পেঁয়াজের এত দাম যে কক্সবাজার উপকূলে এক মণ লবণের বিনিময়েও মিলছে না এক কেজি পেঁয়াজ। সংকটের অজুহাতে প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায়।
গতকাল সকালে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া, টেকপাড়া, বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, মিয়ানমার ও মিসরীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে।
এদিকে প্রতি মণ লবণ (কালো ও সাদা) বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫৫ টাকায়। প্রতি মণ লবণে অতিরিক্ত দিতে হয় (পানিতে নষ্ট হয় এমন অভিযোগে) আরও ৫-৭ কেজি লবণ। এই হিসাবে এক মণ লবণ বিক্রির টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ মিলছে না।
শহরের রুমালিয়ার ছড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ রওশন আকতার বলেন, লবণ এবং পেঁয়াজ ছাড়া রান্নাই হয় না। মাঠে প্রতি কেজি লবণ তিন-চার টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত লবণ কিনতে হয় ৩০-৪০ টাকায়। অন্যদিকে ৪২ টাকার মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ তো ১৩৫ টাকা। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
ইউনিয়নের আছারবনিয়া গ্রামের চাষি আজিজুল হক বলেন, গত মৌসুমে তিনি ২৮ কানি (৪০ শতকে ১ কানি) জমিতে লবণ উৎপাদন করেন। এ সময়ে চড়া মূল্যে বিক্রির জন্য তিনি ৫০০ মণ লবণ মজুত করেছিলেন। কিন্তু লবণের দাম কমে যাওয়ায় তাঁকে লোকসান দিয়ে মজুত লবণ বিক্রি করে দিতে হয়েছে। গতকাল তিনি প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেন ১৫৫ টাকায়।
এক মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে মিয়ানমারের ২১ হাজার টন পেঁয়াজ, তবু সংকট কাটছে না।
টেকনাফের কয়েকজন চাষি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেড় লাখ টনের মতো লবণ পড়ে আছে। লোকসান দিয়েই তাঁরা লবণ বিক্রি করছেন। প্রতি মণ লবণে উৎপাদন খরচ ১৭৫ টাকা। অথচ কালো লবণের দাম প্রতি মণ মাত্র ১২০ টাকা।
বিসিকের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রান্তিক চাষিদের কাছে মজুত আছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন লবণ। কারখানার মজুত আছে আরও প্রায় ২ লাখ টন।
অন্যদিকে, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে এক মাস ধরেই মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার আবছার উদ্দিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার এক দিনেই মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৫৪২ মেট্রিকটন পেঁয়াজ। পুরো অক্টোবর মাসে এসেছে ২০ হাজার ৮৪৪ মেট্রিকটন। তারপরও বাজারের পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মিয়ানমার থেকে আরও বেশি পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