উন্নত জাতের গরুতে লাভ বেশি

1444

লাভজনকভাবে গরু পালনের জন্য উন্নত জাতের গরুর বিকল্প নেই। তাই চাহিদাও আকাশচুম্বী। আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে দুধ ও মাংসের ভূমিকা অকল্পনীয়। উন্নত জাতের গরু থেকে যেমন দুধ পাওয়া যায় অনেক বেশি, তেমনি মাংসের উৎপাদনও করা যায় অধিক।
ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও কিছু উন্নত জাতের গরু পালন করা হচ্ছে।

কোনো কোনো জাত এ দেশের পরিবেশের সঙ্গে এখনও খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। তাই সেগুলোর ক্রসব্রিড পালন করছে অনেকে। কেউ কেউ আবার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে বিদেশি উন্নত জাতের গরু পালন করছে। এতে মুনাফাও পাওয়া যাচ্ছে বেশ ভালই।

উন্নত জাতের গরুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে -হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহীওয়াল, সিন্ধি, ব্রাহমা ও থারপারকার প্রভৃতি।

★হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান : শীতপ্রধান অঞ্চলের এ জাতের গরুর উৎপত্তিস্থল হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে। এরা দুধের জন্য বেশ বিখ্যাত। দৈনিক ৪০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে সক্ষম। গায়ের চামড়া ছোট-বড় কালো ছাপযুক্ত। এমনকি পুরোপুরি সাদা ও কালোও হতে পারে। গাভীর ওজন হয় প্রায় ৫৫০-৬৫০ কেজির মত এবং ষাঁড়ের ওজন হয় ৮০০-৯০০ কেজি পর্যন্ত। ১৮-২৪ মাস বয়সে প্রথম গর্ভধারণ করে। সদ্যজাত বাছুরের গড় ওজন হয় ৩০-৩৬ কেজির মতো।

★জার্সি : এদের উৎপত্তি ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি নামক ব্রিটিশ দ্বীপে। উন্নত জাতের দুধেল গাভীর মধ্যে জার্সির আকারে সবচেয়ে ক্ষুদ্র। বর্তমানে এ জাতটি ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। গায়ের রং লাল বা মেহগনি হয়। পূর্ণবয়স্ক গাভীর ওজন ৪০০-৫০০ কেজির মতো এবং ষাঁড়ের ওজন ৫৪০-৮২০ কেজি হয়ে থাকে। সদ্যোজাত বাছুরের ওজন ২৫-২৭ কেজি।

★শাহীওয়াল : উপমহাদেশের এ জাতটির উৎপত্তিস্থল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারী জেলায়। এরা ধীর ও শান্ত প্রকৃতির। গায়ের রং সাধারণত ফ্যাকাসে লাল বা হালকা হলুদ। বছরে প্রায় ২১৫০-৪০০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। পূর্ণবয়স্ক গাভীর ওজন প্রায় ৪৫০-৫৫০ কেজি এবং ষাড়েঁর ওজন প্রায় ৬০০-১০০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সদ্যোজাত বাছুরের ওজন হয় ২২-২৮ কেজি।
★সিন্ধি : এদের উৎপত্তিস্থল পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের করাচি, লাসবেলা ও হায়দরাবাদে। গায়ের রং অনেকটাই লাল। গাভীর ওজন প্রায় ৩৫০-৪০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৪২৫-৫০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। দৈনিক প্রায় ৮-১০ লিটার দুধ দেয়। সদ্যোজাত বাছুরের ওজন ২১-২৪ কেজি।

★ব্রাহমা : ব্রাহমা একটি শংকর শ্রেণির গরুর জাত। মাংসের জন্য বিখ্যাত। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, কলম্বিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে এদের মূল উৎপত্তিস্থল ভারতীয় উপমহাদেশ। এরা উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল এবং পরিবেশের সঙ্গে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অধিক। গায়ের রং সাধারণত ধূসর লাল, সাদা এবং কালো হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক গাভীর ওজন প্রায় ৪৫০-৬৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৮০০-১০০০ কেজি। সদ্যোজাত বাছুরের ওজন ২৮-৩৫ কেজি।

★থারপারকার : মাঝারি আকারের এ জাতের গরুর গায়ের রং সাদা। মাথায় বড় শিং আছে, দেহ সুগঠিত। গাভীর গড় ওজন ৪০০-৪৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৫০০-৬০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০০০-৪৫০০ লিটার।
এছাড়াও বর্তমানে আরও কিছু জাতের গরু পালন করা হচ্ছে।

উন্নত জাতের এ সব গরু পালন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন এলাকায় উন্নত জাতের গরুর খামার গড়ে ওঠলে সেখানে অনেকের কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দুধ ও মাংস উৎপাদনও সম্ভব হবে। যা আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬জানুয়ারি২০২১