করোনা পরিস্থিতিতে মাছ চাষিদের করণীয়

1098

দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মাছ চাষিরা খাবার কিনতে পারছেন না এবং মাছকে খাবার দিতে পারছেন না। খাবার না দিতে পারলে মাছ পানি ঘোলা করে ফেলবে, মাছ শুকিয়ে যাবে, অপুষ্টিতে ভুগবে এবং মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। এ অবস্থায় পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার তৈরির প্রতি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। প্রিয় মৎস্যচাষি ভাইয়েরা আপনারা এই দুর্যোগকালে সম্পূরক খাবারের উপর চাপ কমাতে নিচের বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দিতে পারেন:

সম্ভব হলে পুকুরে ১০-১৫ দিন পর পর শতক প্রতি ৫০ গ্রাম করে মোলাসেস দিন এতে করে বায়োফ্লক সৃষ্টি হবে যা মাছের প্রাকৃতিক খাবারের যোগান দিবে।

পানির রং ঠিক রাখার জন্য বিঘা প্রতি ২.৫-৫ কেজি আটা বা ময়দা এর সাথে ১২৫-২৫০ গ্রাম ইউরিয়া দিয়ে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে পারেন। পানির রং পরিবর্তনের সাথে সাথে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইটো ও জুপ্লাঙ্কটন উৎপাদন হবে। সম্পূরক খাবার দেবার পরিমাণ কমে আসবে।

পুকুরে যদি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায় এবং মোলাসেস দেয়া যায় তাহলে হেটেরোট্রপিক ব্যাকটেরিয়া ফ্লক তৈরি করবে যা মাছের উৎকৃষ্ট খাবার।

যদি ভুট্টা থাকে তাহলে গুড়ো করে দিতে পারেন এতে করে কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে মাছকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখা যাবে।
চাপের পোনাকে যেভাবে ১% এর মত খাবার দেয়া হয় এখন চাষের পুকুরে সেভাবে খাবার দিলে বেশি দিন ধরে খাবার সরবরাহ করা যাবে। করোনা ভাইরাসের কারণে এই অবস্থা কতদিন চলবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারে না।
রুই, মৃগেল, কালবাউস, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ইত্যাদি মাছ ক্ষুদিপানা ভাল খায়। এ সময় ক্ষুদিপানা বা এ্যাজোলা প্রাকৃতিক উৎস্য হতে সংগ্রহ করে দিতে পারেন।

মোলাসেস, ঈস্ট ও ব্রান ২৪ ঘন্টা ফার্মেন্টেশন করে সেই লিকুইড পুকুরে দিলে যথেষ্ট পরিমাণ জুপ্লাঙ্কটন তৈরি হবে যা শিং, মাগুর, পাবদা, টেংরা ও চিংড়ীর জন্য আদর্শ খাবার।
এই দু:সময়ে চিড়ার মিলের ব্রান ও ব্যবহার করতে পারেন। মিষ্টির দোকানের গাদ ও ব্যবহার করতে পারেন কার্বন সোর্স হিসেবে যদিও পাওয়া কঠিন হতে পারে।

মুরগীর নাড়িভূরি পেলে চপ করে পাঙ্গাসের পুকুরে দিতে পারেন।
শতক প্রতি ১ কেজি করে খড় ব্যবহার করতে পারেন মাছের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদন নিয়ে চিন্তা থাকবে না।
DORB (De Oiled Rice Bran) এ প্রায় ১৮% প্রোটিন থাকে যা এখন যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন।
গ্রাসকার্প ও সরপুটির পুকুরে বাসী সবজি পুকুরের এক পাশে দিয়ে রাখতে পারেন। এখন সহজপ্রাপ্য আধাপঁচা সবজিকে কম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন।
রেনুর খাবার হিসেবে সরিষার খৈল ৪৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দুইদিন অন্তর অন্তর চার-পাঁচ কেজি করে দিতে পারেন।

আনুসঙ্গিক কার্যাদিঃ
হাত দিয়ে যত কম নাড়াচাড়া করে মাছ বাজারজাত করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টাকা লেনদেনের পরপরই সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মাছ বাজারজাতকরণের সরকারি অনুমোদনকে আমরা যেন কোনভাবেই অপব্যবহার না করি সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
লকডাউন উঠে গেলে একসাথে সব মাছ চাষিরা একসাথে মাছ তুললে মাছের দাম পড়ে যেতে পারে সে দিকটাও নজর দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেরা নিজেরা সমন্বয়ের চেষ্টা করুন।
যতটুকু সম্ভব গরীব মানুষদের সাহায্য করুন। নিজেকে নিরাপদ রাখুন, দেশকে নিরাপদ রাখুন।

লেখাঃ কাজী আবেদ লতীফ,
সহকারী পরিচালক,
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, দিনাজপুর।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮এপ্রিল২০