এবার ফুলের মৌসুমের শুরুতেই ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বাগানে ফুটেছে গোলাপ, গাদা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস ও জারবেরাসহ চোখ ধাঁধানো নানা ফুল। চলতি মৌসুমে বড় লাভের আশা করছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর চাষিরা। তাদের ভাষ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা হরতাল-অবরোধ না থাকলে এই মৌসুমে ১০০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে।
ফুল চাষি এবং বিপণনে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত নভেম্বর এবং চলতি মাসে হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহে দ্বিগুণ অর্থ গুনতে হয়েছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে প্রায় ছয় হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে গদখালীর ফুলের চাহিদা ও বিক্রি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে বাড়ে দামও।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ক্রিসমাস, ইংরেজি নববর্ষ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা ও শহীদ দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে মোটা অংকের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন গদখালীর ফুল চাষিরা।
গদখালীর পানিসারা এলাকার ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এবার চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ আর গাঁদা ফুল চাষ করেছি। ইতোমধ্যে বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো পাচ্ছি। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে জেলার বাইরে ফুল পাঠাতে পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে আমাদের।’
এ বছর এক বিঘা জমিতে জারবেরা ও রজনীগন্ধা চাষ করেছেন একই এলাকার ফুল চাষি মো. সাইফুল ইসলাম। হরতাল-অবরোধের কারণে দাম কম পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে অনুষ্ঠান কিংবা দিবসগুলো সুন্দরভাবে উদযাপিত হয় না। তখন ক্রেতা পর্যায়ে আমাদের ফুলের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়। প্রতি বছর নানা কারণে চাষিরা দাম পান না। এবার বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। হরতাল-অবরোধ না থাকলে আশা করছি, দিবসগুলোতে ফুলের দাম বাড়বে।’
গদখালীর বাজারে ফুল বিক্রি করতে আসা চাষি আব্দুর রহমান বলেন, ‘আজকের বাজার বেশ ভালো। গাঁদা ফুল নিয়ে এসেছিলাম। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পেয়েছি। আশা করছি, সামনের দিবসগুলোতে দাম ঠিক থাকবে।’
মৌসুমের শুরুতে গদখালীর ফুলের বাজার বেশ ভালো, দামও আশানুরূপ বলে উল্লেখ করেছেন যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের কারণে আমরা শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু এখন ফুলের ভালো দাম পাচ্ছি।’
আব্দুর রহিম বলেন, ‘আসছে বিজয় দিবস, বড়দিন, থার্টিফার্স্ট, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে এই ফুলের বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার ওপরে ফুল বিক্রি করতে পারবো।’
ফুল ব্যবসায়ী এই নেতা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমরা চাই প্লাস্টিকের ফুলের আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। প্লাস্টিকের ফুল আমাদের ফুলের বাজারে হুমকিস্বরূপ।’