[metaslider id=”11403″]
লো-প্যাথজনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। একদিন বয়সী বাচ্চার উৎপাদন ২৯ শতাংশ এবং উৎপাদন খরচ ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্যিক লেয়ার শিল্পে বছরে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লো-প্যাথজেনেসিটি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা : একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা” শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রাইসুল আলম মন্ডল এ আশ্বাস দেন।
এসিআই লিমিটেডের সহযোগিতায় এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)
রাইসুল আলম বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্পে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল খাত হচ্ছে পোল্ট্রি। প্রাণিসম্পদের অন্যান্য খাতের চেয়ে পোল্ট্রি সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, লো-প্যাথজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। ভ্যাকসিনের প্রয়োজন আছে এবং সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক। তবে বিদেশি ভ্যাকসিনের বাজার তৈরি না করে দেশেই ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে এখন অনেক মানসম্মত ওষুধ কোম্পানি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কিংবা প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে, রাতারাতি বিজ্ঞানী তৈরি করা সম্ভব নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এক সাথে কাজ করার উপর জোর দেন জনাব মন্ডল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পূরণে পোল্ট্রির বড় ভূমিকা আছে। তাই এখাতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, Highly Pathogenic Virus এর ভ্যাকসিন আমদানি ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হলেও Low Pathogenic Virus এর ভ্যাকসিন আমদানি কিংবা ব্যবহারের অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বহুবার এ নিয়ে কথা হয়েছে, নীতি-নির্ধারকদের উপস্থিতিতে পোল্ট্রি শিল্পের একাধিক অনুষ্ঠানে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে কিন্তু তেমন কোন অগ্রগতি নেই।
মসিউর রহমান বলেন, কালক্ষেপন না করে টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া প্রয়োজন কারণ দিন যত যাচ্ছে জীবানু আরও শক্তিশালী হচ্ছে, লোকসানের পরিমান বাড়ছে।
তিনি বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে জীবনিরাপত্তা মেনে চলতে চাপ দিতে হবে এবং একাজে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি খামারকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। পোল্ট্রি’র রোগ-বালাই পর্যবেক্ষণে একটি শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠনেরও প্রস্তাব দেন জনাব মসিউর।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ (ও.আই.ই) এর হিসাব মতে- ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫৫টি সংক্রমনের ঘটনা নথিভূক্ত হয়েছে। এ সংক্রমণের ফলে দেশীয় শিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ফর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা’র পরিচালক ডা. মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এল.পি.এ.আই ভাইরাসের কারণে ২০১১ থেকে অদ্যবধি ব্রিডার ও কমার্শিয়াল লেয়ার, সোনালি এবং ব্রয়লারে সংক্রমণ বেড়েছে। হেনস-হাউসড (এইচ.এইচ) প্রোডাকশন ১২৯ থেকে ৯২টিতে নেমে এসেছে। ডি.ও.সি প্রোডাকশন ২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং খরচ বেড়েছে ৫৯ শতাংশ। ব্রয়লার বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ভেটেরিনারি সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে বার্ড-ফ্লু সংক্রমণের আরও আগে থেকেই লো-প্যাথজনিক ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ জীবানুর কারণে মোট প্রায় ১৬২টি সংক্রমনের ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার বলেন, সবচেয়ে কম মূল্যে প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হচ্ছে পোল্ট্রি খাত। মাথাপিছু বার্ষিক মাংস খাওয়ার পরিমাণ ৮.৫ কেজিতে উন্নীত করতে হলে পোল্ট্রিকে গুরুত্ব দিতে হবে কারণ ৬০ শতাংশ যোগানই আসবে এ খাত থেকে।
এসিআই লি. এর এগ্রি বিজনেস বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. এফ.এইচ আনসারি বলেন, H9N2 টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিলেই খামারিদের কান্না থামবে, ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন বাড়বে, পোল্ট্রিখাতে স্বস্তি ফিরে আসবে।
উন্মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এমদাদুল হক বলেন, H9N2 বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত যেন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। যেহেতু এটি কোন নাটিফায়েবল ডিজিজ নয় তাহলে টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়ারই বা প্রয়োজন কেন?
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) মহাসচিব এম.এম খান, এ জীবানুর সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
ওয়াপসা-বিবি’র সদস্য ডা. বিশ্বজিৎ রায় বলেন, দেশীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেনতেন ওষুধ কোম্পানীকে অনুমতি দেয়া হলে ভয়ংকর পরিণতি নেমে আসবে। কাজেই যে সকল কোম্পানীর সে সক্ষমতা ও প্রযুক্তি রয়েছে শুধুমাত্র তাদেরই এ ধরনের স্পর্শকাতর টিকা প্রস্তুতের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন