কবুতর পালন একটি লাভজনক বিনিয়োগ। বর্তমানে গ্রাম অঞ্চল ছাড়াও কবুতর শহরে পালন করা হচ্ছে। অনেকে আবার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও কবুতরের খামার গড়ে তুলছে। কেননা কবুতর পালন অনেক সহজ ও লাভজনক পেশা। তবে কবুতরের খামার যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না যায় তাহলে লোকসান হতে পারে। কবুতর পালনে রোগবালাই আক্রমণ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। আসুন জেনে নেই সে সম্পর্কে
কবুতরের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের কারণ
খাদ্যদূষণ জনিত কারণে
ক্ষতজনিত কারণে
পানিদূষণ জনিত কারণে
বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের কামড়ের কারণে
কোন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হলে
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার জন্য নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বা নিঃসৃত পদার্থের কারণে ইত্যাদি।
কবুতরের ভাইরাসজনিত (Virus) রোগের কারণঃ
কবুতর যদি দুষিত পানি পান করে তাহলে রোগাক্রান্ত হতে পারে
অসুস্থপাখির নাকের শ্লেষ্মা বা অন্যান্য বায়ুঘটিত (Airborne) জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে।
কবুতরের ফাংগাসজনিত (Fungus) রোগের কারণ
ভেঁজা কিংবা স্যাতস্যাতে জায়গায় কবুতর বাসা করলে।
অনেক সময় দূষিত বায়ুপ্রবাহের কারণে হতে পারে।
দূষিত পানির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে।
কবুতরের প্রোটোজোয়া (Protozoan) জনিত রোগঃ
প্যারেন্ট বার্ড হতে এ রোগ ছড়াতে পারে।
মুখক দিয়ে যখন প্যারেন্ট বাচ্চাকে খাদ্য খাওয়ায় ঠিক সে সময়েও এ রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে।
কবুতরের পরজীবীজনিত (Parasitic) রোগঃ
কখনও যদি কবুতর কৃমির ডিম খেয়ে ফেলে তাহলে পরজীবীজনিত রোগ সমূহ হয়ে থাকে।
এছাড়াও কবুতর বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাবজনিত রোগ হতে পারে।
কবুতরের রোগসমূহ, প্রতিকার এবং চিকিৎসাঃ
ঠাণ্ডাজনিত রোগ
ভেজা বাসস্থান বা ভেজা আবহাওয়াজনিত কারণে (অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম) ঠাণ্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে। এ সময় এক্সপেকটোরেন্ট জাতীয় সিরাপ খাওয়ালে কবুতরের ঠাণ্ডাজনিত রোগ ভাল হয়।
ডায়রিয়া
কবুতরের ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন-এন জাতীয় খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। কবুতরের ডায়রিয়া হলে অনেকে শস্যদানা একেবারে খেতে দেন না কিন্তু সেটা কখনই করা যাবেনা। খাদ্যের শস্যদানা এবং ধান, গম প্রভৃতি শস্যদানা কবুতরের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল।
গোয়িং লাইট
গোয়িং লাইট কবুতরের একটি অন্যতম রোগ । এ রোগ হলে কবুতরের চামড়ার রং কাল হয়ে যায। এসসময় কবুতর অসুস্থ হয়। এইরোগের কারণে ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারে তাই খাদ্যে ওরস্যালাইন এবং কুসুম কুসুম গরম দুধ ও রুটি কিছুক্ষণ পরপর দেওয়া যেতে পারে।
ক্যাংকার
এটি একটি প্রোটোজোয়াজনিত রোগ যা সাধারনতঃ বয়স্ক কবুতরের দেখা যায়। মুখে বা গলায় যদি হলুদাভ সাদা বস্তু দেখা যায় তবে সহজেই এই রোগের সনাক্ত করা যায়। প্রোটোজোয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এন্টিপ্রোটোজোয়াল ঔষধ ক্যাংকার এ সেবন করা যেতে পারে।
নিউমোনিয়া
কবুতরের নাকের ছিদ্রে শ্লেষ্মাজাতীয় কোন পদার্থ দেখা যায় এবং যদি কবুতর এর শ্বাসকষ্ট দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে কবুতরটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। য়াক্রান্ত কুবুতরকে এসময় শুষ্ক বিছানাসহ গরম খাবার প্রদান করতে হবে।
পিজিয়ন পক্স
পিজিয়ন পক্স আক্রান্ত থেকে মুক্ত থাকতে হলে পিজিয়ন পক্স ভ্যাক্সিন দিতে হবে। এই রোগ কবুতরের চামড়াকে আক্রান্ত করে ফেলে।
চিকিৎসাঃ
কবুতরকে সব সময় শুষ্ক জায়গায় রাখতে হবে এছাড়াও নিয়মিত Cod Liver Oil খেতে দিতে হবে।
খাদ্য শুষ্ক হতে হবে এবং যাতে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা না হয় সে রকম খাবার দিতে হবে
নিউমোনিয়া হলে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।
ডাইরিয়ার ক্ষেত্রে একটি dose Castor oil Salts বা Epsom খাওয়ানো যেতে পারে যাতে সহজেই পাখির এলিমেন্টারি ট্র্যাক সিস্টেম পরিষ্কার হয়ে যায় প্রয়োজনে ভেটেরিনারিয়ান-এর সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজে না বুঝে চিকিৎসা করা উচিৎ নয়।
প্রতিরোধ বা প্রতিকারঃ
কবুতর এর বিছানাপত্র পরিষ্কার ও শুষ্ক থাকতে হবে
পরিষ্কার ও ফ্রেশ জীবাণুমুক্ত পানি ও খাদ্য সরবরাহ করতে হবে
পিজিয়ন পক্স এর টিকা দিতে হবে
কোথাও কেটে গেলে বা থেতলে গেলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করতে হবে
কিছু কিছু রোগ হতে মুক্ত থাকতে হলে প্রতিদিন কবুতরের কার্যাবলী দেখাশোনা করা উচিত। প্রতিদিন কবুতরের খাদ্য, পানি, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য দেখা উচিত। সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া এবং ভেটেরিনারিয়ান এর সাথে প্রতি তিন মাস পরপর পরামর্শ করা উচিত। তাহলে সহজেই কবুতর রোগমুক্ত ও কঠিনতম অধ্যায় (Troublesome experience) হতে মুক্ত থাকতে পারবেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২০মার্চ২০