একজন সফল নারী উদ্যোক্তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জয়পুরহাটের সাজেদা

1641
পোল্ট্রি মুরগির খামার

পোল্ট্রি মুরগির খামার

জয়পুরহাট: সাজেদা খাতুন একজন সফল নারী উদ্যোক্তার নাম। নারীদের উন্নয়নে সরকারের নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছেন সাজেদা। বাবা-মায়ের সংসারে অভাবের কারণে অল্প বয়সে বিয়ের পিড়িঁতে বসতে হলেও নিজে কিছু একটা করবেন এ চেষ্টা থেকে পিছুপা হননি।

বিটিভিতে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে একজন নারীর মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প শুনে প্রথমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানালেন সাজেদা খাতুন। ২০০৩ সালে শখের বসে ২১টি লেয়ার মুরগি লালন পালনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এ কাজে পরিবারের সহযোগিতা নেন ৬ হাজার টাকা। খরচ বাদে এখানে লাভ আসে তিন মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এতে আগ্রহ বেড়ে যায়।

২০০৪ সালে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে ও মুরগির বিভিন্ন রোগ-বালাই সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এরপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৩ মাস মেয়াদী গবাদি পশু, হাসমুরগি পালন, মৎস্য চাষ, প্রাথমিক চিকিৎসা, কৃষি বিষয়কসহ ৬টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে অদম্য সাহসী সাজেদা খাতুন জেলা শহরের গুলশান মোড় এলাকায় ১৯ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তুলেছেন মুরগির খামার, ছাগল, ভেড়ার খামার, মৎস্য চাষ ও ফলদ বাগান। বর্তমানে মুরগির খামারে রয়েছে ৩ হাজার মাংসের সোনালি জাতের মুরগি, ১ হাজার ডিমের মুরগি এবং দেড় হাজার ৭ দিনে বাচ্চা। এখন সাজেদা খাতুনের নিজস্ব পুঁজির ১৫ লাখ টাকা হলেও ব্যবসায় সফলতা দেখে ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসে স্থানিয় ইসলামী ব্যাংক গ্রহণ করেন আরও ১৫ লাখ টাকা।

সব গুলো থেকে মাসিক আয় আসে প্রায় এক লাখ টাকা। অদম্য সাহসী সাজেদা খাতুন খামারের আয় থেকে বাড়ি করার পাশাপাশি ২ বিঘা জমিও কিনেছেন। বড় মেয়ে সানজিদা আকতার তুলির বিয়ে দেওয়ার খরচসহ ছেলে শাহরিয়ার হোসেনের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন খামারের আয় থেকে। তার এ কাজে স্বামী শাহাদৎ হোসেন সহযোগিতা করে থাকেন।

সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও প্রতিবেশীরা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন সফলতার গল্প শোনার জন্য। এসএসসি পাস করা একজন নারী হলেও সফলতার জন্য সমাজে এখন স্বাবলম্বী মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আনন্দ সাজেদা খাতুনের চোখ মুখে। নিজে নারী হওয়ার কারণে কাজের সুবিধার্থে খামারে আরও তিন জন নারী কর্মী রয়েছে সার্বক্ষণিক। রোগবালাই সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে মুরগির যে কোন ধরণের সমস্য হলে নিজেই তার চিকিৎসা করতে পারেন বলে জানান সাজেদা খাতুন।

এ সফলতা দেখে প্রতিবেশী নারীরাও উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি খামার গড়ে তুলছেন। পাশের খামারী লুৎফা বেগম বলেন, সাজেদা খাতুন আমাদের সামনে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাঁকে দেখেই মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানান লুৎফা বেগম।

নারী উন্নয়নে সরকারের নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য খামারী সৃষ্টি করা মাছ ও মুরগি চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন সফল আত্মকর্মী সাজেদা খাতুন বলে জানান, জয়পুরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তোছাদ্দেক হোসেন।

অদম্য সাহসী ও সফল আত্মকর্মী সাজেদা খাতুন ক্ষুদ্র ঋণে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নিকট থেকে গ্রহণ করেন সফল নারী উদ্যোক্তা পুরস্কারও ।  বিএসএস।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন