একটি সফল পেঁপে বাগান কিভাবে করবেন, সফলতার কৌশল

1401

১.জমি নির্বাচন: উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভাল। দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটিই সর্বোত্তম।

২.জাত পরিচিতি:
i.বারি পেঁপে-১(শাহী পেঁপে): স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে। কান্ডের খুব নিচ থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫০-৯৫০ গ্রাম। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে, ফুল আসার ৩-৪ মাস পর পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি প্রায় সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে।
ii)রেড় লেড়ীঃ স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে।স্ত্রী ও উভয়লিঙ্গ গাছে ফল ধরে।চারা লাগানোর ৩ মাস পর ফুল আসে।ফুল আসার প্রায় একমাস পর ফল হয়।ফল হওয়ার ৩ মাস পর অর্থ্যাৎ ৭ম বা ৮ম মাসে ফল খাওয়া যায়। কান্ডের নিচ থেকেই ফল ধরা শুরু করে। প্রতিটি ফলের ওজন ২-৩ কেজী হয়। এই গাছ ৬ মাস পর পর একটানা ৩ বছর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে রেড় লেড়ী চাষ হচ্ছে সবচেয়ে বেশী।
এছাড়া দেশী ও বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের পেঁপেরও চাষ হয়ে থাকে।

৩.চারা তৈরীঃ বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৪.চারা রোপনঃ দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিষ্কাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি নালা রাখা দরকার। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
প্রতি গর্তে ৩ টি করে চারা রোপণ করতে হয়। ফুল আসলে ১ টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলা দরকার। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা দরকার।

৫.সার ব্যবস্থাপনাঃ প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার(শুকনা গেবর), ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।

৬.অন্তরবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়।

৭.পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমনঃ
ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে।

ক্ষতির নমুনা: এ অবস্থায় বীজ পঁচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পঁচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।

অনুকূল পরিবেশ: বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া বা গোড়া পঁচা রোগের প্রকোপ খুব বেশি।

বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা: গাছের গোড়ার পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ বা কার্জেট এম বা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়াসহ চারিদিকের মাটিতে ভালেভাবে স্প্রে করতে হবে। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা দূরীভূত হয়।

৮.ফসল তোলাঃ সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।

৯.পুষ্টি মূল্যঃ পাকা পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ একটি ফল। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে।
ভেষজ গুণ: অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি ও পাকস্থলীর ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে।
ব্যবহার: পাকা পেঁপে ফল হিসেবে এবং কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯জুন২০