একই জমিতে মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত করলা চাষ

16

মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে করলা চাষ করেন কৃষকেরা। শীত কিংবা গ্রীষ্ম সব সময়ই পুষ্টি সমৃদ্ধ তরকারি হিসেবে করলার চাহিদা রয়েছে। দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় করলা চাষ এখন অনেক কৃষকের আয়ের একটি ভালো উৎস।

মেহেরপুর জেলা সদর এলাকায়, গাংনী ও মুজিবনগরে মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করেছেন কৃষকেরা। ওপরে মাচা, নিচে মালচিং পেপার পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে করলা চাষে। একই সঙ্গে দুুুুই পদ্ধতি ব্যবহার করে একদিকে যেমন ফসলের রোগবালাই কমেছে, তেমনি কমেছে কীটনাশকের প্রয়োগ। উৎপাদন খরচও কমেছে অর্ধেক।

করলা চাষিরা বলছেন, করলা চারা রোপণে মাটিতে মালচিং পেপার ব্যবহারে সেচ কম লাগে, জমিতে আগাছা জন্মায় না। আর মাচা পদ্ধতিতে করলায় পচনধরা রোগসহ রোগবালাই নেই। ফলে কীটনাশকমুক্ত সবজি পাচ্ছে মানুষ।

কৃষি বিভাগ বলছে, মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে করলা চাষ করে চাষিদের খরচ কমেছে। আর মেহেরপুরে উৎপাদিত কীটনাশকমুক্ত করলা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে।

মেহেরপুর জেলায় এ বছর প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে মাচা ও মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বারি করলা-৩, হাইব্রিড টিয়া, বুলবুলি জাতের হাইব্রিড করলার চাষ হয়। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা মোছা. আশরাফুন্নেছা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলার বিভিন্ন মাঠে দেখা গেছে, মাচার ওপর করলার সবুজ লতাপাতা আর সাদা ফুল। মাচার নিচে ঝুলছে গাঢ় সবুজ করলা। মেহেরপুর সদর উপজেলার রামদাসপুর, কুতুবপুর, ষোলমারি, সুভরাজপুর, গাংনীর সাহারবাটি, কাথুলী, ভাটপাড়া, মাইলমারি, গাড়াবাড়িয়া, মুজিবনগরেরর মোনাখালী, সোনাপুর, চকশ্যামনগর, দারিয়াপুরসহ বিভিন্ন মাঠে কৃষকরা করলার আবাদ করেছেন। মালচিং ও মাচায় দুই ভাবেই করলা আবাদ হয়েছে। দেখলে মনে হয় যেন এক মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ।

রামদাসপুর গ্রামের করলা চাষি আওলাদ হোসেন বলেন, মাটিতে করলা আবাদ করে সেচ, সার ও কীটনাশক বেশি বেশি দিতে হতো। গাছে ফুল আসার সময় বিভিন্ন মাটিবাহিত রোগে ফলন বিপর্যয় হতো। উৎপাদন খরচ হতো বেশি। এ বছর কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিয়ে মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে করলা আবাদ করে ভালো ফলন হচ্ছে। রোগবালাই নেই। একবিঘা জমিতে করলা আবাদ করতে খরচ হয়েছে ১০/১২ হাজার টাকা। প্রতি কেজি করলা পাইকারি বিক্রি করছি ৬০ টাকা ও ৭০ টাকায়। প্রতি সপ্তাহে আমার এক বিঘা জমি থেকে দুই থেকে আড়াই মণ করলা পাওয়া যায়।

গাংনীর কাথুলী গ্রামের করলা চাষি জিন্নাত আলী বলেন, এখন শীতের অনেক সবজি বাজারে উঠতে শুরু করছে। তবুও করলার চাহিদা কমেনি। মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে করলা আবাদ করেছি। কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। আমি একবিঘা জমিতে করলা আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ৩৫ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছি। আশা আছে এখনও ২০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করতে পারব। এক বিঘা জমিতে প্রায় ১০/১২ টন করলা পাব।

সাহারবাটি গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম,মোনাখালী গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন ও কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক তেজ আলী মন্ডল বলেন, বর্তমানে সার, বিষসহ কৃষি উপকরণের দাম বেশি। যত কম খরচে আবাদ তোলা যায় ততই মঙ্গল। বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা করলা চাষ করি। এক বছরও করেছি। দুই মাস যাবৎ করলা বিক্রি শুরু করেছি, এখনও করছি। আমাদের উৎপাদিত করলা দেশের সব জেলায় চাহিদা ভালো থাকায় দামও ভালো পাচ্ছি। আশা করি প্রতি বিঘা জমির করলা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ হবে।

পুষ্টিবিদ মো তরিকুল ইসলাম বলেন, করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। এলার্জি প্রতিরোধে এর রস দারুণ উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। করলায় যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ছাড়াও এতে রয়েছে বহু গুণ।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক বিজয় কৃঞ্ষ হালদার বলেন, জেলার মাটি ও আবহাওয়া সব সবজির জন্যই উপযোগী। জেলার কৃষিই একমাত্র মাধ্যম। বিশেষ করে নানা ধরনের সবজি জেলার কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আমরাও কৃষকদের প্রযুক্তির দিকে নিয়ে আসছি। এ বছর মাচায় করলা চাষ হয়েছে। মাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে মালচিং পেপার। এতে রোগবালাই কম, সেচ খরচ কম, আগাছা হচ্ছে না। কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকের উন্নয়নে কাজ করছে।