গ্রীস্মকাল শুরুর দিকেই গরম বাড়তেই রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস হারিয়ে গেছে। বেশ কয়েক দিন ধরেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। অনেক সময় ঘন্টায় দুই থেকে তিন বারও লোডশেডিং, ইফতার ও সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার গেলে টানা দুই-তিন ঘন্টা বিদ্যুৎ এর খবর থাকছে না। প্রচন্ড গরমে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিঘিœত হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের সেচসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম। পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করে প্রচন্ড হিমশিম খাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। যার কারণে এলাকাভেদে চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ কম মিলছে। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ না বাড়লে সামনে ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়বে বলে আশংকা তাদের। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) তথ্যমতে, এখন বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট, যা সামনে বেড়ে সাড়ে ১৭ হাজার হতে পারে। তবে গত দু-তিন দিন সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায় কক্সবাজার-চট্টগ্রামে পল্লী বিদ্যুতায়ন উন্নয়ন বোর্ডের এলাকায় চরম লোডশেডিং এ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জরুরিভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ বাড়ানো ও স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয় এলাকায় সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।
০৬ এপ্রিল ২০২৪ কক্সবাজার-চট্টগ্রামে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকায় তীব্র লোডশেডিং বন্ধে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো ও স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয় এলাকায় সরবরাহের দাবিতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবন্দ বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকাগুলোতেও ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কারনে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ছয় থেকে আট ঘণ্টা, কোথাও ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। আবার চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে, যা প্রকারান্তরে এই এলাকার মানুষের প্রতি চরম বৈষম্যের সামিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারের বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি’র কাছ থেকে কিনে গ্রাম এলাকার গ্রাহকদের সরবরাহ দেয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। ফলে সেখানে বৈষম্য করে পিডিবি। পিডিবি নিজেদের জন্য বেশি রেখে বাকিটা পল্লীবিদ্যুতকে দেয়। ফলে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকগন যারা গ্রামে থাকেন সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার ও ভোগান্তিতে পড়েন।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অঞ্চলে চাহিদার বেশি উৎপাদন, তবুও চট্টগ্রামে বৈষম্যমুলকভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোতে গড়ে ১৬৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর চট্টগ্রামের চাহিদা মাত্র ১১৮০-১২০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রæপের বাঁশখালীতে অবস্থিত এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন ৩৮৫ থেকে ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। শিকলবাহায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। মহেশখালী মাতারবাডীর ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬৩০ থেকে সাড়ে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অপরদিকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজারের খুরুস্কুল বায়ো বিদ্যুত থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে এলাকার মানুষকে ভিটেবাড়ী ছাড়া হতে হয়েছে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল এসমস্ত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো উৎপাদন শুরু করলে এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলবে, কৃষি, শিল্প ও বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংকট হবে না। কৃষি ও শিল্পে সম্প্রসারণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরো উল্টো। এসমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুুৎ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলে না দিয়ে তা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ এ। চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে রেখে সববিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।