃত বাচ্চার জন্য ব্রুডিং তাপমাত্রা ২৮ – ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে হবে। তাদের জন্মের প্রথম সপ্তাহ দিনে ৩-৪ বার খাদ্য সরবরাহ দিতে হবে। পরবর্তী ৩ সপ্তাহ বয়সে রুমের তাপমাত্রা অন্ততঃপক্ষে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হতে হবে। উট পাখির বাচ্চাকে খাদ্য খাওয়ানো বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল। উট পাখির বাচ্চাকে খাওয়ানোখাদ্যের সাথে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড ,প্রোটিন, এনার্জী ও ট্রেস মিনারেলস পর্যাপ্তমাত্রায় খাওয়াতে হবে।

উট পাখির খাদ্য
উট পাখি সাধারণত চরে খায় কিন্তু তাদের চরানো যায় না। তাদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যে উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য ও খাদে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ও মিনারেলস থাকতে হবে। এ জাতীয় খাদ্য তাদের স্বাস্থকে সঠিক ও সর্বোচ্চ উৎপাদনে সাহায্য করবে। উট পাখির জন্য সাধারণ খাদ্য হলো ফল-মূল, চাড়াগাছ ,টিকটিকি ,পোকামাকড় ,বিভিন্ন শ্রেণীর ছোট ছোট ইঁদুর ইত্যাদি । এছাড়াও তারা বালু, ঝিনুক ও ছোট ছোট পাথর ভক্ষণ করে থাকে। তবে খামার পদ্ধতিতে উট পাখি পালন করতে হলে পোল্ট্রি ফিড এর পাশাপাশি শাকসব্জি ও চাড়া জাতীয় গাছ সরবরাহ করতে হবে ও সাপ্লিমেন্টারী খাদ্য দেওয়ার পূর্বে উট পাখির খাদ্যে পুষ্টিকর খাদ্যোপাদন সমূহের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে ।

উট পাখির বাসগৃহ
বাণিজ্যিক উট পাখির খামারের জন্য উন্নতমানের বাসগৃহ অত্যাবশ্যকীয়। উট পাখি এক ধরণের পোল্ট্রি যা সাধারণত মাংস ও খুব মূল্যবান পালকের জন্য তাদের আধুনিক খামার পদ্ধতিতে বর্তমানে পালন করা হয়। তারা সাধারণত কয়েক বছর টিকে থাকতে পারে। পরিপক্ক বয়সে উট পাখি প্রায় ৭-৮ ফুট উচু ও ওজন প্রায় ৪৫০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়। তারা দ্রুত দৌড়াতে পারে। প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার।
তারা প্রায় সব ধরণের আবহাওয়া , জলবায়ু ও পারিপার্শিক পরিবেশে নিজেকে খাঁপ খাইয়ে চলতে পারে। কিন্তু যথাযথ দৈহিক বৃদ্ধি ও উৎপাদনের জন্য ভালো বাসগৃহ ও আশ্রায়ের দরকার। উট পাখির বাসগৃহ হতে পারে চিরস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী আশ্রায় কেন্দ্র ; তবে তা’ অবশ্যই হতে হবে উট পাখির জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক।

উট পাখির বাসগৃহের জন্য গাইড লাইন
উট পাখির জন্য উপযুক্ত বাসগৃহ নির্মাণ একবারে সহজ নয়। উট পাখির জন্য বাসগৃহের অভ্যন্তরে উট পাখির জন্য যা যা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার তা সম্পূর্ণরূপে পর্যাপ্তভাবেই করতে হবে। উট পাখির বাসগৃহ নির্মাণের পূর্বে নিম্নলিখিত নির্দেশনা সমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে –

খামারের ধরণ, অবস্থান বুঝে ও উট পাখির সংখ্যানুপাতে উট পাখির বাসগৃহ নির্মাণ করতে হবে।
উট পাখির উচ্চতার চেয়ে বাসগৃহের উচ্চতা বেশি হতে হবে; যাতে উট পাখি তাদের মাথা স্বাধীনভাবে উপরের দিকে উচুঁ করে সোজাভাবে দ্বারাতে পারে। প্রতিটি উট পাখির জন্য বাসগৃহের অভ্যন্তরে ৬০-৮০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। উট পাখির জন্য নির্মিত বাসগৃহের মেঝে বা ফ্লোর বালু বা মাটির দ্বারা নির্মিত হলে সবচেয়ে ভালো হয়। উট পাখির জন্যবাসগৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে বালুময় স্থান নির্ধারণ করতে
হবে। বাসগৃহের জন্য পয়োঃনিস্কাশনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাসগৃহ অবশ্যই শান্ত পরিবেশে নির্মাণ করতে হবে ও বাসগৃহ কোলাহল মুক্ত রাখতে হবে। উট পাখির খামার অবশ্যই আবাসিক এলাকা থেকে দূরে হতে হবে। উট পাখির বাসগৃহের নিকটবর্তী স্থান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ;যা উট পাখির জন্য কোন ক্ষতি সৃষ্টি না করে । বিশেষ করে কোন ঝোপ-ঝাড়, পাথর, কাঠ ইত্যাদি । উট পাখি যাতে নির্দিষ্ট গণ্ডির বাহিরে যেতে না পারে কিংবা গণ্ডি ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য গণ্ডির চারপাশে বেড়া নির্মাণ করতে হবে। উট পাখিকে বন্য প্রাণি, ক্ষতিকারক প্রাণি ও চোরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় প্রাণি ও সর্বসাধারণের উট খামারে প্রবেশ প্রতিরোধ করতে হবে। উট পাখির বাসগৃহ যথাসম্ভব বারবার পরিস্কার –পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে খামারের উট পাখি সুস্থ্য ও রোগমুক্ত থাকে। উট পাখিকে নিরাপদ ও আরামদায়ক রাখতে উট পাখির বাসগৃহ নিরাপদ স্থানে নির্মাণের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২১আগস্ট২০