উপকূলীয় কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব পাচিং পদ্ধতি

480

পাচিং

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী থেকে: বালাইনাশক প্রয়োগ ছাড়া ধান ক্ষেতের পোকা দমনে পটুয়াখালীতে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব পাচিং পদ্বতি। এ প্রযুক্তির ব্যবহারে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য। কমছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপস্থিতি। সংরক্ষিত হচ্ছে জীব বৈচিত্র। আর্থিক সাশ্রয় পাচ্ছে কৃষক।

কৃষি বিভাগ জানায়, বর্তমানে জেলার প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক পদ্ধতিটি ব্যবহার করছে। পর্যায়ক্রমে সকল কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করতে করতে নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, কৃষকের নিরন্তন প্রচেষ্টায় যখন ক্ষেতে চারা গাছগুলো তরতর করে বেড়ে ওঠে। তখনই ক্ষেতে আক্রমণ করে ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকা। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ কৃষকদেও জন্য নিয়ে আসে পরিবেশ বান্ধব পাচিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ব্যবহারের কীটনাশকের ব্যবহার কমছে। সুরক্ষিত হচ্ছে পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্য।

দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকরা সাধারণত দুই ধরনের পাচিং ব্যবহার করে। একটি হল লাইভ পাচিং ও অপরটি ডেথ পাচিং। লাইভ পাচিং হল ফসলবান্ধব জীবিত গাছ। আর ডেথ পাচিং হল কোন গাছের ডাল। সাধারণত ক্ষেতে প্রতি একরে ১০ থেকে ১২টি বাঁশের কঁঞ্চি কিংবা গাছের ডাল পুতে দিয়ে তৈরি হয় পাচিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পাচিংয়ের (খুঁটি) উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা এবং তাদেও ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ আবাদী ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পাচিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধান ক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে।

কৃষক আমির হোসেন জানান, এ বছর আমি ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই।

অপর কৃষক শাহজাহান জানান, বাড়ীর গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুঁতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে।

নীলগঞ্জের সলিমপুর এলাকার কৃষক হরিলাল বলেন, পোকা দমনে ক্ষেতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তাতে বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতে যেসব মাছ আসে সেসব মরে যায়। এমনকি সাপ, কুচা, ব্যাঙ পর্যন্ত মরে ভেসে উঠে। কীটনাশক ব্যবহারবারী কৃষকও কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, পাচিং পদ্ধতি কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সকল কৃষকদের পাচিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষকরা। বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন