‘করলা’য় সুসময়, ৩০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

111

পঞ্চগড়ের আটোয়ারি উপজেলার যেদিকে চোখ যায় দেখা মিলে নয়ানাভিরাম সবুজে ঘেরা করলার দিগন্তজোড়া বিস্তৃত ফসলের মাঠ। দেশের সর্ব উত্তরের এ জেলায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে করলা।

কৃষি অধিদফতরের পরামর্শে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। জেলায় এবার শুধু করলা থেকে কৃষকরা প্রায় ৩০ কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোরবেলায় ক্ষেত থেকে করলা সংগ্রহ করছেন কৃষক ও শ্রমিক। কেউ করলা ভারে করে রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার করলা‍গুলোকে সারিবদ্ধভাবে ক্যারেটে তুলছেন। ক্যারেট ভর্তি হয়ে গেলে কেউ দড়ি দিয়ে সেলাই করছেন। অনেকে আবার ওজন করে গাড়িতে তুলছেন। এ যেন এক উৎসবমুখ পরিবেশ।

একেকটি করলা আকারে ৩০ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার ও ২৮০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজন। একর প্রতি ১৪ থেকে ১৬ টন ফলন হওয়ায় করলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ব্যাপক করলা চাষে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি এসব ফসলের মাঠে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজ করে আয় করছেন শত শত শ্রমিক। এতে এলাকার অনেক শ্রমিকের আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই করলা।

মাঠে কাজ করার সময় আব্দুল জলিল, মোশারফসহ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে এলাকায় তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময়টা আমাদের বসে থাকতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা করলা চাষ করায় প্রতিদিন এলাকার প্রায় ৩শ শ্রমিক কাজ করে আয় করতে পারছে। আমরা চাই আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে করলা চাষ করুক কৃষকরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহিনুর জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, কৃষকদের আর আগের মতো মাঠ থেকে সবজি উত্তোলন করে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। এখন আমরা ব্যবসায়ীরাই মাঠ থেকে সবজি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছি। এবার শুধু আটোয়ারি উপজেলা থেকে দৈনিক ৪০-৫০ গাড়ি করলা দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি আমরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের তথ্য মতে, পঞ্চগড়ে এবার গ্রীস্মকালীন ২ হাজার হেক্টর ও আগাম রবি মৌসুমে ১১৫ হেক্টর জমিতে করলা আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাঠে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে করলা আছে।

পঞ্চগড় জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। করলা চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী জেলায় এবার কৃষকরা প্রায় ৩০ কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আমরা চেষ্টা করছি আগামীতে আরও বেশি করে সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং প্রত্যাশা করি পঞ্চগড় জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলায় করলা আবাদ বৃদ্ধি পাবে ও কৃষকরা লাভবান হবেন।