কমলা চাষ করে সফল হচ্ছেন চাষিরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় কমলা চাষ করে কৃষকদের ভাগ্য বদলাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গায় কমলা চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলিয়েছেন।
কমলা চাষে সফল হয়েছেন টাঙ্গাইলের শামসুল। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলে চায়না কমলা বাগান করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন শামসুল আলম। তার কমলার বাগানে ধরে আছে বিপুল পরিমাণে কমলা। তার বাগানের কমলা আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু। তার এ কমলার বাগানটি দেখতে নিয়মিত ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। কমলার ভালো ফলন দেখে উৎসা হয়ে অনেকেই কমলা চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ অঞ্চলের মাটি কমলা চাষের উপযোগী। কৃষি বিভাগ থেকে কমলাগাছ রোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নিধিকুন্ডু পুরাতন পাড়া গ্রামের মৃত মঙ্গল আলী খাঁনের ছেলে ওমর ফারুক খাঁন জানান, তিনি একজন মৌসুলি সবজি চাষি। আজ থেকে ৬-৭ বছর আগে অনেকটাই শখের বসে একটি ছোট্ট অনাবাদি জমিতে একটি নার্সারী শুরু করে। সরকারের কৃষি বিভাগের কোনো শিক্ষা-সহযোগিতায় ছাড়াই তিলে তিলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের এই বাণিজ্যিক খাঁন নার্সারী। তার এই নার্সারীতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫জন শ্রমিকের রুটি রুজির কর্মসংস্থান। এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির ফল ও ফুলের চারা আছে। তার সৌখিন চাষের মধ্যে এখন আছে কাশ্মীরের আপেল কুল,মালতা,ড্রাগন,বারোমাসি আম ও চায়না কমলা লেবু। তার নার্সারীতে এখন প্রতিদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের সৌখিন চাষীরা চারা নিতে আসেন।
তিনি জানান, কমলা চাষে কম খরচে অধিক লাভ। একটি গাছে এবছর গড়ে ৫০-৫৫ কেজি কমলা ধরেছে। ১০০-১২০ টাকা দরে ঢাকা কাউরান বাজারসহ স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা বাগানে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে একটি গাছে প্রায় ৫ হাজার টাকার কমলা লেবু বিক্রি হচ্ছে।
মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের কমলা চাষি বাগান পরিচর্যা নিয়ে রফিকুল জানান, কমলার বাগান করতে তেমন কোন কষ্ট করতে হয় না। তবে জমির চারপাশে ভালো করে বেড়া তৈরি করতে হয়। ৫ বছর পর একটি গাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া অনাবৃষ্টির সময়ে গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আগাছা পরিস্কার রাখতে হয়। গাছে ফল আসলে ভোমরা ও মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে গেলে বাড়তি নজরদারি করতে হয়।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: হাসান আলী ও কৃষি সম্প্রসারন অফিসার অমিত বাগচী রফিকুলের চাষ করা কমলার স্বাদ ভালো উল্লেখ করে জানান, আমরা চেষ্টা করছি সাম্ভাবনময় এ চাষকে সম্প্রসারণ করতে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষক এই কমলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা তাদের সাধ্যমত সহযোগীতার চেষ্টা করছি। নিয়মিত সরেজমিন তাদের সাথে যোগাযোগ করছি।
সম্প্রতি রফিকল ইসলামের এই কমলা বাগান পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইং এর পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দীন আহাম্মেদ। তিনি বলেন, রফিকুলের বাগানে উৎপাদিত কমলা খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফলের আকারও তুলনামুলক বড়। তাছাজা প্রতিটি গাছে ধরেছে অনেক। সাম্ভাবনাময় এ কমলার চাষ বানিজ্যিকভাবে দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের কৃষক, অন্যদিকে পুষ্টি চাহিদা পুরনে বিরাট ভুমিকা রাখবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৩জানু২০২০