এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে কাজ করছে সরকার ও পোল্ট্রি শিল্প

449

wapsa_2

সবার জন্য নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংসের যোগান নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করছে সরকার ও পোল্ট্রি শিল্প।পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কে খামারিদের জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে খামার না করার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার হচ্ছে। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।

সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত “পোল্ট্রি ফর হেলদি লিভিং” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও ওষুধের দোকানে গেলেই এন্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। ড্রাগ অথরিটিকে এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, প্রাণিজ আমিষের মান নিশ্চিতকরণে পশু ও মৎস্য খাদ্য আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। এর পাশাপাশি পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা সংশোধনেরও কাজ চলছে।
প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে যা হচ্ছে তা প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও মন্তব্য করেন ডা. ভৌমিক।

তিনি আরো বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে সরকার, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও খামারিদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধানের কথা বলা হয়েছে। শুধু দানাদার খাদ্য খেলে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে না, আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের হার বাড়াতে হবে।

ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, শুধু ভাত খেয়ে উন্নত জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। পুষ্টির চাহিদা পূরণে ডিমের কোন বিকল্প নেই। সরকারের সহযোগিতা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে পোল্ট্রি ফিড নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না এবং ২০২৪ সালের মধ্যে পোল্ট্রি পণ্য রফতানি শুরু করা সম্ভব হবে।

গোলটেবিল বৈঠকের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক. ড. নাথুরাম সরকার বলেন, তথ্য বিভ্রাটের কারণে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এতে সাধারণ মানুষ ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। তাই সংবাদ পরিবেশনের আগে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অহেতুক আতংকের কারণ না হয়।

ওয়াপসা-বিবি’র সহ-সভাপতি ইয়াসমীন রহমান বলেন, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে, গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে এবং বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে পোল্ট্রি’র কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, শর্করার পরিমানে কমিয়ে- ডিম ও মুরগির মাংস গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ২০২১ সালের চাহিদা মেটাতে হলে বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি ডিম; ২০ লাখ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদন করতে হবে।

ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান জানান, আগামী ৫-৬ মার্চ ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার’ এবং ৭, ৮ ও ৯ মার্চ বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে ‘১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো’ অনুষ্ঠিত হবে।

সেমিনারে মোট ৯৯টি সায়েন্টিফিক পেপার উপস্থাপন করা হবে। পোল্ট্রির পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা এবং পোল্ট্রি ব্রিডিং ও জেনেটিকস বিষয়ে এমন ১৩জন বিজ্ঞানী ও গবেষক এবার বাংলাদেশে আসছেন যাদের ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বড় বড় পোল্ট্রি শো’তেও পাওয়া যায় না। বিশ্বের ২২টি দেশের প্রায় ২৩০টি কোম্পানি এবারের পোল্ট্রি শো’তে অংশ নিচ্ছে। এ আয়োজন উপলক্ষ্যে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

ওয়াপসা-বিবি’র সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা সাধারণের সাথে পোল্ট্রি’র সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে এ বছর ‘ পোল্ট্রি কুকিং কনটেস্ট’, ‘ডিম সেলফি কনটেস্ট’ ও চিকেন সেলফি কনটেস্ট’ এর আয়োজন করা হয়েছে-অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনকে বেগবান করতে “পোল্ট্রি ফার্মারস এনলাইটেনমেন্ট প্রকল্প” এবং যুব সমাজকে পোল্ট্রি ব্যবসায় আগ্রহী করতে “ইয়ূথ এন্টারপ্রেশিপ প্রজেক্ট” এর উদ্বোধন করা হবে ৭ মার্চ।

তিন দিনব্যাপী পোল্ট্রি শো’র সংবাদ কাভারের সুবিধার্থে রিপোর্টারদের জন্য ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে সারাদিন মাইক্রোবাসে পিক অ্যান্ড ড্রপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে ফ্রি শাটল বাস। এই মেগা ইভেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে হবে: ওয়েবপেজ: wpsa-bb.com/ এবং পোল্ট্রি শো সবার জন্য উন্মুক্ত।

গোলটেবিল শেষে প্রেসক্লাবের সামনে রিকশা চালকদের মাঝে ডিম ও মুরগির মাংসের স্লোগান সম্বলিত টি-শার্ট বিতরণ করা হয়।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন