মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি থেকে: ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় মাছচাষির সংখ্যা ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও দাম কমায় বিপাকে পড়েছে চাষিরা। এ কারণে অনেক মাছের খামার এখন বন্ধ হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, নলছিটি পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের বেকার জনগোষ্ঠী এবং অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীরা মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ছিলেন। কিন্তু প্রতিবছরই খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সে হারে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে না। অন্যদিকে, মাছের খাবারের মূল্য দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মাছ চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দুস্থ মানব উন্নয়ন সোসাইটির (দুমাউস) জরিপসূত্রে জানা গেছে, নলছিটি উপজেলায় ছোট-বড় আট হাজার ৩৮৮টি মাছের খামার রয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় মৎস্য বিভাগের তালিকাভুক্ত মাছচাষি রয়েছেন ১৬৯৫ জন। গত বছর ১৫৯৫.০৬ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। নলছিটি উপজেলার চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ মাছ চাষাবাদ হচ্ছে। এ মাছ স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে ঝালকাঠি, বরিশাল ও ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ মাছের খামার ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় যুবক সম্প্রদায় জড়িত। তারা অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এসব খামার প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু এ বছর মাছের মূল্য আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাওয়ায় মাছচাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
বর্তমানে তিন-চার পিসের রুই মাছের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর এই মাছেরই কেজি ছিল ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। তেলাপিয়া মাছ ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকা। গত বছর তেলাপিয়া মাছ ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হতো।
অন্যদিকে মাছের খাবারের মূল্য গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ভাসমান খাবার ৫৫ থেকে ৬০ টাকা মূল্যে কিনতে হয়। অথচ এ খাবার গত বছর ৩০ থেকে ৩৫ টাকা মূল্যে কিনত খামার মালিকরা।
সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের মাছ চাষি কালাম ফকির বলেন, ‘‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছি। গত বছরের চেয়ে খাবার মূল্য দ্বিগুণ এবং মাছের মূল্য অর্ধেক। তাই মাছ চাষে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ বছর ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিনার হোসেন বলেন, ‘‘এ বছর ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিদেশে রপ্তানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় চাষের মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই। আবার প্রতি বছর মাছ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ক্রেতার সংখ্যা একই রকম থাকায় মাছের মূল্য বাড়ছে না।’’
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন