(১) head twist বা ঘাড় বাঁকা রোগঃঃ-
আজ যেটা নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হলো কবুতরের head twist বা ঘাড় বাঁকা রোগ। এই রোগটা একটা দীর্ঘ মেয়াদী রোগ। অনেকের এটার প্রতি ভুল ধারনা রয়েছে, সেটা হলো- প্রায় অনেকেই মনে করেন এটা সর্বজনীন একটা রোগ। তার মানে জীবনেও ভালো হবে না। আসলে সেটা তাদের নিতান্তই ভুল ধারনা। সব রোগের মত এটাও ভালো করা সম্ভব।
রোগ হওয়ার কারনঃ- কবুতরের শরীরে যখন PARAMYXOVIRUS এর আবির্ভাব ঘটে তখনি মূলত এই রোগটা দেখা দেয়। আর এই ভাইরাস টা অধিকতর ক্ষেত্রে ভিটামিন এর অভাবে হয়ে থাকে। এমনকি দীর্ঘ দিন অসুখের ফলে উচ্চ মাত্রার এন্টিভায়োটিক অধিক ও দীর্ঘকাল ব্যাবহার এর ফলে এই রোগটা দেখা দেয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এবং কি উল্টা পাল্টা ঔষধ প্রয়োগ বা না বুজে ঔষধ প্রয়োগের ফলে এই সমস্যা হয়ে থাকে।
লক্ষনঃ- কবুতরের ঘাড় উল্টে যাবে, ঘাড় ঘুরাতে থাকবে, ঝাকুনির মত ঘাড় নাড়াবে এবং ঘাড় এ অন্যান্ন লক্ষন ও দেখা দিতে পারে। কবুতর খাদ্য খেতে সমস্যা হবে।
করনীয়ঃ- কবুতর কে অবশ্যই HAND FEED দিতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনি তরল জাতীয় খাবার ব্যাবহার করতে হবে। শক্ত খাবার ও দিতে পারেন। একেবারে বেশী না দিয়ে কয়েকঘন্টা পর পর অল্প অল্প করে খাওয়াতে পারেন।
ঔষধঃ- NEOBION অথবা NEORO-B অথবা NEOROBION.
যেই কোন একটা ইঞ্জেকশন ব্যবহার করুন।
মাত্রা বা প্রয়োগ বিধিঃ- এক সিসির তিন ভাগের এক ভাগ করে প্রতিদিন ভোরে বুকের মাংসে প্রয়োগ করুন। কবুতরের আকার অনুযায়ী মাত্রা বাড়াতে পারেন সর্বোচ্চ আধা সিসি পর্যন্ত। তবে অবশ্যই ইন্সুলেন এর সিরিঞ্জ ব্যাবহার করবেন। তবে দেখবেন ইঞ্জেকশন যেনো চামড়ার নিচে না পড়ে অবশ্যই মাংসে পড়ে। চামড়ায় নিচে পড়লেই পুলে যেতে পারে। প্রত্যেকদিন বুকের এক পাশে দিবেন না। খেয়াল করে এক দিন এক পাশে প্রয়োগ করবেন।
** ইঞ্জেকশন এর ডোজ টা ১২ থেকে ১৫ দিন দিতে থাকেন। এবং সর্বদা দৈনিক ২ থেকে ৩ ঘন্টা রোদে দিন। সর্বশেষ ভাল হওয়ার পরে ৭ দিন ক্যালপ্লেক্স এবং ভিটামিন ডি এক সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে, ক্যলসিয়ামের সাথে ভিটামিন ডি না দিলে ক্যলসিয়াম শরীরে ঠিকমতে শোষিত হয় না।
বিঃ দ্রঃ- সবসময় নিবিড় পর্যবেক্ষণ এ রাখবেন। ইনশা-আল্লাহ আপনার কবুতর সুস্থ হয়ে উঠবে।
(২) ডিমের থলিতে ডিম আটকায়ঃঃ-
** আমাদের অনেকের কবুতরের-ই অনেক সময় ডিম পাড়ার আগ মুহূর্তে ডিমের থলিতে ডিম আটকায়। তার ফলে কবুতর পায়খানা করতে পারে না। খাদ্য খেতে চায় না। খাদ্য হজমেও সমস্যা হতে পারে। আমরা অনেকেই বিষয়টা খেয়াল করি না। এতে করে আমরা অনেক বিপাকে পড়ি এবং সর্বশেষ কবুতর টা মরা যায়।
** আজ সেই দুর্ভোগের একটি সুন্দর সমাধান নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি একটু হলেও উপকৃত হবেন।
মহান আল্লার উপর ভরসা রাখুন। এবং চিকিৎসা শুরু করুন।
সর্বপ্রথম যেটা বলবো “কবুতরকে খুব হয়রান করবেন না মানে বেশী নাড়াচাড়া করবেন না।
দ্বিতীয়ত নিন্মোক্ত পদ্ধতি অনুস্মরণ করে চিকিৎসা করুন।
** “PULSATILLA MOTHER” (হোমিও)- একটু পানির সাথে ৩ ফোটা করে ২ ঘন্টা পর পর খাওয়াতে হবে।
** তার সামনে স্যালাইন দিতে পারেন খাওয়ার জন্য।
** জরায়ুতে নারিকেল তেল খুব আলতো ভাবে আঙ্গুল দিয়ে লাগিয়ে দিন।
** হালকা গরম পানিতে গোসল এর ব্যাবস্থা করতে পারেন।
** তবে কবুতর কে সর্বোপরি উষ্ণ ঘরে রাখার চেষ্টা করবেন।
** নর থেকে আলাদা করে রাখুন, এবং শান্ত জায়গায় রাখুন।
উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো অনুস্মরণ করেই আপনি কবুতরকে বাঁচাতে পারেন ।
(৩) চোখ উঠা বা চোখ লওয়াঃঃ –
শীতকাল চলে আসছে ,তার সাথে দল বেধে আসবে কবুতরের বিভিন্ন রোগ। তাই আজ শীতের একটি খুব পরিচিত ভাইরাস জনিত রোগ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।
*লক্ষনঃ- চোখ ফোলা দেখা যাবে, পানি পড়বে, চোখে ময়লা আটকাবে। এটা ধুলা বালি বা শুকনা মল থেকে বেশি হয়ে থাকে।এটা মুলত ভাইরাস জনিত রোগ আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করবেন আপনার কবুতরের ঘরে যে কোন কারনে গ্যাস হয়েছে কিনা। অথবা অপরিস্কার কিনা!!!
যদি এইগুলোর ব্যাপারে দ্রুত কোন ব্যাবস্থা নিতে পারেন, তাহলে এই রোগটি আশঙ্কা ৭০ ভাগ কমাতে সক্ষম হবেন।
*চিকিৎসাঃ- এই সমস্যা দেখার সাথে সাথে অসুস্থ কবুতর কে দ্রুত আলাদা করবেন, এবং সিনাজেন ড্রপ নাভানা কম্পানি, দাম ১০০ টাকা, আক্রান্ত চোখে এক ফোটা করে দিনে তিনবার দেবেন।
(৪) সাল্মনিলা বা (SALMONELLOSIS)ঃঃ-
সবুজ এবং চুনা পাতলা পায়খানা করবে, খাবার খাবে না,বারবার বোমি করবে, ঝুম ধরে বসে থাকবে, সঠিক চিকিৎসা না করতে পরলে কবুতর মারা যাবে। এটা এই মৌসুমে আমাদের অনেকের কবুতরের রীতিমত হয়ে থাকে।
সতর্কতাঃ- রোগাক্রান্ত কবুতরকে সাথে সাথে খামার থেকে বাহির করে পেলুন। না হলে রোগাক্রান্ত কবুতরের মল বা বোমি থেকে এই রোগ লফ্টে ছড়িয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ- **
রোগাক্রান্ত কবুতরকে ইরোকট বা কেমোনিড বা মাইক্রেনিড যে কোন একটা, হাপ গ্রাম। ফ্লাজিল সিরাপ, ১ মিলি।। ১০ মিলি পানির সাথে গুলিয়ে দৈনিক সকাল ও রাতে খাওয়াবেন, ঔষধ খাওয়ানোর ১ ঘন্টা পর রাইস স্যালাইন খাওয়াবেন< ১ চামুচ ১০ মিলি কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে>।।
বাকি ভালো কবুতর গুলোকে ইরোকট বা কেমোনিড বা মাইক্রেনিড যে কোন একটা ২ গ্রাম, ১ লিটার পানির সাথে গুলিয়ে একটানা ৩ দিন খাওয়াবেন, অার হাতে দরে খাওয়ালে রাতের বেলায় ১০ ml করে প্রিভেন্টিক ডোজ হিসেবে খাওয়াতে পারেন। রাইস স্যালাইন এর দরকার নাই।
ইনশা-আল্লাহ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ৮০%।
(৫) কবুতরের ডিম জমে নাঃঃ-
চিকিৎসাঃ–
**এটা মুলত আপনার নর বা পায়রার সমস্যা। অবশ্যই এটার সঠিক চিকিৎসা আছে।
ঔষধঃ- ADISOL. {এটা ভেটেনারি ঔষধ }।
মাত্রা বা প্রয়োগ বিধিঃ 1 ml করে ৩ দিন অসুস্থ পায়রাকে খাওয়াবেন।
আর সবগুলোকে এই ঔষধ টা প্রতি লিটার পানিতে 1ml পরিমান দিয়ে ৩ থেকে পাঁচদিন খেতে দিন। স্বাস্থ্যগত ভাবে উপকার পাবেন। এটা 60ml এর লিকুইড বোতল।।
(৬) অামার কবুতরে ডিম পাড়ে নাঃঃ-
এটা অনেক ধরনের সমস্যা থেকে হয়ে থাকে, যেমন অনেক দিন কৃমির কোর্স না করালে। ভিটামিন মিনারেল ঠিক মত না দিলে। কবুতর বান্জা হয়ে গেলে। বেশি বেশি ডিম বাচ্চা নিলে। হাই এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার কারনে ও এই সমস্যা হতে পারে।।
*লক্ষনঃ- নর- মাদি খুব সেক্স করে কিন্তু ডিম পাড়ে না। বা ডিমের ঝুড়ি এবং খড় কুচার উপর বসে থাকে এবং উম দেয় কিন্তু ডিম পাড়ে না। আবার অনেক কবুতর বসে বসে কুচা উম দিতে দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ– Max Grower নামে একটা মাল্টিভিটামিন আছে সেটা মাসে ৩-৫ দিন, এবং এমাইনো এসিড Hiprachok দেবেন ৩-৫ দিন। আর নিয়মিত কৃমির কোর্স। সাল্মনেল্লা কোর্স করান। যথারিতি অন্য সব ভিটামিন মিনারেল খাওয়ান। এবং ভিটামিন কে দেন, এবং রেস্টে রাখুন কিছু দিন। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।।
(৬) কবুতরের ক্যাঙ্কার বা ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগঃঃ-
কিভাবে ছড়ায়ঃ
জীবানুটি (trichomonad) ছড়ানোর জন্য দুটি কবুতরের মধ্যে একটা intimate contact বা নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হবে। সাধারনত লালা বা pigeon milk এর মাধ্যমে এ জীবানুটি ছড়িয়ে থাকে। লালার মাধ্যমে খাবার এবং পানি দুষিত হয়ে পড়ে এবং যখন একটি কবুতর পানি খায় তখন জীবানু মুখ থেকে সাতরিয়ে পানিতে চলে আসে। এরপর যখন আরেকটি কবুতর সেই পানি পান করে তখন সে শুধু পানিই পান করে না তার সাথে জীবানুও ঐ পানির সাথে খেয়ে ফেলে। আবার যখন আক্রান্ত কবুতর শষ্যের দানা বেছে বেছে খায় তখন তার মুখ থেকে যে শষ্যদানাগুলো পড়ে যায় তার প্রত্যেকটির সাথেই অল্প পরিমানে লালা মিশ্রিত হয়ে যায়। এভাবেই খাদ্যের পাত্রেও জীবানু ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতর থেকে বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময়ও জীবানু বাচ্চার দেহে চলে যায়। তাই যদি সেরকম কোন সম্ভাবনা তৈরি হয় তবে আগে থেকেই treatment নেয়া ভালো বলে আমি মনে করি।
লক্ষণঃ
মুখের ভেতর হলুদ বা সাদা রঙ–এর যে বস্তুটি দেখতে পাচ্ছেন ওটাই ক্যাঙ্কার।
Pharyngeal Form: এটাই সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। খামারিগণ সাধারনত তাদের কবুতরের গলায় হলুদ বা সাদা বর্ণের একটা বস্তু দেখতে পান। এটা অনেক সময় এতোই বড় হয় যে তা অনেক সময় খাবার গ্রহণ এমনকি শ্বাস নিতেও বাধা সৃষ্টি করে।
খুব তীব্র রোগে canker দেহের আভ্যন্তরিন অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আক্রান্ত করে। প্রায়শই দেখা যায় লিভারে। উদাসিনতা, উসকো-খুসকো পালক, ডায়রিয়া এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এবং কি না খেয়ে অনেক কবুতর দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং লিভার অকার্যকর হয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কবুতরগুলো মারা যায়।
চিকিৎসাঃ
Metronidazole এ রোগের বিরুদ্ধে বেশ ভালো কাজ করে। ২০০ মিলি গ্রাম-এর একটি ট্যাবলেট প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের জন্য চার ভাগের একভাগ করে দিনে একবার করে খাওয়ালেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অথবা রিবোসিনা বা রিবোপ্লাবিন ১টা করে দিনে ২ বার খাওয়াবেন, এভাবে ৫-৭ দিন চলবে। আর মুখের বিতরের ময়লাটা একটা কটনবার দিয়ে বাহির করার চেস্টা করুন।।
(৭) জীবানুনাশক ব্যবহারঃঃ-
কার্যকরী ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করুন। প্রতিদিন বা সপ্তাহে ২ দিন। যেমন জিবানুনাশক হিসাবে টিমসেন, ভিরকন এস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন অনেকে টিমসেন খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে খাওয়ানোর মাত্রা হবে ১গ্রাম/৪লিটার পানিতে ৪-৬ ঘণ্টার জন্য।
(৮) ভিটামিন-ই ও সেলিনিয়ামঃঃ-
সেলিনিয়ামের ভাইরাস প্রতিরোধী গুণ রয়েছে। যা ভাইরাসকে মারতেও সহায়তা করে তাই সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ভিটামিন-ই ও সেলিনিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে অনেক কোম্পানির ই-সেল পাওয়া যায়, যেমনঃ E-Sel(Square), Sel-E(Popular), Bio-Sel-E(Avon), Selcon forte (Prime care) ইত্যাদি। এর যেকোন একটা ১মিলি/লিঃ-এ প্রয়োগ করে বেশ ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে।
(৯) নাক দিয়ে পানি পড়ে, সর্দি ভাবঃঃ-
এখন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়া পড়ছে। এই সময়ে পাখিদের শ্বাসতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া-জনিত রোগ দেখা দেয়। এর ফলে কবুতরের ওজন কমতে থাকে। নাক দিয়ে পানি পড়ে, সর্দি ভাব দেখা দেয়। অনেক সময় খোত খোত শব্দ করে। এভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে কবুতর মারা যায়। পাখিদের পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ সমূহের চিকিৎসার জন্য, ভাল ভ্যাটেনারি ঔষধের দোকান থেকে Cosumix Plus বা ডক্সি-অক্সি কিনে এনে ,, নরমাল ডোজ 1 গ্রাম 1লিটার পানিতে। যদি ঠান্ডার পরিমান খুব বেশি হয় তাহলে 2গ্রাম 1 লিটার পানিতে ৫-৭ দিন দিতে হবে। উক্ত নিয়মে মিক্সকরে 6ঘন্টা পর্যন্ত কবুতরে যতটুকু খেতে পারে। বাকিটা ফেলে দিতে হবে এবং পরের দিন আবার নতুন করে বানিয়ে দিতে হবে।।
(১০) কবুতরের কৃমি বা কীট রোগ:(Internal Parasites)ঃঃ-
কৃমি সংক্রমণ কবুতরের অবস্থার উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কবুতরের পারামক্সি,সাল্মনিল্লা এর পর সবচেয়ে মারাত্মক যে রোগ সেটা হল Internal & External Parasites । আমরা এখানে Internal Parasites বা কৃমির ব্যাপারে আলোচনা করব। কৃমির কারনে কবুতরের ওজন হ্রাস, খারাপ moult, ডায়রিয়া, এবং ক্লান্তি ছাড়াও আরো উপসর্গ থাকতে পারে। এটি ঋণাত্মক উর্বরতা প্রভাবিত করতে পারে। Hairworms roundworms আর পায়রা জন্য ক্ষতিকর। যদি সময় মত এর চিকিৎসা না করা হয় তাহলে কবুতরের মৃত্যু অনিবার্য।
লক্ষনঃ-
) কবুতরের পাখা ঝুলে যাওয়া।
) খাবারে অরুচিও পানি বেশি খাওয়া।
) বিষ্ঠার সাথে কৃমির টুকরা বের হাওয়া।
) ডাইরিয়া মত পানি পায়খানা করা।
) কবুতরের ওজন হ্রাস।
) ডিম ঋণাত্মক উর্বরতা।
) ফিতা কৃমির জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
কারণ: – অপরিষ্কার খাবার,পানি, বা অন্য কবুতর থেকে, বা আক্রান্ত কবুতরের পুরাতন বিষ্ঠা থেকেও হতে পারে।
ঔষধ ও চিকিৎসা:
Wormazole / Asca piller / Panacure / Avinex / ইত্যাদি পায়রার জন্য ভাল ঔষধ হিসাবে কাজ করে।
মাত্রা:
১। Wormazole- ছোট পায়রার জন্য 2/3 ড্রপ, আর বয়স্কদের PG জন্য 4/5 ড্রপ। এবং খুব ছোট বাচ্চা কে ক্রিমির ওষুধ প্রয়োগ করবেন না।
২। Asca Pilla: প্রতিটি পায়রার জন্য 1 টা ট্যাবলেট।
৩। Panacure: প্রতিটি পায়রার জন্য 1/8 ট্যাবলেট।
4.Avinex: পানি ১ লিটার সঙ্গে ২ GRM পাওডার।
6.Ivermectin বা অাইভারমেক বা কেমিকটিন। এটা দিয়ে পায়রার মশা, মাছি ইত্যাদি দূর করতে পারবেন। এটি পায়রার শরীর (ঘাড়ের)
উপরে এক ড্রপ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।কবুতরের লাল মাইট, উকুন এবং সব পায়রার মধ্যে আঁশযুক্ত লেগ মাইট সহ সব মাইট প্রতিকার হিসেবে কাজ করবে।
উপরে উল্লেখিত কৃমির ঔষধ গুলো প্রয়োগ করে গোটা কৃমি বের নাও হতে পারে, তার মানে এই না যে কৃমি ঔষধ কাজ করে নাই। এই কৃমির ঔষধ গুলো কৃমি কে গলিয়ে ও বের করে। আর আল্প মাত্রার কৃমি গোটা গোটা ভাবে বের করে। তাই অনেকে মনে করেন যে যেই ঔষধ গুলু ব্যবহার করলে গোটা কৃমি বাহির হয়, সেই সব কৃমি ঔষধই বোধ হয় ভাল। আসলে তা ঠিক না। আর একটা কথা দামি কৃমির ঔষধই যে ভাল, আর সস্তা ঔষধই যে খারাপ তাও ঠিক না। অনেকে মনে করে এভিনেক্স ১৮ টাকা দামের এটা দিয়ে কি কাজ হবে, এটা অাপনাদের ভুল দারনা। তাই এ ব্যাপারে আনুগ্রহ করে একটু খেয়াল রাখবেন সকলে। আবার অনেকে মনে করেন ফিতা কৃমি সাধারন ঔষধএ নির্মূল হয়ই না, এটাও সঠিক নয়। সাধারণত ফিতা কৃমির সংক্রমণ খুবই কম আর তা সাধারন ঔষধেই নির্মূল করা সম্ভব।
সতর্কতাঃ
১) অতি গরমে কৃমির ঔষধ দিবেন না, বা অসুখ আছে এমন কবুতরকে কৃমি ঔষধ দিবেন না, ছোট বাচ্চা আছে এমন কবুতর কে কৃমির ঔষধ দিবেন না।এতে বাচ্চার হজম শক্তি কমে যাবে এমনকি মারাও যেতে পারে।
২) মানুষের কৃমির ঔষধ ব্যবহার করবেন না।
৩) কৃমির ঔষধ একটু ঠাণ্ডার সময় দিবেন, সেক্ষেত্রে সকালে বা রাতে প্রয়োগ করবেন বা যেদিন বৃষ্টি বা আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকবে সেদিন দিবেন।
৪)গরমের ২ মাস অন্তর কৃমির ঔষধ দিবেন।
৫) শিতে বা বৃস্টিতে ৪৫ দিন পরপর কৃমি নাশক ঔষধ দেওয়া।
৬) কৃমির ঔষধ দিবার পর কবুতরের খাওয়া কমে যেতে পারে বা হাল্কা একটু ঝিমুনি ভাব থাকতে পারে। নিয়মিত স্যালাইনে ও ভিটামিন দিলে ঠিক হয়ে যাবে।
৭) কৃমির ঔষধ দিবার আগে লিভার টনিক দিতে হবে,কারন শক্তিশালী কৃমি কবুতরের লিভার ও কিডনিতে আক্রান্ত করে বেশি।
৮) অধিক মাত্রা বা বেশি পরিমান ঔষধ দিবেন না।
৯) ভ্যাকসিন এর পর কৃমির ঔষধ দিবেন না।
১০) ২/১ দিনের বিতরে ডিম পাড়বে বা ডিম পুটবে এমন কবুতরকে কৃমির ঔষধ দেবেন না।।
১১) কৃমির ঔষধ দিবার পরদিন স্যালাইন দিবেন । তার পরদিন থেকে ৩-৫ দিন মাল্টিভিটামিন দিবেন।
১২) আক্রান্ত কে আলাদা ভাবে চিকিৎসা করা।
১৩) নিয়মিত খাচা বা খামার পরিস্কার করা।
(১১) কবুতরের এয়স্পারজিলসিস ও আফ্লাটকসিকসিসঃঃ-
দুটোয় ছত্রাক জনিত রোগ। বিষাক্ত খাবার থেকে ও ছত্রাক জনিত আক্রমন থেকে এই রোগ হয়। এই রোগে কবুতরের মৃত্যুর হার অনেক বেশি।তবে সেটা নির্ভর করে কি পরিমান টক্সিন শরীরে প্রবেশ করেছে তার উপর। শুধু তাই নয় এই রোগ থেকে নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়। তাই এই রোগকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই।এছাড়াও আবহাওয়ার ৮০% আদ্রতা থাকলে আই রোগ দেখা দিতে পারে। সাধারনত ফাঙ্গাস যুক্ত খাবার থেকে এই রোগের টক্সিন শরীরে প্রবেশ করে।
লক্ষণঃ
১) দুষিত খাবার খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়।
২) দুর্বল,ঝিমুনি,নিদ্রালুভাব, ক্ষুধাহ্রাস, খাদ্য খেতে অসুবিধা বা গিলতে কষ্ট,শরীর শুকিয়ে হালকা হয়ে যাবে।
৩) মাথা ঝুলে পড়ে ও স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে পারে না।
