বর্তমানে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট অনেক ফার্ম বা প্রোজেক্ট গড়ে উঠছে, যেখানে ৫-১০ হাজার বা অারো বেশী বার্ড একত্রে প্রোজেক্ট হিসেবে লালন পালন করা হচ্ছে। ক্রিটিকাল সময়গুলোতে এই প্রোজেক্ট ফার্মগুলো সবচেয়ে বেশী ঝুকিতে থাকে। কারন কোন মহামারীতে পুরো প্রোজেক্ট নষ্ট হয়ে যাবার ভয় থাকে। তবে সচরাচর যেভাবে ফার্মগুলোতে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা হয় সেভাবে না মেনে একটু অন্য ভাবে বায়োসিকিউরিটি মানা হয় তবে যে কোন মহামারী থেকে প্রোজেক্টকে দুরে রাখা সম্ভব।
সাধারনত বায়েসিকিউরিটি বলতে আমরা বুঝি হাতে পায়ে স্প্রে মেরে খামারে প্রবেশ করা। কিন্তু সত্য বলতে কি এভাবে বায়োসিকিউরিটির “ব” টাও হয় না। বায়োসিকিউরিটি মানে আপনার ফার্মে প্রবেশকৃত জীবানুকে মেরে ফেলা নয়, আপনার ফার্মে জীবানুকে প্রবেশ করতে না দেয়াটাই বায়েসিকিউরিটি। আর ফার্মে জীবানুর প্রবেশে বাধা দিতে পারে ৩ জোন বায়োসিকিউরিটি প্রোগ্রাম। বর্তমানে বিশ্বের সকল জিপি, পিএস, কমার্সিয়াল ব্রয়লার বা লেয়ার ফার্ম ও হ্যাচারীতে ৩ জোন বাযোসিকিউরিটি মেনে চলা হয়।
কোন প্রোজেক্ট ফার্মে বায়োসিকিউরিটি প্রোগ্রামকে ৩ টা জোনে ভাগ করা হয়। এই পদ্ধতিকে ৩ জোন বায়োসিকিউরিটি বলে। বায়োসিকিউরিটির এই তিনটা জোন হলো-
১. সবুজ জোন বা সার্জারি রুম।
২. হলুদ জোন বা ট্রানজিশন জোন।
৩. লাল জোন বা আউট সাইড ওয়ার্ল্ড।
একটু বিস্তারিত বললে বুঝতে সুবিধা হবে।
সবুজ জোন বা সার্জারি রুম
প্রথমেই বলি সবুজ জোন বা সার্জারি রুম সম্পর্কে। ফার্মে যে স্থানটিতে মুরগীর শেড বিদ্যমান সেই স্থানটিকে সবুজ জোন বা সার্জারি রুম বলা হয়। সার্জারি রুমের পরিবেশের সাথে মিল থাকার কারনে এই রকম নামকরন করা হয়েছে। সার্জারি বা অপারেশন রুম যেমন পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হয় গ্রীন জোন বা মুল শেডের অংশটিও সে রকম পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে।
-এখানে শুধুমাত্র শেডের কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবে। অন্য কেউ না। দর্শনার্থী, ভ্যান চালক, ডিম ব্যবসায়ী, বন্ধু-বান্ধব কারো এই অংশে প্রবেশের সুযোগ নাই।
-সবুজ জোনে বা শেডে প্রবেশ করার জন্য পৃথক গামবুট বা স্যান্ডেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
-বাইরের ডিমের ট্রে সবুজ জোনে বা মুল শেডে প্রবেশ করানো যাবে না। শেডে ডিম সংগ্রহ করার জন্য পৃথক ট্রে থাকবে। কর্মচারীরা শেডের ট্রেতে ডিম সংগ্রহ করে বাইরে দিয়ে আসবে। সেখান থেকে অন্য ট্রেতে ডিম নিয়ে তারপর বাইরে বিক্রয়ের জন্য পাঠানে হবে। কোন ভাবেই বিভিন্ন ফার্মে ঘুরে আসা ডিমের ট্রে সবুজ জোনে প্রবেশ করানো যাবে না।
-ডিম সংগ্রহ করার জন্য আসা ভ্যান, পিক-আপ বা খাদ্য নিয়ে আসা গাড়ী কোন ভাবেই সবুজ জোনে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
-যদি ইমার্জেন্সীতে ডক্টর বা ভ্যাকসিনেটরকে সবুজ জোনে প্রবেশ করতে হয় তবে যথাযথ প্রোটোকল মেনেসবুজ জোনে প্রবেশ করাতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের জন্য গামবুট, ফেস মাক্স, সার্জিক্যাল ক্যাপের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
হলুদ_জোন_বা_ট্রানজিশন_জোন
সবুজ জোন ও লাল জোনের মাঝামাঝি যে অংশ তাকে হলুদ জোন বলে।
-এই জোনে মানুষ বা যানবাহনের সীমিত প্রবেশাধিকার থাকবে। শুধুমাত্র ডিম সংগ্রহ, খাদ্য পরিবহন, লিটার বা ওয়াস্ট ম্যাটরিয়াল বের করে দেবার মত কিছু কাজের জন্য ভ্যান, গাড়ী বা পিক-আপ এই জোনে প্রবেশ করতে পারবে।
-এই জোনে একটি পৃথক চেম্বার থাকবে যেখানে ডিমের ট্রে গুলো জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হবে।
-যদি কেউ সবুজ জোনে প্রবেশ করতে চায় তবে তার গোসল বা হাত-পা ধৌত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি এই হলুদ জোনেই করতে হবে।
–
হলুদ জোনের জন্য পৃথক জুতা বা স্যন্ডেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এই জুতা পরে সবুজ জোন বা রেড জোনে যাওয়া যাবে না।
রেড_জোন_বা_আউট_সাইড_ওয়ার্ল্ড
আপনার প্রোজেক্ট বা ফার্মের সবুজ জোন ও হলুদ জোন বাদে বাকি পুরো বিশ্ব আপনার কাছে রেড জোন। অর্থাৎ আপনাকে মনে করতে হবে আপনার ফার্মের সবুজ জোন ও হলুদ জোন বাদে বাকি পুরো বিশ্ব জীবানুর মহাসমুদ্র! এই জীবানুর মহাসমুদ্র থেকে জীবানু যেন কোন ভাবেই সবুজ জোনে প্রবেশ করতে না পারে সেটাই আপনার চ্যালেঞ্জ!
এখন নিজেরা নিজেদের ফার্ম বা প্রোজেক্টকে এই ৩ টা জোনে কল্পনা করুন। এবং প্রতিটা জোনের সীমা নির্ধারন করুন। তারপর উপরের নির্দেশ মত বায়োসিকিউরিটি মেনে চলুন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৬ফেব্রুয়ারি২০২১