কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

381

পেয়াজ

সারাদেশে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কেজিতে কমেছে ৬০ টাকা। খুচরায় এক দিনেই কেজিতে গড়ে ৫০ টাকা দর কমেছে। তারপরও কেজিতে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

গতকাল উড়োজাহাজে প্রথম চালান এসেছে বলে জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানির পেঁয়াজ একসঙ্গে দেশে এসে পৌঁছানোর খবরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মজুদ পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে ছাড়ছেন। আবার দেশি নতুন পেঁয়াজ আগাম তুলে বাজারে ছাড়ছেন কৃষকরা। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে। কয়েকদিনের মধ্যে দাম আরও কমে আসবে বলে জানান সংশ্নিষ্টরা।

এদিকে, মাঠে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মনিটরিং টিম, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের অভিযান ও তদারকিতে পেঁয়াজের দামে ইতিবাচক  প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।

বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীন বলেন, নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কোনো ব্যবসায়ী অযৌক্তিক দামে বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের চালান দ্রুত আনার চেষ্টা চলছে। আজ এস আলম গ্রুপের প্রথম চালান উড়োজাহাজে দেশে আসতে পারে। এই পেঁয়াজ আসলে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি বাড়ানো হবে।

মগবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল দাম কমিয়ে বিক্রি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এখন খুচরায় প্রতিকেজি দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এই পেঁয়াজ গত রোববারও ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় কিনেছেন ক্রেতারা। এছাড়া মিসর, তুরস্ক ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা বড় পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের দিন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ছিল। দাম কিছুটা কমলেও এখনও অনেক চড়া মনে করছেন ক্রেতারা। তারা বলেন, ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজের দাম এখনও চারগুণ বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রজধানীর বাজারে খুচরায় প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজ এখন ২০০ থেকে ২১৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। গত বছরের এই সময়ে যথাক্রমে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও আমদানি করা ২৫ থেকে ৩৫ টাকা ছিল।

খুচরা বাজারে দর কিছুটা কমলেও সহনীয় পর্যায়ে না আসায় টিসিবির ট্রাকের সামনে এখন দীর্ঘ লাইন রয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো গতকাল ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন ক্রেতারা। তবে পরিমাণে কম থাকায় গতকালও খামারবাড়িতে অনেকে পেঁয়াজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান। খামারবাড়িতে গতকাল দুই ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষার পরে এক কেজি পেঁয়াজ কিনে বাসায় ফিরছেন শিউলি বেগম।

কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকাল কেজিতে গড়ে ৪০ টাকা কমে দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা, মিসর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজ ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। এই আড়তের ব্যবসায়ী মো. খলিলুর রহমান সমকালকে বলেন, মজুদ রাখা পেঁয়াজ বিক্রি শেষ করতে কম দামে বাজারে সরবরাহ বাড়াচ্ছেন মজুদদার ও আমদানিকারকরা। আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজের চালান আসছে। এ খবরেই বাজারে দাম কমেছে। পাবনা ও ফরিদপুরের মোকামেও প্রতি মণে দুই হাজার টাকা কমেছে। বাজারে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে অনেকে পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দেওয়ায় বিক্রিও কমেছে।

প্রায় একই হারে কমে মিসর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় নেমেছে। এই আড়তে দেশি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। শ্যামবাজারের পপুলার বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী রতন সাহা সমকালকে বলেন, সরকারের চাপে দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। নিয়মিত আড়তে অভিযানের ফলে তারা এখন আতঙ্কে আছেন। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা এখন চালান দিয়ে বিক্রি করছেন না। এ কারণে পাইকারিতে কেনা পেঁয়াজের চালান দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে জরিমানা দিচ্ছেন আড়তদাররা। পেঁয়াজের অতিরিক্ত দাম বাড়িয়েছিলেন আমদানিকারকরা। এখন বিক্রি কমে যাওয়ায় তারাই দাম কমিয়েছেন।

ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন বলেন, আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে। আগামী এক সপ্তাহে দর আরও অনেক কমে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি মোকাম চাকতাই-খাতুনগঞ্জে গতকাল সোমবার এক দিনেই পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৬০ টাকা। মাত্রাতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতাদের একটি অংশ এখন আর পেঁয়াজ কিনছেন না। উড়োজাহাজের মাধ্যমে পেঁয়াজ আসার খবরও বাজারে প্রভাব ফেলেছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও আসছে শত শত টন পেঁয়াজ। বন্দর জেটিতে এখন পেঁয়াজ খালাস হচ্ছে শত শত টন। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ আছে আরও দুটি জাহাজ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজবোঝাই আরও অন্তত সাতটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। চীন, তুরস্ক, মিসর ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বেলজিয়াম ও উজবেকিস্তান থেকেও নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব উদ্যোগের কারণে দাম কমছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খোদা মিল্লাত সমকালকে বলেন, `মেরিন বে জাহাজে ১৩টি কনটেইনারে আছে ৩৭৯ টন পেঁয়াজ। এগুলো এখন খালাস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে। বহির্নোঙরে পেঁয়াজবোঝাই আরও দুটি জাহাজ এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ইনভেন্ট্রি জাহাজের ১৩ কনটেইনারে আছে ৩৬৪ টন। টিআর আরামিট নামের জাহাজে থাকা তিনটি কনটেইনারে আছে ৮৪ টন। দু-একদিনের মধ্যে ৪০ কনটেইনারে প্রায় এক হাজার ১২০ টন পেঁয়াজ নিয়ে আসার কথা রয়েছে আরও একটি জাহাজে।

মিয়ানমারের পর বিকল্প দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসছে মিসর থেকে। দেশটি থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়। এর ৫৫ হাজার টনই এস আলম গ্রুপের। চীন থেকে আনা হচ্ছে প্রায় ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ। আর তুরস্ক থেকে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তান, আরব আমিরাত ও উজবেকিস্তান থেকেও গড়ে পাঁচ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে শিগগির।

ফরিদপুর অফিস থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক হাসানউজ্জামান জানান, এখানে দাম কমে খুচরায় ১৮০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় পেঁয়াজ কলিসহ বাজারে আনছেন কৃষকরা। পেঁয়াজের বড় মোকাম হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের পেঁয়াজের ব্যাপারী মামুন পোদ্দার জানান, দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের কাছ থেকে ১২০ টাকা দরে কেনা নতুন ছোট পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। পুরান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে।