কচুরিপানার আদি নিবাস ব্রাজিলে। কচুরিপানা মূলত জলজ উদ্ভিদ। গাছ পানিতে ভেসে থাকে এবং শিকড় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। যার মাধ্যমে গাছ তার প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে।
আমাদের দেশের নদী, খাল, বিল, মজাপুকুড় ও ডোবা-নালাতে কচুরিপানা খুব সহজে বেড়ে ওঠতে দেখা যায় এবং এর উৎপাদন উপযোগী জলবায়ুও বেশ সহায়ক। তাই তো এদের বংশ বিস্তার বছরের পর বছর টিকে থাকতে দেখা যায়। গাছের বৃদ্ধি খুবই দ্রম্নত গতিতে হয়। এরা পানি প্রবাহের সঙ্গে এক জায়গা হতে অন্যত্র ভেসে গিয়ে এর বংশ বিস্তার ঘটায় খুব সহজে।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে জলাভূমির পানি শুকিয়ে গেলেও আদ্র ভিজা মাটিতে টিকে থাকতে এদের কোনো সমস্যা হয় না। এ কচুরিপানা অনেক স্থানে অধিক পরিমাণে বৃদ্ধির ফলে জলজ পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীর টিকে থাকা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছের গঠন- পাতা গাঁঢ় সবুজ, গোলাকার, বড় এবং বেশ পুরু। গড় উচ্চতা গড়ে প্রায় ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
লম্বা ডাঁটায় অসংখ্য নরম কোমল পাপড়িযুক্ত বেগুনি সাদা ও হলুদ মিশ্রণের ফুল ফুটতে দেখা যায়। ফুল গন্ধহীন। এর ফুল ফোটার প্রধান সময় গ্রীষ্মের শুরু বর্ষা এবং হেমন্তে। তবে সবচেয়ে বেশি ফুল ফুটতে দেখা যায় হেমন্তে। এ সময় প্রায় সবখানের জলাধারে ফুলে ফুলে ভরে যায়। যা খুবই দৃষ্টি নন্দন। গ্রামাঞ্চলে কচুরিপানা গোখাদ্য হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
এ ছাড়া ইদানীং গবেষণায় দেখা গেছে, কচুরিপানা থেকে কাগজের মন্ড ও উন্নতমানের কাগজ উৎপাদন করা সম্ভব এবং তা আমদানিকৃত কাগজের সঙ্গে তুলনায় খারাপ মানের নয়। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক ফলাফলও পেয়েছেন। কচুরিপানা থেকে কাগজ উৎপাদনে একদিকে খরচ কম পড়বে অন্যদিকে উলেস্নখযোগ্য তেমন কোনো যন্ত্র ব্যবহার দরকার পড়বে না। ফলে বাঁশের ওপর চাপ কমবে এবং পরিবেশসহ সব অংশে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।