উট পাখি পালনে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময়

1116

31113907_1212707065533236_785120430000971224_n
ইতোমধ্যে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে উটের খামার গড়ে উঠেছে। স্বল্প পরিসরে হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে উট পাখি পালন করা হচ্ছে। গরু, হাঁস, মুরগির খামার না করে নবাবগঞ্জের আনজুমান আরা উটের খামার গড়ে তুলেছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, উট পাখি পালন লাভজনক। মালয়েশিয়া, নেপাল গিয়ে তিনি উট পাখি পালন বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। একটি উট বছরে ৬০ থেকে ১০০টির মতো ডিম পাড়ে। যা থেকে কম করে হলেও ৫০টি বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব। উট পাখি ৫০ থেকে ৭০ বছর উৎপাদনক্ষম থাকে। পুরুষ উট পাখিগুলোর পাখার রং হয় কালো। লেজ হয় সাদা। মেয়ে উট পাখির পাখার রং হয় ধূসর বাদামি। পুরুষ ও মেয়ে উভয় উট পাখির গলা প্রায় পালকশূন্য থাকে। আর এদের গ্রোথ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া গরু-ছাগলের চেয়ে বেশি। ফলে বাণিজ্যিকভাবে খামার আমাদের দেশে লাভজনক হবে।

উট পাখি তৃণভোজী প্রাণী। তাই খাবার সহজলভ্য। খাবার খরচ ও কম। এরা তৃণলতা, ঘাস, দানাদার খাদ্য, ফলমূল খেয়ে থাকে। মাঝে মাঝে পোকা মাকড়ও খায়। আনজুমান আরার যুক্তি হলো, একটি গরু বছরে ১টি বাচ্চা দেয়। সেদিক দিয়ে উটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক বেশি। তুরস্ক, আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশে উট পাখি বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। শুধু তাই নয়। ফ্যাট কম থাকার কারণে এর মাংস চাহিদা প্রচুর। উট পাখির এক কেজি মাংসের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৯০ ডলার। আর বাচ্চা ফুটানোর মেশিন ইক্যুবেটর কিনতে পাওয়া যায়। উট পাখির প্রায় সবই বিক্রি ও ব্যবহারযোগ্য।

চামড়া, মাংস, ডিম, দুধ, পলক বিক্রি হয়। পালক জ্যাকেট, স্কাট, কোটের কলারে ব্যবহার করা হয়। ব্যাগ, টুপি ইত্যাদি বানানো হয়। মাছ হুক, শোপিসেও এর ব্যবহার আছে। খোসা শক্ত বড় হওয়ার কারণে উট পাখির ডিমের শোপিস প্রচুর জনপ্রিয়। উট পাখির হাড় দিয়ে বোতাম, চিরুনি বানাতে ব্যবহার করা হয়। প্রশাধন শিল্পে ব্যবহার করা হয় উট পাখির চর্বি। একটি উট পাখিতে ৩% এর মতো চর্বি থাকে। যা মাংস থেকে আলাদা করা যায়। এদের মাংসে যে ফ্যাট থাকে তা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। প্রচুর আয়রন রয়েছে উট পাখির মাংসে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশের ডাক্তার, পুষ্টিবিদরা গরু, খাসির মাংস বাদ উট পাখির মাংস খাবার পরামর্শ দেন।

শুধে প্রশাসন শিল্পের জন্য তুরস্কে কয়েক শ’ উটের খামার গড়ে উঠেছে। ১০ থেকে ১২ মাসে একটি উট পাখির ওজন হয় ৯০/১০০ কেজি। উট পাখির অসুখ-বিসুখ কম। আবহাওয়াগত কারণে আমাদের দেশের পশুপাখির কৃমি ও চর্মরোগ বেশি হয়। উট পাখির বেলায়ও তাই। এসব রোগের ওষুধ সহজলভ্য। তবে কিছু চিকিৎসার বেলায় সীমাবদ্ধতা আছে। অভিজ্ঞ, বিশেষ করে উট পাখি বিষয়ে ভাল জানেন এমন চিকিৎসক নেই বললেই চলে। উট পাখি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। ভয় পেলে রেগে যায়। তখন আচরণে কিছুটা পরিবর্তন হয় । পুরোপুরি এ দেশের আবহায়ায় উট পাখি মানিয়ে নিয়েছে। পশুপাখিবিদদের মতে, বাংলাদেশের নাতিশীতষ্ণো আবহওয়া প্রায় সব পশুপাাখি উৎপাদনের জন্য এক কথায় চমৎকার। নামে পাখি হলেও উট পাখি উড়তে পারে না। তবে দ্রুত দৌড়াতে পারে। প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। ভয় পেলে লুকাতে চেষ্টা করে। কখনও কখনও পা দিয়ে আঘাত করে। চিতার মতো প্রাণী উট পাখির পায়ের আঘাতে মৃত্যুর ঘটনা আছে।

দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান সরাসরি আফ্রিকা থেকে বাচ্চা আমদানি করে। তুলনামূলকভাবে লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও উট পাখির খামার কম হচ্ছে। কারণ উট পাখি মরুভূমি ছাড়া বাচে না। এমন কুসংস্কার রয়েছে। সিনান বার্ডস ব্রিডিং ফার্ম বাংলাদেশে প্রথম সরকার কর্তৃক উট পাখি পালনে অনুমোদনপ্রাপ্ত ফার্ম। উট পাখি অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করতে পারে। খাবার খরচ কম।

তাই সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উট পাখি পালন দেশে বেকারত্বের হার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে বলে অভিজ্ঞরা মনে করেন। পাশাপাশি উট পাখির মাংস, চামড়া, পলক, চর্বি রফতানি করে দেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০মার্চ২০