মরণঘাতি করোনার প্রভাবে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চিংড়ি শিল্প এখন ধংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।চলছে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার মৌসুম। নানা কারনে চরম অর্থ সংকটে চাষিরা। তাই ভরা এ মৌসুমে চিংড়ি ঘের তৈরি করেও চাষিরা ঘেরে চিংড়ি পোনা ছাড়তে পারছে না। ফলে বুধবার দুপুরে আক্ষেপের সাথে এমনটাই জানিয়েছেন চিতলমারী উপজেলার চিংড়ি চাষিরা।
তারা আরও জানান, এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা চৈত্র মাসের শুরুতে পানি সেচ দিয়ে পুরানো মাছ ধরে এবং ঘের শুকিয়ে ফেলে। এরপর নানা পরিচর্যার পর নতুন করে পানি দিয়ে বৈশাখ মাসের শুরু থেকে তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে শুরু করে। সেই হিসেবে এখন চলছে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার ভরা মৌসুম। বাংলা প্রতি বছরের শুরুতে চাষিরা তাদের পুরানো হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নতুন করে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। কিন্তু বিগত বছর গুলোতে এভাবে চলে আসলেও মহামারি করোনার প্রভাবে এ বছর চরম অর্থ সংকটে থাকার কারণে চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছে। ভরা এ মৌসুমে চিংড়ি ঘের তৈরি করেও তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চিতলমারী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৩০ টি। যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৭৫৮ টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৮৭২ টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ ও ৬ হাজার ৯০০ টি পুকুরে বিভিন্ন মাছের চাষ হয়। এখানের চাষিরা বছরে ৫৮১ মেট্রিকটন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ উৎপাদন করে থাকেন। এখানে ৭ হাজার ৫০০ জন মৎস্য চাষি ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎস্যজীবি রয়েছেন। সেই সাথে এই চিংড়ি শিল্প ও মাছ চাষের সাথে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িত রয়েছে। এ বছরের শুরুতে ঋণগ্রস্থ চাষিরা চিংড়ির উৎপাদন দেখে অনেকটা আশায় বুক বেধে ছিলেন। মাছ বিক্রি করে তাদের ধারদেনা মিটবে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে উমাজুড়ি গ্রামের লিড ফার্মার মুকন্দ মন্ডল, কুরমনি গ্রামের প্রবীণ চিংিড় চাষি বলরাম বিশ্বাস, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত ও সুরশাইল গ্রামের চিংড়ি চাষি মুন্না শেখ জানান, প্রতি বছরের শুরুতে তারা পুরানো হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নতুন করে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছ থেকে টাকা লোন নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। কিন্ত মহামারি করোনার প্রভাবে এখন মাছ রপ্তানী ও মাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। ভুগছেন চরম অর্থ সংকটে।
মৎস্য চাষে অভিজ্ঞরা জানান, অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘেরের কারণে এখানে কোন না কোন বিপর্যয় হয়ে থাকে। এ বছরও মরণঘাতি করোনার প্রভাবে সময় মত ঘেরে রেণু পোনা ছাড়তে না পারায় এ অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প ধংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডুমুরিয়া গ্রামের চিংড়ি চাষি বরেণ বাড়ৈ, সুবোধ বাড়ৈ, বিপ্লব বাড়ই, শ্রীরাম পুরের সাধন বৈরাগী, বিপুল মন্ডল, নিমাই মন্ডল, কৃষ্ণপদ বালা, অনুপ বালা, দয়াল বালা, তুহিন বিশ্বাস, পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের দেবদাস ভক্ত, উত্তম বাড়ৈ, কুরমনি গ্রামের গৌর বাইন, শুধাংসু মন্ডল ও আনন্দ বিশ্বাসসহ অনেক চাষিজানান, হঠাৎ করে মাছ বিক্রি ও মাছ রপ্তানী বন্ধ হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই সরকারি সঠিক সাহায্য না পেলে এই শিল্পের ধ্বংস ঠেকিয়ে রাখা যাবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে চিতলমারী অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোঃ আল আমিন হোসেন জানান, সরকারি ভাবে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা’র চিঠি এসেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ শুরু হবে।
চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান মুঠোফোনে জানান, করোনায় মাছের খাত বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে। সার্বিক বিবেচনা করে সকলকে এটা মোকাবেলা করতে হবে। সরকার এ খাতে মোটা অংকের টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। তিনি যে কোন সমস্যায় তার মোবাইল ফোনে চাষিদের যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৫এপ্রিল২০