৪) পালক আলগা হয়ে যায় তাই একটু নড়াচড়া করলেই পালক খসে পড়ে।
৫) বুকের পালক উঠে যাবে।
৮) শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হবে,মুখ হা করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিবে।
৯) মাদি কবুতরের দিম পাড়ার ক্ষমতা কমে যাবে আর নর ব্রিডিং ক্ষমতা কমে যাবে।
৫) ডিম পাড়ার পর এই টক্সিন ডিমের ভিতরে ঢুকে ডিমের উর্বরতা নষ্ট করে দিবে।
৬)জল পিপাসা বেড়ে যাবে ও নাক দিয়ে পানি পড়বে।
৭)নানা রঙের পাতলা পায়খানা করতে পারে।
৮)লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৯)এই অবস্থা হবার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার ফলে সাল্মনেল্লা,ককসিডিওসিস,পুলরাম)ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে।
১০) গায়ে ফুস্কুরি বা গতা মত হতে পারে।
১১)বুকের বা পাকস্থলীর লোম উঠে গিয়ে খালি হয়ে যেতে পারে।
১২)পাখা বা লোমের গোড়ায় ঘা হতে পারে।
১৩)পাতলা পায়খানা,অভুক্ত খাবার সহ পায়খানা বা বমি হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ
১)ভাঙ্গা ভুট্টা, রেজা, বাদাম ইত্যাদি ভাল করে ধুয়ে বা জেড়ে রোদে শুকিয়ে তারপর দিতে হবে। ভাঙ্গা ভুট্টা সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে দিতে হবে।
২)দলা পাকান বা সাদা ফাঙ্গাস যুক্ত খাবার রোদে সুকিয়ে বা হালকা গরম করে দিতে হবে।
৩) ১৫ দিন পর পর খাদ্য শুকাতে হবে বা হালকা গরম করতে হবে।
৪)নাক্স ভুম ৩০ হোমিও ২-৩ ফোঁটা করে দিনে ৩ বার দিতে হবে। যদি অভুক্ত খাবার সহ পায়খানা বা বমি হয় তাহলে হোমিও চাইনা (৩০) ১-২ ফোঁটা করে দিনে ২-৩ বার দিলে ভাল উপকার হয়।
৫)যদি খাবার বা ফাঙ্গাস পাকস্থলীর ভিতরে থাকে আর টক বা দুর্গন্ধ বের হয়। তাহলে পাকস্থলি ২-৩ বার ওয়াশ করতে হবে ৩০ সিসি পানির সাথে ১ গ্রাম বরিক পাওডার দিয়ে।
৬)স্যালাইন পানি বা চালের স্যালাইন দিতে হবে যাতে পানিশূন্যতা না হয়।
৭) লোমের গোরায় ঘা বা গোটা হলে হেক্সিসল বা পভিসেপ দিয়ে নিয়মিত ওয়াশ করতে হবে।
৮) আখের গুড় ৫-১০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে ২-৩ দিন মিক্স করে দিতে পারেন।
৯) ভিটামিন AD3E ও K দিতে হবে।
১০) লিভার টনিক দিতে হবে নিয়মিত।
১১) এই অবস্থায় তরল খাবার দেওয়াই ভাল।
১২)ভিজে বা স্যাঁতসেঁতে জাইগাই খাবার রাখা উচিত নয় বা খাবার দলা বা ভিজা হলে না খাওানই ভাল।
১৩) এই সময় প্রটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়াতে হবে।
এই রোগ হবার পেছনে একজন খামারিকেই দায়ী করা হয়। কারন একজন খামারির অসচেতনতার ফলেই এই রোগ হয়। আর একটু সতর্ক হলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।